ফের মুখোমুখি বৈঠকে বসছে ভারত-চিন, কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকে লাদাখ প্রসঙ্গে কী কী বিষয় উঠেতে পারে
ফের মুখোমুখি বৈঠকে বসছে ভারত-চিন, কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকে লাদাখ প্রসঙ্গে কী কী বিষয় উঠেতে পারে
লাদাখ ইস্যুতে ফের মুখোমুখি বৈঠকে ভারত চিন। এবার কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক হবে দুই দেশের মধ্যে। এই নিয়ে লাদাখ ইস্যুতে ১২ তম বৈঠক হতে চলেছে ভারত ও চিনের মধ্যে। বৈঠকে একাধিক ইস্যুতে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নিয়ন্ত্রণ রেখার মোল্ডো সীমান্তে মুখোমুখি হচ্ছেন দুই দেশের কমান্ডাররা। এর আগে ৯ এপ্রিল একবার সেনা পর্যায়ের বৈঠক হয়েছিল দুই দেশের মধ্যে। কিন্তু তা তেমন ফলপ্রসূ হয়নি।
ভারত-চিন বৈঠক
লাদাখ সীমান্ত নিয়ে টানাটানি চলছে দুই দেশের মধ্যে। নিয়ন্ত্রণ রেখা মানতে নারাজ চিন। এদিকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়বে না ভারতও। এই নিয়ে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে প্রবল টানাপোড়েন চলছে। করোনা আবহের মধ্যেই দুই দেশ সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে দফায় দফায়। আলোচনার পথে শান্তিপূর্ণ সমাধান চাইছে ভারত। কিন্তু দফায় দফায় আলোচনা তেও মিলছে না কোনও সমাধান সূত্র। আজ অর্থাৎ শনিবার ফের লাদাখ ইস্যুতে সেনা পর্যায়ের বৈঠক। কমান্ডার লেভেলের বৈঠকে বসতে চলেছে ভারত ও চিন। সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে মন্ডো সীমান্তে শুরু হয়েছে আলোচনা। সেখানে দুই দেশের সেনা কমান্ডাররা রয়েছে। এর আগে ৯ এপ্রিল একবার সেনা পর্যায়ে বৈঠক করেছিল ভারত ও চিন। কিন্তু তাতে কোনও সমাধান সূত্র বেরোয়নি।
১১ দফা বৈঠক সারা
এর আগে লাদাখ ইস্যুতে ভারত এবং চিনের মধ্যে ১১ দফা বৈঠক হয়েছে। ১১ দফা বৈঠকই হয়েছে সেনা পর্যায়ে। দুই দেশের সেনা আধিকারিকরা মুখোমুখি বসে আলোচনা করেছে। মূল আলোচ্য বিষয় ছিল প্যাংগং সো হ্রদের দুই পাশ থেকেই সেনা সরিয়ে নেওয়া। অর্থাৎ চিনও সেনা সরিয়ে নেবে আবার ভারতও সেনা সরিয়ে নেবে। িকন্তু বেজিং তাতে নিমরাজি। সুর নরম করলেও সেনা সরাতে রাজি হয়নি তারা। এই নিেয় একাধিকবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা হয়েছে দুই দেশের সেনা প্রতিনিধির মধ্যে। কিছুতেই সমাধান সূত্র বেরোচ্ছে না।
কোন কোন বিষয়ে আলোচনা
১২ তম বৈঠকে স্বাভাবিক ভাবেই প্যাংগং সো হ্রদের দুইপাশ থেকে সেনা সরানোর প্রসঙ্গ যে উঠবেই তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তবে এবারের আলোচনায় সেনা সরানো নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতীয় সেনার পক্ষ থেকে বেজিংকে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সেনা সরানোর প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। অর্থাৎ চিন এবং ভারত কোনও দেশেরই সেনা নিয়ন্ত্রণ রেখার একেবারে কাছাকাছি থাকবে না। এমনই প্রস্তাব ভারত বেজিংকে দিতে চলেছে বলে সূত্রের খবর। হটস্প্রিং এবং গোগরা এলাকা থেকে সম্পূর্ণ ভাবে দুই দেশের সেনা প্রত্যাহার এবং সেনা শিবির সরানোর প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। গালওয়ান সংঘর্ষের মতো ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেদিকেই বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। আলোচনায় সেই বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। ডেমচক এবং ডেসপ্যাং প্লেন এলাকায় সেনা সরানোর পরে নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছিল। সেটা নিয়েও আলোচনা করা হবে বলে সূত্রের খবর। তবে ১৫ এবং ১৭ এ পয়েন্টে সেনা সরানো অভিযান শেষ করেছে দুই দেশই। পেট্রোলিং নিয়েও নতুন গাইডলাইন তৈরি করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সেই নিয়েও দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হবে।
জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক
গত ২২ জুলাই বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি জানিয়েছেন, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বৈঠক করেন চিনের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে। সেখানেই বৈঠকের দিন স্থির হয়েছিল। সেই বৈঠকেই জয়শঙ্কর প্রস্তাব দিয়েছিলেন নতুন বৈঠকের। তাতে রাজি হয় বেজিং। এবং যত দ্রুত সম্ভব আলোচনা শুরু করার প্রস্তাব দিয়েছিলেনে তিনি। বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র জানিয়েছেন সেই বৈঠকেই দুই দেশের মধ্যে যতটা সম্ভব সমাধানের লক্ষ্যেই আলোচনা করা হবে। দুই দেশই চেষ্টা করবে কীভাবে সর্বসম্মত ভাবে সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা যায়। সূত্রের খবর দুই দেশই নাকি এই লাদাখ ইস্যুতে দীর্ঘ সংকট নিয়ে চিন্তিত। কারণ এতে দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে বিশ্বরাজনীতিতে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করছে। যেটা চিন এবং ভারত দুই দেশের পক্ষেই ভাল হবে না।
কোণঠাসা চিন
করোনা সংক্রমণের পর থেকে এক প্রকার গোটা বিশ্বেই কোণঠাসা হয়ে গিয়েছে চিন। বিশেষ করে আমেরিকা চিনের বিরুদ্ধে জীবাণু যুদ্ধের অভিযোগ করেছে। উহানের পরীক্ষাগার থেকে জীবানু ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে প্রকাশ্য অভিযোগ করেছে চিন। এই নিয়ে চিনে তদন্তকারীর দলও পাঠিয়েছে হু।করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ গোটা বিশ্বে কীভাবে ছড়াল তা জানতেই উহানের গবেষণাগারে তদন্তকারীদের পাঠিয়েছিল বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থা। প্রথম দিকে হু চিনের সমর্থনে কথা বলায় আমেরিকা আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দিয়েছিল।তাতে হু-র একাধিক কাজ থমকে গিয়েছিল গোটা বিশ্বে। এরইমধ্যে আবার লাদাখে চিনের আস্ফালন এবং গালওয়ান সংঘর্ষের ঘটনা আরও বেজিংকে আন্তর্জাতিক মহলে কোণঠাসা করে ফেলেছে। কাজেই লাদাখ সমস্যার সমাধান এখন ভারতের থেকেও বেশি জরুরি চিনের জন্য।