লাদাখে এখন ঝড়ের আগের নিস্তব্ধতা! গালওয়ান-ডেপসংয়ের এখন কী পরিস্থিতি?
লাদাখ সীমান্তের গালওয়ান এলাকায় সেই রক্তক্ষয়ী ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ হতে চলল। সেই ঘটনার পর থেকে ভারত-চিন সৈন্যদের মধ্যে আর কোনও সংঘর্ষ না হলেও ক্রমেই সেখানে উত্তেজনা বাড়ছে। শুধু গালওয়ান নয়, লাদাখের এলএসি বরাবর প্যাংগং সো, ডিবিও সহ আরও বেশ কয়েকটি স্থানে সৈন্য বাড়িয়েছে ভারত চিন উভয় পক্ষই।
বেজিংকে পাল্টা চাপে ফেলতে রণকৌশল তৈরি ভারতের
চণ্ডিগড়ের এয়ারবেস থেকে ভারতীয় বায়ুসেনার সি-১৭ গ্লোবমাস্টারে করে সেনার সরঞ্জাম লাদাখে উড়ে যাওয়া এখন স্বাভাবিক দৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে এই আবহেই দুই দিনের সফরে লেহতে গিয়েছিলেন ভারতীয় সেনাপ্রধান মুকুন্দ নারভানে। আর এই অবস্থাতে এবার বেজিংকে পাল্টা চাপে ফেলতে রণকৌশল তৈরি করছে ভারতীয় সেনা।
ফায়ার ড্রিল করেছে পিএলএ-র তিব্বত কমান্ডের সেনা
শান্তি আলোচনা কি শুধু চোখে ধুলো দেওয়ার জন্যেই করছে চিন। প্রশ্নটা ওঠে যখন জানা যায় যে ভারতের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চলতে থাকলেও ফের তিব্বতে লাইভ ফায়ার ড্রিল করেছে পিএলএ-র তিব্বত কমান্ডের সেনা। এতেই ফের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এলএসি বরাবর বিস্তীর্ণ এলাকায়। এরই মধ্যে সামনে এল এই নজরদারি চালানো ড্রোনের খবর।
ডেপসাংয়ের কাছে চিনা সেনার বাড়বাড়ন্ত
এছাড়া ডিবিও ও ডেপসাংয়ের কাছে চিনা সেনার বাড়বাড়ন্ত লক্ষ্য করা গিয়েছে। এরই মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বৃহস্পতিবার ফের একবার আকসাই চিনের দাবি তোলেন লাদাখের বিজেপি সাংসদ জামিয়াং সেরিং নামগয়াল। এদিকে চিনও হঠাৎ করেই গালওয়ান উপত্যকার উপর নিজেদের অধিকার দাবি করে বসে।
বেজিংয়ের তরফে এই তৎপরতা কেন?
চিনা সেনারা প্যাংগং লেকের উত্তর তীরে ফিঙ্গার -৪ থেকে ৮ পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তার করতে উচু স্থান দখল করে তা নিয়ন্ত্রণ করছে। গালওয়ান উপত্যকা অঞ্চলের অবস্থান ঐতিহাসিকভাবে পরিষ্কার। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে চিনের তরফে যে পদক্ষপে করা হচ্ছে, তা রীতিমতো বাড়াবাড়ি। এই পরিস্থিতি ফের সংঘর্ষ হওয়া সময়ের অপেক্ষা বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে কেন বেজিংয়ের তরফে এই তৎপরতা?
সমরসজ্জা শুরু করে দিয়েছে ভারত
এই পরিস্থিতিতে লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চিন সেনা সমারোহ বাড়ার সঙ্গেই ভারতও কিন্তু সমরসজ্জা শুরু করে দিয়েছে। সেনা বাহিনীর তিনটি ডিভিশনকে মোতায়েন করে, ভারতও শক্তি বাড়িয়েছে। সবচেয়ে শক্তিশালী টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাংকও ক'দিন হল নিয়ে আসা হয়েছে পূর্ব লাদাখে। বর্তমানে লাদাখে ৪৫ হাজার সেনা রয়েছে বলে খবর।
ভারতের স্ট্র্যাটেজি
তিব্বত থেকে জিনজিয়াং প্রদেশে যাওয়ার মসৃণ পথ আকসাই। যদি, এই পথটি কোনও ভাবে ভারতে আটকে দেয়, তবে চিনকে কারাকোরাম হয়ে বিকল্প পথে পৌঁছতে হবে। এখন ভারত যদি আকসাই চিনের দিকে এগোয়, জিনজিয়াং প্রদেশের উপর থেকে চিনের দখল হারিয়ে ফেলার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, এই জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের উপর চিনা সরকারের অত্যাচারের বিষয়ে সারা বিশ্ব অবগত।
ক্রমেই বাড়ছে দ্বন্দ্ব
অঞ্চলভিত্তিক অধিকারকে কেন্দ্র করে একাধিক জটিল এবং বিতর্কিত বিষয়ের জেরে ভারত এবং চিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সমস্যা তৈরি হয়েছে। চার হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর এলাকায় তৈরি হওয়া সমস্যা সেই দ্বন্দ্ব আরও বাড়িয়ে তুলেছে।