গালওয়ানের পুনরাবৃত্তি সময়ের অপেক্ষা, লাদাখ সীমান্তে টহলদারী নিয়ে নয়া প্রোটোকল ভারত-চিনের
লাদাখে ভারত-চিন সীমান্তের দৌর্ঘ্য ১৫৯৭ কিলোমিটার। এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলই এখন উত্তেজনার আগুনে ফুটছে। তবে সেই উত্তাপ যাতে সংঘর্ষে পরিণত না হয়, তাই জন্য শতর্ক দুই পক্ষই। গালওয়ানে ঘটে যাওয়া ১৫ জুনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাইছে না ভারত-চিন কোনও পক্ষই। আর এই কারণেই রবিবার দুই পক্ষের পঞ্চম দফার বৈঠকে সীমান্তে টলদারী নিয়ে বিশেষ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে ভাবা হয়।
টহলদারীর নিয়মাবলী নির্ধারণ
এর আগে ভারত ও চিনের কূটনৈতিক পর্যায়ের বৈঠকেও টহলদারীর নিয়মাবলীর বিষয়টি উঠে এসেছিল। সাউথ ব্লকের এক সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, লাদাখের ফিঙ্গার এলাকায় চিন যে ভাবে পোস্ট বসিয়ে সোলার প্যানেল বসিয়ে অপ্টিক ফাইবার বসিয়েছে, রাস্তা বানিয়েছে। তাতে খুব শীঘঅরই সেখানে আরও একবার সংঘাত বাধা শুধু সময়ের অপেক্ষা। কারণ ভারতও চিনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাল রেখে নির্মাণ কাজ বাড়িয়েছে সীমান্তের এই পারে।
প্যাংগংয়ে শান্তি ফেরাতে মরিয়া ভারত
এদিকে পূর্ব লাদাখে, বিশেষত প্যাংগং এলাকা ও সংলগ্ন ফিঙ্গার এলাকায় শান্তি ফেরানোর উদ্দেশ্যে রবিবার সেনা স্তরে বৈঠকে বসে ভারত ও চিন। কোর কমান্ডার স্তরের এই বৈঠকে মূলত এলএসি বরাবর ফের সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া চালু করার একটি রূপরেখা তৈরি করার বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রসঙ্গত, এই প্যাংগং এলাকা ঘিরেই এখন ভারত-চিন সংঘাত চরমে উঠেছে। আগের কথা মতো চিন এখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করছে না। সেই কারণেই ফের নতুন করে বৈঠকে বসতে হয়েছে দুই দেশকে।
গালওয়ানের পুনরাবৃত্তি ছাইছে না কোনও দেশই
এর আগে গত ১৫ই জুন সন্ধ্যায় দুই দেশের সেনা জওয়ানদের মধ্যে সংঘর্ষের পর দুই দেশই জানিয়েছিল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তারা বদ্ধপরিকর। এর লক্ষ্যে তারা একাধিক পদক্ষেপের কথা ভাবছে। দুই দেশের মধ্যে একাধিক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর বারংবার ডিসএনগেজমেন্টের কথা বলা হলেও চিনের পক্ষ থেকে বিশেষ গতিবিধি নজরে পড়েনি। সেই আবহেই রবিবার ফের বৈঠকে বসে দুই দেশ। কারণ এভাবে চলতে থাকলে উত্তেজনার পারদ চড়তেই থাকবে, শান্তি আর ফিরবে না।
ভারত-চিন উত্তেজনা কমার কোনও নাম নেই
এদিনে চিন হটস্প্রিং থেকে সেনা সরিয়েছে, তবে প্যাংগংয়ে এখনও পিএএ অবস্থান করছে। আর বেজিংয়ের এই একগুঁয়ে মনোভাবের জন্যই লাদাখে ভারত-চিন উত্তেজনা কমার কোনও নাম নেই। প্যাংগং সোতে চিনা সেনারা ফিঙ্গার ৫ এ ফিরে এসেছিল, তবে তারা এখনও ফিঙ্গার ৪-এর রিজলাইন দখল করে রয়েছে। চিনা সেনারা ফিঙ্গার ৪ থেকে আঙুলের ৮-এর মধ্যে ৮-কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকাজুড়ে তাদের তৈরি কাঠামোগুলিকেই এলএসি বলে দাবি করে যাচ্ছে এখনও।
ফিঙ্গার এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি কী?
যেই প্যাংগং সো নিয়ে এত বিতর্ক, সেখানে চিনা সেনারা ফিঙ্গার ৫ এ ফিরে এসেছিল, তবে তারা এখনও ফিঙ্গার ৪-এর রিজলাইন দখল করে রয়েছে। চিনা সেনারা ফিঙ্গার ৪ থেকে আঙুলের ৮-এর মধ্যে ৮-কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকাজুড়ে তাদের তৈরি কাঠামোগুলিকেই এলএসি বলে দাবি করে যাচ্ছে এখনও। যদিও বর্তমানে চিনের দাবি লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর গালওয়ান উপত্যকা,প্যাংগং লেক থেকেও সেনা প্রত্যাহার করেছে লালফৌজ।
ফিঙ্গার এলাকা কার? ভারত না চিন?
টহলদারী সীমান্ত নিয়ে বরাবরই ভারত ও চিনের মধ্যে চাপা উত্তেজনা ছিল। ভারত বিশ্বাস করে 'ফিঙ্গার ১' থেকে 'ফিঙ্গার ৮' পর্যন্ত টহল দেওয়ার অধিকার রয়েছে তাদের এবং চিন মনে করে যে 'ফিঙ্গার ৮' থেকে 'ফিঙ্গার ৪' পর্যন্ত টহল দেওয়ার অধিকার রয়েছে তাদেরই। 'ফিঙ্গার ৪'-এ এই জন্যেই উল্লেখযোগ্য হারে সেনার সংখ্যা বাড়িয়েছিল চিন যাতে ভারতীয় সেনারা আর 'ফিঙ্গার ৮' এর দিক দিয়ে টহল দেওয়ার সুযোগ না পায়।
উত্তেজনা বাড়ছে উত্তরাখণ্ডেও
এদিকে শুধু লাদাখ নয়, উত্তরাখণ্ডের লিপুলেখ বরাবর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরো সীমান্তের কাছে সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছে চিন। যদিও উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় চিন সীমান্ত বরাবর সতর্ক প্রহরা দিচ্ছে ভারতীয় সেনা। এছাড়া উত্তরাখণ্ডের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির প্রধানকে স্যাটেলাইট ফোন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে লিপুলেখে এভাবে চিনের আস্ফালন বেশ ইঙ্গিবহ বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারত-নেপালের মধ্যে এবার চিনা আস্ফালন
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই ভারতীয় ভূখণ্ডের অন্তর্গত কালাপানি, লিপুলেখ পাস ও লিম্পিয়াধুরা এলাকাকে নিজেদের সীমানার অন্তর্ভুক্ত করে নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেছিল নেপাল। এরপর সেই মানচিত্রে সিলমোহর দেয় নেপালের পার্লামেন্ট। ভারতের তরফে এই মানচিত্রকে খারিজ করে বলা হয়েছে, এটি একটি 'ইউনিল্যাটরাল অ্যাক্ট৷' যার কোনও ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই৷
পাকিস্তানকে কড়া হুঁশিয়ারি প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধানের! রাফাল-এস ৪০০ মিসাইল নিয়ে প্রতিবেশীকে বার্তা