রক্তস্নাত স্বাধীনতা দিবসের দোরগোড়ায় ভারত, স্মৃতির পাতায় বাংলার হারিয়ে যাওয়া বীর বিপ্লবীরা
৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের দোরগোড়ায় ভারত, স্মৃতির পাতায় বাংলার হারিয়ে যাওয়া বীর বিপ্লবীরা
৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ভারত। এদিকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে চোখ রাখলেই যে সমস্ত বীর বিপ্লবীদের কথা শুরুতেই মাথায় আসে তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বাংলা-পাঞ্জাবের তরুণ তুর্কিরা। মনে পড়ে যায় মাস্টারদা সূর্যসেন থেকে শুরু ভগত সিংয়ের সেই জ্বালাময়ী ব্যক্তিত্বের কথা। যদিও আজ তারা সবাই হারিয়ে গিয়েছে স্মৃতির অতলে।
বাংলার হারিয়ে যাওয়া বীর বিপ্লবীরা
এদিকে ইতিহাস বলছে বিংশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে এই বাংলাই। এই সময় বিভিন্ন গুপ্ত সমিতির প্রতিষ্ঠা, অস্ত্র প্রশিক্ষণ ও বৈপ্লবিক কার্যকলাপ শুরু হয় বাংলার কোনায় কোনায়। স্বদেশী আন্দোলনের দীপ্ত আগুন ছড়িয়ে পড়ে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেও। স্বাধীনতার স্বপ্ন বুকে নিয়ে মৃত্যুপথে পাড়ি দেয় ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকিদের মতো বীর বিপ্লবীরা।
অনুশীলন সমিতি হাত ধরেই আগুনে বিপ্লবে ঝাঁপ সতীশ-প্রমথনাথের
এদিকে বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের প্রসারের ক্ষেত্রে অনুশীলন সমিতি সর্বপ্রথম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। বিপ্লবী সতীশ বসু ও প্রমথনাথ এই দুই ব্যক্তির সহায়তায় কলকাতার মদন মিত্র লেনে অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। এমনকী সশস্ত্র বিপ্লবের পটভূমিকায় সতীশ বসু ও প্রমথনাথের ভূমিকা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। তাদের সহায়তাতেই ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, রাজশাহি, চট্টগ্রাম, রংপুর প্রভৃতি জেলায় এই সমিতির শাখা গড়ে ওঠে।
বিস্মৃতির গহ্বরে ননীবালা দেবী
অন্যদিকে পরাধীন ভারতের মাটিতে স্বাধীনতা এনে দেবার জন্য বহু বীর বিপ্লবীর আত্মবলিদান অবিস্মরণীয়। কিন্তু তাঁদের মধ্যে অনেকেই আজ বিস্মৃতির গহ্বরে হারিয়ে গিয়েছেন। ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে যাওয়া এমন একজন বীর নারী যোদ্ধার নাম ননীবালা দেবী। যিনি আবার বাংলার প্রথম মহিলা রাজবন্দীও বটে। যুগান্তর দলের বিভিন্ন বিপ্লবী কাজকর্মের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি।
স্মৃতির পাতায় ক্ষুদিরামের অন্যতম প্রধান সহযোদ্ধা প্রফুল্ল চাকী
অন্যদিকে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর বিপ্লবীদের কথা স্মরণ করলে ক্ষুদিরামের সঙ্গেই একযোগে উচ্চারণ করা হয় আর এক তরুণ তুর্কি প্রফুল্ল চাকীর নাম। ১৯০৬ সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী ও স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। যোগ দেন যুগান্তর দলেও। ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ এপ্রিল ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকী ব্রিটিশ শাসক কিংসফোর্ডকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সে যাত্রায় বেঁচে যান কিংসফোর্ড। আর তখনই ব্রিটিশ পুলিশ ধরতে এলে আত্মহত্যা করেন তিনি। যদিও তাকে পুলিশ খুন করেছিল বলেও মনে করেন অনেকে।
প্রত্যাঘাতের আগুনেই স্বাধীনতার ডাক মাস্টারদার
অন্যদিকে বাংলার হারিয়ে যাওয়া স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কথা বলতে গেলে মাস্টারদা সূর্যসেনের কথা অবশ্যই বলতে হয়। তার নেতৃত্বেই ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ১৮ এপ্রিল, চট্টগ্রামের সরকারি অস্ত্রাগারের দখল নেয় বিপ্লবীরা। পরদিন জালালাবাদ পাহাড়ে ব্রিটিশ পুলিশের সঙ্গে তুমুল গুলির লড়াইয়ে বিপ্লবী দলের ১২ জনের মৃত্যু হয়। কিন্তু সূর্যসেনের এই কারাঘাত নাড়িয়ে দেয় গোটা ব্রিটিশ রাজকেই। পরে সূর্য সেন ধরা পড়েন এবং বিচারে তার ফাঁসি হয়।
স্মৃতির পাতায় প্রীতিলতা
অন্যদিকে সূর্যসেনের কথা বলতে গেলে বাংলার আরও এক অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের কথা অবশ্যই বলতে হয়। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগারের দখল থেকে শুরু করে সূর্য ব্রিগেডের অন্যতম প্রধান কমান্ডার ছিলেন প্রীতিলতাই। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নেতৃত্বেই শান্তি. চক্রবর্তী কালিকিংকর দে প্রমুখ সশস্ত্র বিপ্লবীদের দল ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের পাহাড়তলির ইউরোপীয় ক্লাবেও আক্রমণ করেছিল।
রবীন্দ্রনাথের 'অগ্নিকন্যা'
প্রীতিলতার মতোই সূর্য ব্রিগেডের অন্যতম প্রধান বীর যোদ্ধা ছিলেন বাংলা আর এক অগ্নিকন্যা কল্পনা দত্ত। যদিও তিনিও আজ স্মৃতির অতলেই। তিনিই ছিলেন মাস্টারদার প্রিয় পাত্রী, রবীন্দ্রনাথের 'অগ্নিকন্যা' এবং চট্টগ্রামে সকলের 'ভুলুদা' নামে পরিচিত। চট্টগ্রাম দখলে তার অবদানও ছিল অসামান্য।
হারিয়ে যাওয়া বীর কন্যা আভা দে
অন্যদিকে প্রীতিলতার মতোই দুর্দমনীয় সাহসিকতার কাঁধে ভর করে দেশের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাংলার আর এক অগ্নিকন্যা আভা দে। ব্রিটিশ বিরোধী লড়াইয়ে যোগ দিতে আভা দে তাঁর বন্ধু কল্যাণী দাসের সঙ্গে 'ছাত্রীসংঘ'তে যোগদান করেন। ১৯৩০ সালে নারী সত্যাগ্রহ সমিতির সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর তিনি বেআইনি শোভাযাত্রা ও সভায় যোগদান করার অপরাধে গ্রেপ্তার হন এবং প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দীর জীবন কে বরণ করে নেন।
{quiz_679}