করোনা নিয়ন্ত্রণে ভারত এগোলেও বাংলা সহ চার রাজ্য উদ্বিগ্নে রাখছে সরকারকে
ভারতে একদিকে যখন দৈনিক করোনা ভাইরাসের সংখ্যা কমছে, ঠিক অন্যদিকে কেরল, পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের মতো রাজ্যগুলি জাতীয় প্রবণতা বজায় রেখেছে। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সমীক্ষা অনুযায়ী, এই চারটি রাজ্যে দ্রুত কেস সংখ্যা বৃদ্ধি, পজিটিভ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে এবং টেস্টের মানও খুব খারাপ।

করোনা ভাইরাস প্রকোপের তীব্রতা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এবং যে সমস্ত প্রদেশে করোনার প্রকোপ রয়েছে তা সনাক্ত করতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে ২০টি জনবসতিপূর্ণ প্রদেশে তিনটি বিষয় কাজ করছে, পজিটিভ সংখ্যা বৃদ্ধি, দৈনিক আক্রান্তের সর্বোচ্চ বৃদ্ধি ও প্রতি দশ লক্ষ জনসংখ্যায় টেস্টের পরিমাণ কম। যা বিশ্বজুড়ে এই রাজ্যগুলিকে হটস্পটে পরিণত করেছে। এরই মধ্যে দেশে উৎসবের মরশুম চলে এসেছে এবং তারপরই শীতকালের আগমন ঘটবে। দেশের এই রাজ্যগুলি উৎসবের মরশুমের পর যে জটিল অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাবে তা বিপদ ডেকে আনবে গোটা দেশের ক্ষেত্রে। তাই এখন থেকেই সচেতন হয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
একটি অঞ্চলের ক্ষেত্রে সংক্রমণের বৃদ্ধির হার সাধারণত দ্বিগুণ হার হিসাবে পরিচিত, যার দ্বারা পরিমাপ করা হয় ওই অঞ্চলে মোট সংক্রমণ দ্বিগুণ হতে কত দিন সময় লাগবে (সংখ্যাটি যত বেশি, তত ভাল)। প্রত্যেক রাজ্যে বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে যে ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে দ্বিগুণ হার উন্নতি করেছে, এই পরিসংখ্যানই প্রতিচ্ছবি, যেখান দিয়ে বোঝা যাবে যে গত মাসে জাতীয় কেসগুলি কীভাবে বক্ররেখায় পরিণত হয়েছিল। কেরল বাদে জাতীয় দ্বিগুণ হারের গড়ে ছ’টি রাজ্যের ফল সবচেয়ে খারাপ। ৩৭ দিনের মাথায় ছত্তিশগড় দ্বিগুণ হারের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, এর আগে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ (৫০ দিন), রাজস্থান ও কর্নাটক (৫৩ দিন), পশ্চিমবঙ্গ (৫৭ দিন) ও ওড়িশা (৬৯ দিন)। এদের থেকে একটু হলেও ভালো জায়গায় রয়েছে দিল্লি, ৭৫ দিনের মাথায় এখানে করোনা কেস দ্বিগুণ হতে দেখা যাচ্ছে, তবে এটি সর্বনিম্ন উন্নতি সহ রাজ্যগুলির মধ্যে বৈশিষ্ট্যযুক্ত (১১ দিন)। একমাত্র কেরলই জাতীয় রাজধানীর তুলনায় এখানে কম উন্নতি হয়েছে। সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে দিল্লিতে ৫৯ দিনের মাথায় কেস দ্বিগুণ হতে দেখা গিয়েছে।
২০টি রাজ্যের মধ্যে ৬টি রাজ্যে গড় পজিটিভ হার গত মাসে টেস্টের কারণে বেড়েছে। কোনও অঞ্চলে পজিটিভ হার যত বেশি সেই অঞ্চলে ভাইরাসের সংক্রমণ তত বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু–এর সুপারিশ অনুসারে যে অঞ্চলে একটি বিস্তৃত করোনা টেস্টের কার্যক্রম রয়েছে তার পজিটিভ হার কমপক্ষে দু’সপ্তাহের জন্য ৫ শতাংশের নীচে হওয়া উচিত, কারণ সেখান থেকে এটা বোঝা যাবে যে সেখানে প্রকোপটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ফের কেরলের ফল খুব খারাপ, গত সপ্তাহে এ রাজ্যে ১৫.৯ শতাংশ টেস্ট করা হয়েছিল, সবকটি পজিটিভ এসেছে। এ রাজ্যের সাতদিনের গড় ইতিবাচক হার ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৮.৪ শতাংশে উঠে গিয়েছে, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। এরপরই মহারাষ্ট্রের নাম রয়েছে, যেখানে গত তিনমাসে ক্রমাগত সর্বোচ্চ পজিটিভ কেস দেখা যাচ্ছে, তবে তা একটু হলেও নিম্নগামী হয়েছে ৭.৩ শতাংশ (২১.১ থেকে ১৩.৮ শতাংশ)। পশ্চিমাঞ্চলের এই রাজ্য যেখানে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ, সেখানে গত সপ্তাহে টেস্টের পর পজিটিভ সংখ্যা বেড়েছে। গত সপ্তাহে রাজস্থানে তৃতীয় সর্বোচ্চ পজিটিভ হার ছিল ১১.৩ শতাংশ। ১ সেপ্টেম্বরের সপ্তাহ শেষে এ রাজ্যে পজিটভ হার ছিল ৬.১ শতাংশ। সেপ্টেম্বরের চেয়ে অক্টোবরে ২ শতাংশ পজিটিভ কেস বেড়েছে মধ্যপ্রদেশে। পশ্চিমবঙ্গে ১.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে পজিটিভ কেস (৭ শতাংশ থেকে ৮.৬ শতাংশ)। শেষ কয়েক সপ্তাহে দেশে গড় টেস্ট হয়েছে ৬.১ শতাংশ, যেখানে পজিটিভ কেস ফিরে এসেছে। তবে গত ৪৫ দিনে পজিটিভ হারের উন্নতি হয়েছে তিনটি রাজ্যে কর্নাটক, ছত্তিশগড় ও অন্ধ্রপ্রদেশে। এই তিন রাজ্যের এখনও জাতীয় গড়ের তুলনায় গত সপ্তাহে গড় পজিটিভি হার রয়েছে যথাক্রমে: ৯.৫%, ৮.৯% এবং ৬.৪%।
টেস্টের দিক থেকে দেশের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে মধ্যপ্রদেশ, এখানে প্রতি দশ লক্ষে ৩০,৫০৭ জনের টেস্ট হচ্ছে। এরপরই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ (৩৯,৮৪৪), রাজস্থান (৪৪,৪৭২), ছত্তিশগড় (৫১০৪৯) এবং উত্তরপ্রদেশ (৫৫,৬০২)। যেখানে দেশে প্রতি দশ লক্ষে গড়ে ৭১,৮৯২ জনের টেস্ট হয়েছে।