কুমোরটুলির মুখে হাসি, পুজোর আগে বিষাদ নেমেছে দিল্লির পটুয়া পাড়ায়
অর্থনৈতিকভাবে অসহায় হয়ে পড়েছেন দিল্লির প্রতিমা শিল্পীরা
ঐশ্বরিক স্থপতি হিসাবে পরিচিত হিন্দু দেবতা বিশ্বকর্মা। যিনি সব শিল্পী, স্থপতিকার, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও দেশের সব শ্রমিকদের ইশ্বর। এই দেবতা হিন্দু দেবদেবীদের জন্য সবচেয়ে ভালো অস্ত্র তৈরি করেছিলেন বলেই শোনা যায়। অথচ দিল্লিতে এই দেবতার নামে তৈরি স্টুডিওর স্যাঁতস্যাতে ঘরে করোনা ভাইরাস মহামারির জেরে সব কাজ স্থগিত হয়ে রয়েছে।
দিল্লি সরকারের নিষেধাজ্ঞা
জুঁই ফুলের হাল্কা গন্ধের বাতাস দিল্লিবাসীকে জানান দিচ্ছে পাঁচদিনের হিন্দুদের উৎসব দুর্গাপুজো শুরু হতে চলেছে আগামী সপ্তাহ থেকে। কিন্তু রাজধানীর পটুয়া শিল্পীদের কাছে এই বছরটা তিক্ততা ছাড়া আর কিছুই নিয়ে আসেনি। দুর্গা পুজোর মণ্ডপ ও রামলীলার অনুষ্ঠানে বড় সমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে দিল্লি সরকার এ বছর কোনও ধরনের বাড়াবাড়ি যাতে না হয় তাই আয়োজকদের জন্য কড়া নির্দেশিকা জারি করেছে। এর অর্থ মণ্ডপ ছোট হতে হবে, মণ্ডপে আসা সকলকে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে হবে এবম দুর্গা মূর্তি উচ্চতা নয় ছোট করতে হবে অথবা কোনও মূর্তি রাখা চলবে না।
প্রতমার উচ্চতা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে
দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কের ‘বিশ্বকর্মা শিল্পায়ন'-এর কর্ণধার ও তৃতীয় প্রজন্মের পটুয়া শিল্পী গোবিন্দ নাথ বলেন, ‘অধিকাংশ পুজো মণ্ডপেই বাজেট কম হওয়ার কারণে ৪-৫ ফিটের প্রতিমা তৈরি করতে চাইছে।' তিনি জানিয়েছেন যে করোনা ভাইরাসের কারণে বিশাল বড় ক্ষতি হয়েছে তাঁর ও তাঁরই পেশার অন্যান্যদের। প্রসঙ্গত, এই মহামারি মূর্তি নির্মাতাদের জীবনে ভারী বিপর্যয় ডেকে এনেছে, মহামারির অর্থনৈতিক প্রভাব পড়েছে তাঁদের ওপর, বিশেষ করে গোবিন্দ নাথের মতো মরশুমি শিল্পীদের ক্ষেত্রে, যাদের একক উপার্জনের রাস্তা নির্ভরশীল শুধুমাত্র বছরে এইসব হিন্দু দেব-দেবীর পুজোর উৎসবের ওপর।
৪০–৫০টি পুজোর পরিবর্তে ১০টি পুজোর বায়না
গোবিন্দ নাথ বলেন, ‘প্রত্যেক বছর ৪০-৫০টি মূর্তি গড়ার বায়না পাই আমরা। কিছু কিছু মূর্তি ৩০ ফিটের মত লম্বা তৈরি করতাম।' তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু এই বছর চাহিদা খুবই কম।' গোবিন্দ নাথ জানিয়েছেন তিনি অনেক কষ্টে ন'টি মূর্তি বিক্রি করতে পেরেছেন এবং সপ্তাহের শেষে আরও একটি মূর্তি ডেলিভার হওয়ার কথা রয়েছে। নাথ বলেন, ‘অনেক পুজো কমিটিকে নয় অনুমতি দেওয়া হয়নি আর নয়ত কড়া নির্দেশিকার কারণে পুজো কমিটিগুলি এ বছর পুজো করা থেকে সংযত থেকেছেন। গোবিন্দ নাথ এও জানিয়েছেন যে এটা ভালো দিক যে সরকার কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ করতে উদ্যোগী হয়েছে কিন্তু শিল্পীদের জীবিকা নিয়েও একটু ভাবা উচিত ছিল।
পশ্চিমবঙ্গেও হচ্ছে এ বছর পুজো
গোবিন্দ নাথের কথায়, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কিন্তু সেখানে পুজো হচ্ছে। আসলে ওই রাজ্যে নির্বাচনের বছর আসছে এবং সরকার সকলকে খুশি রাখতে চাইছে। কিন্তু দিল্লিতে বাঙালি জনসংখ্যা সেই পরিমাণে না থাকায় এবং কোনও নির্বাচন না থাকায় দিল্লি সরকার ভ্রুক্ষেপ করছে না।' ৪৭ বছরের নাথের স্টুডিওতে কর্মীদের অনুপস্থিতির কারণে একাই তাঁকে কাজ সামলাতে হচ্ছে। সাধারণত তাঁর স্টুডিওতে বাংলা সহ অন্যান্য রাজ্য থেকে ১০-১৫ জন অভিবাসী শিল্পী এসে কাজ করেন এই উৎসব মরশুমে। এঁরা নিজেদের কাজের বার্ষিক কোটা সম্পূর্ণ করার জন্য দিওয়ালি (কালীপুজো) পর্যন্ত থেকে যান। কিন্তু এই বছর করোনা ভাইরাস লকডাউন ও চাহিদা কম থাকার দরুণ অধিকাংশ শিল্পী বাংলাতেই রয়ে গিয়েছেন। হুগলি জেলার ৩১ বছরের স্বপন পুজোর সময় নাথের মতোই এক শিল্পীর সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক কাজের জন্য দিল্লি আসতেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিয়োগকর্তাকে কাজের ব্যাপারে ফোন করেছিলাম কিন্তু তিনি জানিয়েছেন যে চাহিদা কম থাকার জন্য তিনি আমায় টাকা দিতে পারবেন না।' দুই সন্তানের বাবা জানিয়েছেন যে তিনি সংসার চালাচ্ছেন নিজের জমানো অর্থ দিয়ে এবং অন্য চাকরির সন্ধানে রয়েছেন সংসার চালানোর জন্য।
ডিপিসিসির নিষেধাজ্ঞাতেও ক্ষুব্ধ প্রতিমা শিল্পীরা
ফিরে আসা যাক দিল্লিতে, কোভিড-১৯ নিষেধাজ্ঞা নিয়েই অসন্তুষ্ট নন প্রতিমা শিল্পীরা। গত বছরের অগাস্টে দিল্লি দূষণ নিয়ন্ত্রণ কমিটি (ডিপিসিসি) পাঁচ ফুটের প্রতিমা তৈরির ওপর নিয়ম জারি করেছিল এবং যমুনা নদীর পরিবর্তে এই মূর্তিগুলি নির্দিষ্ট খাল বা অস্থায়ী জলাশয়ে নিমজ্জিত করার বিষয়টি কার্যকর করেছিল। ডিপিসিসর এক আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রত্যেকের মণ্ডপের পেছনে মূর্তি পুঁতে দেওয়ার জায়গা তো নেই, তাই ছোট মূর্তি হলে সুবিধাও হবে এবং তা অল্প খরচে হয়ে যাবে। ঠিকঠাক ১৫-২০ ফিট উচ্চতার প্রতিমার মূল্য যেখানে ২০-২৫ হাজার টাকা, সেখানে ছোট প্রতিমার দাম ৬ থেকে ৮ হাজারের মধ্যে হয়ে যায়। এ বছর গোবিন্দ নাথ নয়ডা ও গুরুগ্রামের কিছু মণ্ডপে প্রতিমা দিচ্ছেন কারণ এই জায়গার বিধি-নিষেধগুলি তুলনামূলকভাবে স্বাচ্ছন্দ্যযুক্ত। তাই তিনি এ বছর তাঁর ক্ষতি কিছুটা কম করার জন্য এই পুজোগুলিতে মনোনিবেশ করছেন।
৩৯৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথের সংষ্কার, বিহার ভোটের আগে রাজ্যবাসীর মন পেতেই তড়িঘড়ি কাজ শেষ?