করোনা সংক্রমণের ফলে ডায়াবেটিস আতঙ্ক মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে চেন্নাইয়ে
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তি সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন শারীরিক জটিলতার সম্মুখীন হয়, তা অনেক আগেই বিভিন্ন গবেষণায় প্রকাশ করা হয়েছে। ফুসফুস, চোখ ও কান ও শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত সমস্যার কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে । এবার নতুন এক ডায়াবেটিস সংক্রান্ত সমস্যার কথা উঠে এল। কোভিড–১৯ সংক্রমণ যা চেন্নাই শহরের বহু মানুষকে প্রভাবিত করেছে, সেখানে সুস্থ মানুষের মধ্যে এই ডায়াবেটিসের লক্ষণ চিন্তা বাড়াচ্ছে সরকারের। অনেক ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে অবস্থা খুবই জটিল দেখা দিয়েছে, রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যাওয়া বা অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ব্যাধি সহ বহু জটিলতা দেখা দিয়েছে রোগীদের মধ্যে।

চেন্নাইয়ে করোনায় সুস্থ রোগীদের শরীরে ডায়াবেটিস
পরবর্তী কোভিড-১৯ ক্লিনিকগুলিতে গত দু'সপ্তাহ ধরে ২৫০ জনের স্ক্রিনিং করা হয়েছে, যার মধ্যে কমপক্ষে চারজন সুস্থ ব্যক্তির শরীরে ডায়াবেটিস পাওয়া গিয়েছে। কমপক্ষে আরও ১০ জন, যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁদের অবস্থা আরও খারাপ বলে জানিয়েছেন কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের ডাঃ উমামাহেশ্বরী। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা পরবর্তী কোভিড পর্যায়ের প্রধান জটিলতা হিসাবে ডায়াবেটিসের খবর রিপোর্ট করছেন। রোগ সংক্রমণ বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে এই ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়ার মতো গুরুতর বিষয় লক্ষ্য করা গিয়েছে। কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যেও আগে থেকে শরীরে থাকা ডায়াবেটিস তাঁদের ঝুঁকি অনেকটাই বৃদ্ধি করেছে।

করোনা ভাইরাস–ডায়বেটিক সম্পর্ক
অনেক ডায়বোটিক রোগী নিজেদের সুস্থ রাখতে উচ্চমাত্রার ইনসুলিনের সঙ্গে কেটোঅ্যাসিডোসিস ও হাইপারসমোলারিটি, গ্লুকোস এই ওষুধগুলি মিশিয়ে গ্রহণ করেন। যা তাঁদের শরীরে ক্ষতি করে। ডাঃ উমামাহেশ্বরী বলেন, ‘কোভিড-১৯ রোগীদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে অধিকাংশই ডায়াবেটিসের কারণে মৃত্যু হয়। তবে আমরা এখন ভাবছি বিপাকীয় রোগ ও নোভেল করোনা ভাইরাসের মধ্যে ভবিষ্যতে দৃঢ় সম্পর্ক হতে পারে।' বিজ্ঞানীদের মতে, নতুন এই ডায়বেটিসে এসিই-২ প্রোটিন যা সার্স-কোভ-২-কে বেধে রেখে, তা মানব কোষে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়, এটি এরপর কিডনি, লিভার ও অগ্ন্যাশয়ে গিয়ে প্রভাব ফেলে। যার ফলে বহু অঙ্গ বিকল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রয়েছে যাঁদের, তাঁদের মধ্যে কোভিড-১৯মারাত্মক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা প্রবল।

স্টেরোয়েডের ফলে গ্লুকোজের পরিবর্তন দেখা দেয়
করোনা সংক্রমণের সক্রিয় স্তরে উচ্চমাত্রার স্টেরোয়েড শরীরে প্রবেশ করে যার ফলে গ্লুকোজের স্তরের পরিবর্তন দেখা দেয়। বহু রোগীর ক্ষেত্রেই স্টেরোয়েড করোনার উপসর্গ দূর করতে ভালো কাজ করে। বলা হয়, কর্টিসলের প্রভাবে শরীরে একটি হরমোনের উৎপন্ন হয়, যা ইনসুলিনের প্রতিরোধকে বৃদ্ধি করে এবং তাই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ে। উমামাহেশ্বরী বলেন, ‘এটি ইনসুলিনের কাজকে বন্ধ করে দেয়। রক্তে গ্লুকোজের স্তর এতটাই বেড়ে যায় যে রোগীর ক্ষেত্রে ওষুধ হিসাবে প্রথম পছন্দই থাকে ইনসুলিন। কিছু সপ্তাহ পর আমরা ইনসুলিন বন্ধ করে ট্যাবলেট দিতে শুরু করি। যদিও আমরা এখনও জানি না এই রোগীদের পরিস্থিতি ফের ফিরে ফিরে আসবে কিনা।'

নতুন ডায়বেটিসের ধরন নিয়ে গবেষণা চলছে
এই করোনা ভাইরাস গ্লুকোজের মেটাবলিজম বা বেটা সেলসের ওপর সরাসরি আক্রমণ করে ইনসুলিনের ঘাটতি শরীরে ঘটায় কিনা তা নিয়ে এখন গবেষণা চলছে। ডায়বেটোলজিস্ট ডাঃ ভি মোহন বলেন, ‘ভারতে আমরা এখনও এ ধরনের (টাইপ ১) ডায়বেটিস দেখতে পাইনি।' তবে তিনি বেশ কিছু এমন ডায়বেটিক রোগীকে দেখেছেন যাদের কোভিড আক্রান্তের পরই ডায়বেটিস দেখা গিয়েছে।