ফনি-আম্ফান-অশনি! কীভাবে ঘূর্ণিঝড়ের এই নামকরণ, এর ইতিহাসই বা কী
ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ সরকারিভাবেই করা হয়। মার্চের শেষের দিকেও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড় অশনির নাম উঠে এসেছিল। কিন্তু আবহাওয়া দফতরের তরফে তখন কিছুই হয়নি। কেননা ঘূর্ণিঝড়ই তৈরি হয়নি সেই সময়। তবে এবার ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে। এদিন সকালেই আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছে ঘূর্ণিঝড় অশনি। অনেকের কাছেই নামকরণের বিষয়টি পরিষ্কার নয়, কীভাবে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়।


নামকরণ নিয়ে রাষ্ট্রসংঘ
রাষ্ট্রসংঘের অধীনস্ত ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন দেওয়ার তথ্য অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট ভৌগলিক অবস্থানে কিংবা বিশ্বজুড়ে এক সময়ে একাধিক ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে। এই সিস্টেমগুলি এক সপ্তাহ কিংবা তার বেশি সময় ধরে চলতে পারে। সেই কারণে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় নিয়ে ঝুঁকি-বিভ্রান্তি দূর করতে, ব্যবস্থাপনা এবং সচেতনতা বাড়াতে নাম দেওয়া হয়।
নামগুলি সাধারণভাবে সহজেই উচ্চারণ করা যায় এবং এই সম্পর্কিত তথ্য সমুদ্রের মধ্যে থাকা জাহাজ কিংবা কোনও দেশের উপকূলরক্ষী বাহিনীরও কাজ করতে সুবিধা হয়।

নামকরণের ইতিহাস
শুধু ভারত মহাসাগর কিংবা সংলগ্ন এলাকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়ের নামকরণ নতুন কিছু নয়। ১৯৫৩ সাল থেকে আটলান্টিক গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়ের নামকরণ চলে আসছে আমেরিকার জাতীয় হারিকেন সেন্টারের তৈরি করা .তালিকা থেকে।
প্রথমের দিকে ঝড়ের নামকরণ করা হত খানিক অগোছালো ভাবে। ১৯০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে ঝড়ের জন্য মেয়েলি নাম ব্যবহার শুরু করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা আরও সংগঠিত এবং দক্ষ একটি সিস্টেমের জন্য তালিকা তৈরি করেন এবং তা থেকেই ঝড়ের নাম দেওয়া হয়।
বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগর এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু হয়েছিল ২০০৪ সালে।

উত্তর ভারত মহাসাগর এলাকার দায়িত্বে ভারতের আবহাওয়া অফিস
বিশ্বব্যাপী ছটি রিজিওনাল স্পেশালাইজড মেটেরিওলোজিক্যাল সেন্টার এবং পাঁচটি রিজিওনাল ট্রপিক্যাল সাইক্লোন সেন্টার রয়েছে। যেগুলি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ এবং এব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে থাকে। ইন্ডিয়া মেটেরিওলোজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট হল বিশ্বব্যাপী ছটি রিজিওনাল স্পেশালাইজড মেটেরিওলোজিক্যাল সেন্টারের একটি। উত্তর ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় ঝড়ের শিরোনাম দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছে। এলাকার ১২ টি দেশকে এব্যাপারে সাহায্য করে থাকে ইন্ডিয়া মেটেরিওলোজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট।
একটি নাম একবার ব্যবহার করা হলে, তা আর ব্যবহার করা যাবে না। যে নাম দেওয়া হবে, তা সর্বোচ্চ আটটি অক্ষর থাকতে পারে। এই নামের মাধ্যমে কোনও সদস্য দেশের আপত্তিকর কিংবা কোনও জনগোষ্ঠীর অনুভূতিতে আঘাত করা যাবে না।
২০২০ সালে এলাকার ১৩ টি ১৩ টি করে নাম-সহ ১৬৯ টি ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় অশনি
২০১৯-এ ফনি, ২০২০-তে আম্ফানের কথা অনেকেরই মনে রয়েছে। এবার তৈরি হয়েছে অশনি। নামটি দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। এর অর্থ হল ক্রোধ। এদিনই তা বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছে এবং দেশের পূর্ব উপকূলে আঘাত হানতে শক্তি বাড়াচ্ছে। অশনির পরে যে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হবে, তার নাম সিত্রাং। যা দিয়েছে থাইল্যান্ড।
ভারত থেকে যে নামগুলি ইতিমধ্যেই ব্যবহার করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে গতি, মেঘ, আকাশ। তেমনই বাংলাদেশের দেওয়া যেসব নাম ব্যবহার করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে হেলেন, ফনি। তেমনই ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের দেওয়া ব্যবহার হয়ে যাওয়া নামগুলি হল লায়লা, নার্গিস এবং বুলবুল।
এগোচ্ছে ঘূর্ণিঝড় অশনি! কী করবেন আর কী করবেন না, গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য একনজরে