বিশ্ববিদ্যালয়ে মৌলিক গবেষণায় জালিয়াতি বন্ধের উপায় কী?
বিশ্ববিদ্যালয়ে মৌলিক গবেষণায় জালিয়াতি বন্ধের উপায় কী?
বাংলাদেশে গবেষণায় জালিয়াতির শাস্তি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষককে পদাবনতি দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পদোন্নতির জন্য মৌলিক গবেষণা থাকা বাধ্যতামূলক। এই বাধ্যবাধকতার কারণে বেশিরভাগ শিক্ষক গবেষণা করেন।
কিন্তু মৌলিক গবেষণা নির্ধারণ এবং জালিয়াতি থামানোর উপায় কি?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলছিলেন "একটা গবেষণামূলক লেখা - যেটা হবে মৌলিক এবং সমাজে তার একটা ভূমিকা থাকবে - এমন কাজ না হওয়ার পিছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে"।
১. ভালো জার্নালের অভাব: অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলছিলেন "সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর জন্য কোন ভাল জার্নাল নেই দেশে। সেটা থাকলে কঠিন রিভিউ কমিটি থাকতো এবং সেখানে সেই গবেষণাপত্রটি ছাপার উপযোগী কিনা সেটা নির্ধারণ করা যেত"।
২. প্রাতিষ্ঠানিক সাপোর্ট এবং রিসোর্স সংকট: একটা পূর্ণাঙ্গ গবেষণার জন্য যে ধরণের প্রাতিষ্ঠানিক সাপোর্ট এবং রিসোর্স দরকার হয় সেটা বাংলাদেশর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নেই। সেই সাপোর্টটা দিলে একজন শিক্ষক বা ছাত্র যে গবেষণা করতে চান তার পক্ষে সুবিধা হয়।
সামাজ বিজ্ঞান বিষয়ে মৌলিক গবেষণার জন্য কয়েকটি ধাপ রয়েছে।
গবেষণা কাজের মধ্যে কোথাও থেকে কপি করা হয়েছে কীনা সেটা প্রথমে সুপারভাইজার, এরপর ডিফেন্স কমিটি, তারপর বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিল দেখে।
এরপর সেখান থেকে অনুমোদন পেলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে পাঠানো হয়।
'প্রথম অভিযোগ আসতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে'
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান করে থাকে।
ইউজিসির গবেষণা বিভাগের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছেন, যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সব ধাপ থেকে জালিয়াতির কোন অভিযোগ না করা হয় তাহলে ইউজিসি কোন পদক্ষেপ নিতে পারে না।
ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন অধ্যাপক বলছেন, গবেষণা কাজে জালিয়াতির ঘটনা নতুন নয়। তবে এটা বন্ধ করার জন্য শিক্ষক এবং ছাত্র যেই হোক না কেন - তাদের শাস্তির ব্যবস্থা থাকা খুব জরুরি।
তবে গবেষণা কাজে চৌর্যবৃত্তির মত অপরাধ থামানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ খুব সহজেই নেয়া যায় বলে মন্তব্য করছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক এবং সমাজ ও অপরাধ গবেষক তৌহিদুল হক।
মি. হক বলছিলেন, কয়েকটা উপায়ে সমাজ বিজ্ঞানে গবেষণার ক্ষেত্রে চৌর্যবৃত্তি থামানোর সম্ভব।
তিনি বলছিলেন "এখন প্রযুক্তির যুগ, সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথমেই আপনি ধরতে পারবেন একটা গবেষণা পত্রে কতখানি নকল করা হয়েছে। এক্ষেত্রে একটা সফটওয়্যার দিয়ে কাজ টা করা যায়। "
"একটা সময় নকল ধরাটা জটিল ছিল, কিন্তু এখন সহজ। এই সফটওয়্যারই বলে দেবে কতগুলো শব্দ, বাক্য বা কত শতাংশ কপি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোন কমিটির দরকার নেই। এক সফটওয়্যার দিয়েই নকল ধরা সম্ভব।"
গবেষণার ক্ষেত্রে অর্থায়নের বিষয়টি বরাবরই একটা বড় ইস্যু হয়।
একটা তথ্যভিত্তিক সত্যিকারের গবেষণা করতে হলে সময় এবং অর্থ দুটিই দরকার।
এখানে বেশিরভাগ গবেষণা করতে হয় নিজের খরচে।
মি. হক বলছিলেন "একটা ৫ থেকে ৭ হাজার শব্দের আর্টিকেল লিখতে মিনিমাম ৭০ হাজার টাকা দরকার পড়ে। সেক্ষেত্রে যে ব্যক্তি গবেষণা করছেন তিনি একটা চাপ বোধ করেন। তখন তিনি জ্ঞানভিত্তিক চর্চার চেয়ে প্রমোশনের কথা বেশি চিন্তা করেন। সুতরাং ঐ গবেষককে আর্থিক নিশ্চয়তা দিতে হবে"।
'গবেষণার সংস্কৃতিই নেই'
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পদোন্নতির জন্য মৌলিক গবেষণা থাকা বাধ্যতামূলক।
এই পদোন্নতি পাওয়ার জন্য শিক্ষকরা গবেষণা করে থাকেন। কিন্তু সেই অর্থে বাংলাদেশে গবেষণার সংস্কৃতিই নেই।
বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকার একটা গবেষণার জন্য যে পরিমাণ সুযোগ সুবিধা দেয় সেটা বাংলাদেশে নেই।
সেই কারণেও অনেকে সহজ পন্থায় গবেষণা কাজটা সারতে চান বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন।
বিবিসি বাংলায় আরো পড়ুন:
ইউরোপে শত শত বছর ধরে চালু যে সংখ্যা পদ্ধতি আজ একদম বিস্মৃত
করোনাভাইরাসের আরেকটি টিকার উদ্ভাবন, যা নতুন ধরণ ঠেকাতেও কার্যকর
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়লো ১৪ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, আগামীকাল এইচএসসির রেজাল্ট
কুয়েতের আদালতে এমপি পাপুলের চার বছরের সাজা