অপারেশন কমল-এ ঘায়েল কমলনাথ! কোন পথে যবনিকা পতন মধ্যপ্রদেশের রাজনৈতিক নাটকে?
মধ্যপ্রদেশে অপারেশন কমল যে জারি থাকবে তার ইঙ্গিত আগে থেকেই পাওয়া গিয়েছিল। এর আগে মধ্যপ্রদেশের নিখোঁজ বিধায়কদের মধ্যে থেকে ৮ জনকে 'উদ্ধার' করতে সক্ষম হয়েছিল কংগ্রেস। এর ফলে মধ্যপ্রদেশের কমনাথ সরকারের পতনের সম্ভাবনা কিছুটা হলেও দূর হয়েছিল। তবে শেষ চাল বাকি ছিল তখনও। আর সেই চাল যে মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস সরকারের কফিনে শেষ পেরেক হবে তা হয়ত কমলনাথও ভাবতে পারেননি।
মধ্যপ্রদেশের রাজনীতিতে ঝড়!
বেশ কয়েকদিন ধরেই উথাল পাথাল দেখছে মধ্যপ্রদেশের রাজনীতি। দলের সঙ্গে মনমালিন্যের জেরে বেশ কয়েকজন কংগ্রেস বিধায়ক 'নিখোঁজ' হয়ে যাওয়ার কথা চাউর হতেই বিজেপির বিরুদ্ধে ঘোড়া কেনাবেচার অভিযোগ এনে সরব হয়েছিল কংগ্রেস। তবে কংগ্রেস সরকারের প্রতি যে ক্ষুব্ধ স্বয়ং জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, তা কি কংগ্রেস বুঝতে পারেনি?
বিধায়ক 'নিখোঁজ' হওয়ায় বিজেপিকে আক্রমণ কংগ্রেসের
জানা যায়, কমলাথ সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে রয়েছেন ১৪ জন কংগ্রেস বিধায়ক। গত মঙ্গলবার থেকে এই নিয়ে চাপান উতর শুরু হয়েছে। এদের মধ্যে চার কংগ্রেস বিধায়ক আত্মগোপন করেন। যার পর থেকেই শুরু বিজেপি-কংগ্রেস তরজা। হর্স ট্রেডিংয়ের অভিযোগ এনে বিজেপিকে তোপ দাগে কংগ্রেস। তবে সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিজেপি দাবি করে যে কংগ্রেসের অন্তরদ্বন্দ্বের কারণেই এই বিধায়করা চলে গিয়েছেন।
বিধায়ক কেন-বেচার অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে!
এর আগে দিগ্বিজয় সিং অভিযোগ করেন যে বেঙ্গালুরুতে একটি রিসর্টে রাখা হয়েছে বিদ্রোহী কংগ্রেস বিধায়কদের। তাঁদের ২৫ থেকে ৩৫ কোটি টাকা দিয়ে কেনার চেষ্টা করছে বিজেপি। মঙ্গলবার রাতেই গুরুগ্রামের একটি রিসর্টে থেকে ৬ কংগ্রেস বিধায়ককে কোনও মতে উদ্ধার করা হয় বলেও অভিযোগ জানান তিনি।
সিএএ-এনআরসি-কে সমর্থন জানিয়ে পদত্যাগ কংগ্রেস বিধায়কের
এরইমধ্যে মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেসের এক বিধায়ক পদত্যাগ করেন। গত বৃহস্পতিবার রাতেই কংগ্রেস বিধায়ক হরদীপ সিং দাং স্পিকারের কাছে নিজের পদত্যাগ পত্র পাঠান। তাতে তিনি লিখেছেন সরকার গঠনের পর থেকেই দলে ভীষণভাবে উপেক্ষিত হয়ে রয়েছে। কমলনাথ সরকারের প্রতি নিজের অসন্তোষ স্পষ্ট জানিয়েছেন পদত্যাগ পত্রে। এবং সিএএ এবং এনআরসির সমর্থনও জানিয়েছেন তিনি।
এরপরই সিন্ধিয়া ঘনিষ্ঠ বিধায়করা চলে যান ব্যাঙ্গালোর
এরপরই জানা যায় বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের সিংহভাগকে ফিরিয়ে আনতে পারলেও দলছুট হয়েছেন আরও বেশি সংখ্যক কংগ্রেস বিধায়ক। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ঘনিষ্ঠ ১৭ জন বিধায়ক বিজেপি শাসিত কর্নাটকে গিয়ে রীতিমতো বৈঠক করে বলে জানা গিয়েছিল। তখন থেকেই বিষয়টি ওপেন সিক্রেটের মতো রাজনৈতিক আঙিনায় ঘুরতে থাকে বিষয়টি। সেই সময় শাসক কংগ্রেস তাদের শেষ দেখতে শুরু করে দেয়। এত কিছুর পরেও মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া।
আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন জ্যোতিরাদিত্য
২০ জন মন্ত্রীর পদত্যাগ ও ১৭ জন বিধায়কের বেঙ্গালুরু যাওয়ার কথা প্রকাশ্যে আসতেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন জ্যোতিরাদিত্য। পরে আজ সকালে জানা যায় যে সিন্ধিয়া সোমবারই কংগ্রেস ছাড়তে চেয়ে ইস্তফা পত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর কাছে। আর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার বিষয়টা ক্রমে পরিষ্কার হয়ে উঠতেই দলে সিন্ধিয়ার অনুগতরাও একই পথ ধরতে কংগ্রেস ছাড়তে উদ্যত হন।
কংগ্রেসের কফিনে শেষ পেরেকগুলি পুঁতে দেন জ্যোতিরাদিত্য
এরপরই মঙ্গলবার নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহর সঙ্গে প্রায় ঘণ্টাখানেক বৈঠকেই কংগ্রেসের কফিনে শেষ পেরেকগুলি পুঁতে দেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। এরপর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে একই গাড়িতেই বেরোতে দেখা যায় অমিত শাহ ও সিন্ধিয়াকে। আর এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সিন্ধিয়া ঘনিষ্ঠ ১৯ জন কংগ্রেস বিধআয়ক পদত্যাগ করেন কংগ্রেস থেকে। আর এর জেরে কমলনাথ খাতায় কলমে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে ফেলল বিধানসভায়।
মধ্যপ্রদেশ বিধানসভার পরিসংখ্যান
১৯ জন কংগ্রেস বিধায়কের এই ভাবে পদত্যাগের জেরে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। এরপর হয়ত কর্নাটক মডেলেই এই বিধায়কদের সিন্ধিয়ার সঙ্গে বিজেপিতে অন্তর্ভুক্তি হবে। মধ্যপ্রদেশে ভোট গণিত বলছে, ২৩১ টি আসনের ম্যাজিক ফিগার ১১৫ টি আসন। বর্তমানে মধ্যপ্রদেশে বিধায়কের সংখ্যা ২২৮ জন। এই পরিমাণ আসন যার দখলে থাকবে, তিনিই মধ্যপ্রদেশের তখতে বসবেন। সেই মতো কংগ্রেস ১১৪ জন বিধায়ক নিয়ে মধ্যপ্রদেশের শাসকের আসনে ছিল। সঙ্গে এসপি, বিএসপি ও নির্দল কয়েকজন বিধায়ক ছিল কংগ্রেসের সঙ্গে। বিজেপির রয়েছে ১০৭ জন বিধায়ক।
কর্নাটক মডেলেই মধ্যপ্রদেশ দখল বিজেপির?
বিক্ষুব্ধ হয়ে কংগ্রেসের যেই বিধায়করা ব্যাঙ্গালোর যাত্রা করেন তাদের তালিকায় ছিলেন, কংগ্রেসের মন্ত্রী তুলসি সিলাওয়াতের ছেলে বঙ্কিম সিলাওয়াত। সিন্ধিয়া ঘনিষ্ঠ পুরুষোত্তম পরাশর, রাজ্যবর্ধন সিং, প্রদ্যুমন সিং তোমর, গিরিরাজ, রক্ষা সিনোরিয়া, যশবন্ত যাদব, সুরেশ ধাকড়, জয়পাল সিং, বিজেন্দ্র যাদবরা। এরপর হয়ত কর্নাটক মডেলেই এই বিধায়কদের সিন্ধিয়ার সঙ্গে বিজেপিতে অন্তর্ভুক্তি হবে।