লম্বা হচ্ছে নিপার হাত, যে ভাবে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে এই মারণ ভাইরাসের হাত থেকে
নিপা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের কয়েকটি পদক্ষেপ।
'নিপা' ভাইরাস বা এনআইভি আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যাটা প্রতিদিন বাড়ছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রক নিশ্চিত করেছে, পেরাম্ব্রা তালুক হাসপাতালে নার্সের মৃত্যু হয়েছে নিপা আক্রান্ত রোগীর থেকে সংক্রামণ ছড়িয়ে। কাজেই এই নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। হোয়াটসঅ্যাপ-ফেসবুকে নিপা নিয়ে নানা তথ্য উঠে আসছে। যার মধ্যে কোনটা কল্পকাহিনি আর কোনটা সত্য, আলাদা করা কঠিন। নিপা ভাইরাস কীভাবে ছড়ায় এবং কীভাবে একে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে? কীভাবে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচা যায়? তার কিছু হদিশ রইল এখানে।
কেরলে কীভাবে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ল তা নিয়ে নানান কাহিনি চলছে বাজারে। তবে যতদূর জানা গিয়েছে এই ভাইরাসের সংক্রমণে কেরলে যে মৃত্যু মিছিল চলছে তার শুরু হয়েছিল তিন ব্যাক্তিকে দিয়ে। সম্ভবত আম খেতে গিয়েই তাঁরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই আমগুলিতে ফ্রুট ব্যাট বা ফলখেকো বাদুরদের মাধ্যমে ছড়িয়েছিল এনআইভি। ওই ব্যাক্তিদের মৃত্যুর পর অনুসন্ধানে তাঁদের বাড়িতে নিপা সংক্রামিত আম পাওয়া গিয়েছে।
তাহলে কী আম খাওয়া বন্ধ রাখলেই ভাইরাসের হাত থেকে ছাড় মিলবে? বিষয়টা অতটা সরল নয়। এই ভাইরাস যে শুধু পশু থেকে মানুষে ছড়ায় তা নয়, অতীতে দেখা গিয়েছে মানুষ থেকে মানুষেও ভাইরাসটি সংক্রামিত হয়। তাহলে বাঁচার উপায়? কয়েকটি সাবধানতা অবশ্যই নেওয়া যেতে পারে।
'পশু থেকে মানবে' সংক্রমণ ঠেকাতে যা যা করা যেতে পারে -
- খেজুরের রস পান এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। কারণ ফ্রুট ব্যাটরা বা ফলখেকো বাদুড়রাও এই রস অত্যন্ত পছন্দ করে। তাই বাদুড়দের মাধ্যমে খেজুরের রসে এনআইভি ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি থাকে।
- গৃহপালিত পশুরাও এই ভাইরাসের বাহক হতে পারে। ফ্রুট ব্যাটরা অনেকসময়ই কোনও ফল অর্ধেক খেয়ে বাকিটা ফেলে দেয়। সেই আধখাওয়া ফল যদি গৃহপালিত পশুরা খায়, তাহলে তারা আক্রান্ত হবে। ভাইরাস যে এলাকায় ছড়িয়েছে সেখানে গৃহপালিত পশুদের ঘরের বাইরে বেরোতে দেওয়া উচিত নয়। তাদের চোখে চোখে রাখতে হবে, এবং নিজেদের হাতে খাওয়ার দিতে হবে।
- এরপরেও যদি পোষ্য়রা এনআইভি-তে আক্রান্ত হয়, তাহলে তাদের থেকে দূরে দূরে থাকতে হবে, এবং উপযুক্ত চিকিৎসা করাতে হবে।
- গাছে ওঠা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, বাদুড়দের লালা বা অন্য কোনও স্রাব গাছের ডালে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
'মানব থেকে মানবে' সংক্রমণ ঠেকাতে যা যা করা যেতে পারে -
- আক্রান্ত রোগীদের হাঁচি-কাশি থেকে ভাইরাসটি সংক্রামিত হতে পারে। আক্রান্ত রোগীর ছাড়া নিশ্বাস, প্রশ্বাসের মাধ্যমে কোনও সুস্থ ব্যাক্তির দেহে প্রবেশ করে তার দেহে সংক্রামিত হতে পারে। তাই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আক্রান্তের সঙ্গে একসঙ্গে খাওয়া, এক বিছানায় শোয়া বা তার মুখের খুব কাছে যাওয়া এড়াতে হবে। কোনও অবস্থাতেই যাতে তার লালার স্পর্শে আসা চলবে না।
- লালার পাশাপাশি আক্রান্তের মল-মূত্রের মাধ্যমেও ভাইরাসটি সংক্রামিত হয়। তাই রোগীকে আলাদা টয়লেট ব্যবহার করতে দিতে হবে। একই টয়লেট ব্যবহার করলে এআইভি সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যাবে।
- এত সাবধানতার বদলে অনেকেই প্রতিষেধক খুঁজছেন। কিন্তু ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন বা হু বলছে এখনও এর কিন্তু কোনও প্রতিশেধক নেই। তবে গবেষণা চলছে। অতিমধ্যেই একটি প্রতিষেধক শূকরদের ওপর ব্যবহার করে সাফল্য মিলেছে। ফলে খুব তাড়াতাড়িই মানুষদের জন্যও প্রতিষেধক মিলবে।
তবে, ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা একটা অন্য বিপদের কথা বলছেন। তাঁদের মতে মানুষ যেভাবে বাদুরদের প্রাকৃতিক আবাসগুলি ধ্বংস করে ফেলেছে, তাতেই বাদুরদের দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধক ক্ষমতা কমছে। তাই তাদের মল-মূত্রে বেশি বেশি করে ভাইরাস জড়ো হচ্ছে। যা আখেরে মানুষকেই আক্রান্ত করছে। অর্থাৎ প্রকৃতিকে আক্রমণ করলে, সে ঘুরিয়ে তার শোধ তুলবেই।