বিদ্রোহী বিধায়ক থেকে মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে, মহারাষ্ট্রে রাজনৈতিক সঙ্কটের নাটকীয় যবনিকা পতন
বিদ্রোহী বিধায়ক থেকে মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে, মহারাষ্ট্রে রাজনৈতিক সঙ্কটের নাটকীয় যবনিকা পতন
বৃহস্পতিবার মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন একনাথ শিন্ডে। এবং উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন দেবেন্দ্র ফড়নবীশ। আর তার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ১০দিন ধরে চলা মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক সঙ্কটের নাটকীয় অবসান হয়। মহারাষ্ট্রের এই রাজনৈতিক থ্রিলারের গতি কোন দিকে যাচ্ছে তা ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। সমস্ত জটিল প্রশ্নের উত্তর মিলতে থাকে। কিন্তু যাবতীয় সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেবেন্দ্র ফড়নবীশ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে একনাথ শিন্ডের নাম ঘোষণা করেন।
রাজনৈতিক অস্থিরতার সূত্রপাত
বিধান পরিষদের ক্রশ ভোটিংয়ের পরেই শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে দলের বিধায়কদের জরুরি বৈঠকে ডাকেন। কিন্তু বৈঠকের দিন সকাল থেকেই প্রায় ১১ জন বিধায়কদের খোঁজ পাওয়া যায় না। জানা যায়, তাঁরা সুরাটের একটি পাঁচতারা রিসোর্টে আশ্রয় নিয়েছেন। একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বাধীন শিবসেনার বিদ্রোহীরা প্রথম থেকে মহা বিকাশ আঘাদি জোটের বিরোধিতা করতে থাকেন। এর মধ্যেই শিন্ডে টুইট করে জানান, বালা সাহেব ঠাকরের শিক্ষার সঙ্গে তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না। সুরাটে এক রাত থাকার পরেই বন্যা বিধ্বস্ত অসমের গুয়াহাটির একটি পাঁচতারা হোটেলে আশ্রয় নেন শিবসেনার বিদ্রোহী বিধায়করা। আরও চার বিধায়ক শিবসেনার বিদ্রোহী শিবিরে যোগ দেন। শিবসেনার বিধায়কদের অপহরণের অভিযোগ অস্বীকার করে, একনাথ শিন্ডে নিজের গোষ্ঠীর ছবি প্রকাশ করেন।
শিবসেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে বাগযুদ্ধে
বিদ্রোহী শিবির গুয়াহাটি যাওয়ার পর থেকেই শিবসেনা ও বিদ্রোহী শিবিরের মধ্যে বাগযুদ্ধ শুরু হয়। একদিকে বিদ্রোহী শিবির বার বার অভিযোগ করতে থাকে, মহা বিকাশ আঘাদি জোটে সেনা বিধায়কদের অপমান করা হয়েছে। উদ্ধব ঠাকরে বিরোধীদের সঙ্গে দেখা করতেন না। এমনকী অভিযোগ করা হয়, বালা সাহেবের শিবসেনার সঙ্গে বর্তমান শিবসেনার কোনও মিল নেই। অন্যদিকে, নরমে-গরমে শিবসেনা বিদ্রোহীদের বার্তা দিতে চায়। উদ্ধব ঠাকরে যেমন একাধিকবার বিদ্রোহীদের প্রতি আবেগঘন বার্তা পাঠান। ঠিক সেই সময় সঞ্জয় রাউত বিদ্রোহীদের বিশ্বাসঘাতক বলে উল্লেখ করেন। কখনও আবার বলেন, তাঁদের মুম্বই ফিরে আসার সাহস নেই।
বিদ্রোহীদের প্রতি কঠোর মনোভাব
নরম-গরম মনোভাবের মধ্যে শিবসেনা বিদ্রোহী বিধায়ক ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে থাকে। শিবসেনা ১৬ জন বিদ্রোহী বিধায়কের অযোগ্যতার আবেদন করে। ডেপুটি স্পিকারের কাছে পাল্টা দুই নির্দল বিধায়ক মহা বিকাশ আঘাদি সরকারের সরকারের ওপর অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করে। অনাস্থা প্রস্তাবে ৩৪ জন বিধায়ক স্বাক্ষর করেছিলেন। কিন্তু বেনামি ইমেল থেকে এই প্রস্তাব ডেপুটি স্পিকার তা খারিজ করে দেয়। ডেপুটি স্পিকার ১৬ জন বিদ্রোহী স্পিকারকে নোটিশ জারি করে। বৈঠকে দলের জাতীয় কার্যনির্বাহী শিবসেনার বিদ্রোহীদের নিন্দা করে। কার্যনির্বাহী বৈঠকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, বালা সাহেবের নাম শিবসেনা ছাড়া কেউ ব্যবহার করতে পারবে না।
শিবসেনা ও বিদ্রোহীদের আইনি লড়াই
ডেপুটি স্পিকারের অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব প্রত্যাখানের বিরোধিতা করে একনাথ শিন্ডে সুপ্রিম কোর্টে যান। উদ্ধব ঠাকরে নয় জন মন্ত্রীর দায়িত্ব কেড়ে নেন। অন্যান্য মন্ত্রীদের সেই দায়িত্ব তুলে দেন। এবার শিবসেনা প্রধান সরাসরি বিদ্রোহীদের ফিরে আসার ও তাঁর সঙ্গে বৈঠকে বসার আবেদন করেন।
রাজনৈতিক সঙ্কটে বিজেপি যোগ
মহারাষ্ট্রে রাজনৈতিক উত্তেজনায় বিজেপি যোগ ক্রমেই স্পষ্ট হতে থাকে। যদিও বিজেপির তরফে বার বার দাবি করা হয়, তাদের সঙ্গে শিবসেনার বিদ্রোহী শিবিরের কোনও যোগ নেই। আবার একনাথ শিন্ডে একধিবার জানিয়েছেন, বিজেপি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। কিন্তু ২৯ জুন স্পষ্ট হয়ে যায়। একনাথ শিন্ডে দিল্লিতে উড়ে গিয়ে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন। পাশাপাশি তিনি মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেদিনই তিনি রাজ্যপাল কোশিয়ারির সঙ্গে দেখা করেন। আস্থা ভোটের আবেদন করেন। রাতেই মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ৩০ জুন আস্থা ভোটের নোটিশ জারি করে।
যবনিকা পতন
মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে, তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হলেও, কিন্তু শেষটা দ্রুত হয়ে যায়। নোটিশ জারির পরের দিনই বিদ্রোহী শিবিরে সক্রিয়তা দেখতে পাওয়া যায়। কামাক্ষ্যা মন্দিরে পুজো দিয়ে গোয়ায় রহনা হন বিদ্রোহীরা। অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় শিবসেনা। রাজ্যপালের নোটিশের ওপর স্থগিতাদেশের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু শিবসেনার আবেদন প্রত্যাখ্যাণ করে সুপ্রিম কোর্ট। ২৯ জুন রাতে উদ্ধব ঠাকরে মুখ্যমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করেন।পরের দিন মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে নাটকীয় মোড় সামনে এনে একনাথ শিন্ডেকে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করে। সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে একনাথ শিন্ডে ও উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেবেন্দ্র ফড়নবীশ শ
রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যেই পাওয়ারের কাছে আয়কর দফতরের 'প্রেম-পত্র'