কীভাবে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে 'দুর্গা' হয়ে উঠেছিলেন 'প্রিয়দর্শিনী' ইন্দিরা গান্ধী!
১৯১৭ সালের ১৯ নভেম্বর জন্ম নিয়েছিলেন ভারতের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। এলাহাবাদের কাশ্মীরি নেহরু পরিবারে জন্ম নেন প্রয়দর্শিনী। তিনি তৃতীয় হওয়া ছাড়াও এখনও পর্যন্ত ভারতের একমাত্র মহিলা প্রধানম
১৯১৭ সালের ১৯ নভেম্বর জন্ম নিয়েছিলেন ভারতের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। এলাহাবাদের কাশ্মীরি নেহরু পরিবারে জন্ম নেন প্রিয়দর্শিনী। তিনি তৃতীয় হওয়া ছাড়াও এখনও পর্যন্ত ভারতের একমাত্র মহিলা প্রধানমন্ত্রী।
১৯৬৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হন ইন্দিরা গান্ধী
১৯৬৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেন ইন্দিরা গান্ধী। আর তার পাঁচ বছর পরেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত তাদের সবথেকে বড় জয়লাভ করে যুদ্ধের ময়দানে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশে পরিণত হয়। যেই সাহসের সঙ্গে সেই সময় ইন্দিরা গান্ধী দেশকে পরিচালনা করেছিলেন এবং যুদ্ধে থাকা ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তার প্রশংসা করেছিলেন বিরোধী আসনে বসা অটল বিহারী বাজপেয়ী।
কোন পথে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা অর্জনে সাহায্য?
তবে কোন পথে ভারতকে সেই জয় এনে দিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী? ঘটনার সূত্রপাত ১৯৭১ সালে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের সাধআরণ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে জয় লাভ করে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লিগ। তবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে নারাজ হয় পশ্চিম পাকিস্তানের মসনদে বসে থাকা রাজনৈতিকরা। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের উপর শুরু হয় অকথ্য অত্যাচার। সেই পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
ভারতে আশ্রয় নিতে থাকেন শরণার্থীরা
এদিকে যুদ্ধ বিদ্ধস্ত পূর্ব পাকিস্তান থেকে সেই সময় প্রায় ১ কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নেয়। এত সংখ্যায় শরণার্থী ভারতে চলে আসায় সেই সময় এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে দেশের অর্থনীতির উপর। এরই মাঝে পাকিস্তানকে ভারতে আসা শরণার্থীদের সুরক্ষিত ভাবে ফিরিয়ে নিতে বলেন ইন্দিরা গান্ধী। তবে সেই আলোচনা ভেস্তে যায়। আর ৩ ডিসেম্বর ভারতের উপর আক্রমণ করে পাকিস্তান।
১৩ দিন যুদ্ধ চলে
সেই সময় ১৩ দিন ধরে যুদ্ধ হয় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। তবে ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেননি। এই পরিস্থিতিতে দেশের তিন সেনার প্রধানকে ইন্দিরা গান্ধী সবরকম স্বাধীনতা প্রদান করেন। ৩ ডিসেম্বর ভারতের উপর যখন পাকিস্তান আক্রম করেন, সেই সময় কলকাতায় ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। আক্রমণের খবর পেয়েই তিনি দিল্লির উদ্দেশে রওয়ানা হন। দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি রাজধানী থেকে ভাষণ রাখেন।
আক্রমণাত্বক অবস্থান ভারতকে জিততে সাহায্য করে
এর আগে প্রতিটি যুদ্ধেই ভারত রক্ষণাত্বক মনোভাব দেখিয়েছিল। যার জেরে পাকিস্তানের মধ্যে এই ভাবনা সুদৃঢ় হয়েছিল যে ভারত পাকিস্তানের থেকে দূর্বল। তবে পাকিস্তানের সেই মনোভাবকে চূর্ণ করে ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে ভারত আক্রমণাত্বক অবস্থান গ্রহণ করে। এর ফলে যুদ্ধ শুরুর ১৩ দিন পর পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ। ভারতের সেই যুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বকে কুর্নিশ জানিয়ে অটল বিহারী বাজপেয়ী ইন্দিরাকে দেবী দুর্গার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন সংসদে দাঁড়িয়ে।
ইন্দিরা গান্ধীর তৎপরতা
১৯৭১ সালের বিজয় দিবসের ঠিক আগের দু সপ্তাহ ধরে চলেছিল তীব্র যুদ্ধ। একদিকে ছিল পাকিস্তানি সেনা, আর অন্যদিকে ভারতীয় সেনা আর বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী। ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনা যখন একযোগে ভারতের মোট এগারোটি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালায়, সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা সেনা অভিযানের কথা ঘোষণা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে পুরাদস্তুর যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় সেদিন থেকেই, যদিও তার প্রস্তুতিপর্বটা চলছিল আগের বেশ কয়েক মাস ধরে। তৎকালীন ভারতীয় সেনাপ্রধান স্যাম মানেকশ পরে জানিয়েছিলেন ভারতীয় সেনাকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে এপ্রিল মাসেই নির্দেশ দিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।
যুদ্ধের প্রস্তুতি
১৯৭০ সালে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন হয়েছিল। রাজ্যে নকশাল আন্দোলন ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কারণে সে সময় প্রচুর সৈন্য তখন আগে থেকেই মোতায়েন ছিল। যুদ্ধের আগে সেটা ভীষণ কাজে দিয়েছিল। পাশাপাশি ভারতীয় একটি বিমান হাইজ্যাক হওয়ায় ভারতের উপর দিয়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার বিমান চলাচলের পথ বন্ধ করে দেয় ভারত। এর জেরে পাকিস্তান ভারী সামরিক সরঞ্জাম, রসদ বা সৈন্যসামন্ত সরাসরি আকাশপথে পূর্বদিকে আনতে পারেনি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ঢাকায় যান ইন্দিরা গান্ধী
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পরে পরাজিত পাকবাহিনীর আত্মসমর্পন অনুষ্ঠিত হয়েছিল রমনা রেসকোর্স ময়দানে। সেই বছরেরই ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের 'স্বাধীনতা সংগ্রাম'-এর ডাক দেওয়া সেই ঐতিহাসিক ভাষণও এই ময়দানেই চাক্ষুষ করেছিলেন কয়েক লক্ষ মানুষ। পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্তি পেয়ে করে ঢাকায় পৌঁছে এই রমনা রেসকোর্স ময়দানে আসেন। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী স্বাধীন বাংলাদেশে সফরে এসে সেই রমনাতেই মুজিব-ইন্দিরা মঞ্চে বাংলার মানুষের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন।