ট্রাম্পের ভারত সফরকালেই যুদ্ধক্ষেত্র দিল্লি, কেন ছড়াল হিংসা? কী ভাবে প্রাণ হারালেন ৭ জন!
রবিবারের পর সোমবারও সিএএ বিরোধী ও সিএএ সমর্থনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে দিল্লিতে। আর সেই সংঘর্ষে রীতিমতো যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয় দিল্লির মৌজপুর এলাকা। সেখানে সিএএ নিয়ে বিবাদ বাধে দুই পক্ষের। এর পর একে অপরের উপর পাথর ছুঁড়তে থাকে দুই পক্ষই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সেখানে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোঁড়ে। এই সংঘর্ষে দিল্লি পুলিশের এক হেড কনস্টেবল সহ প্রাম হারিয়েছে ৫ জন। জখম আরও অন্তত ৫০।
সোমবারও দিল্লিতে চলতে থাকে সংঘর্ষ
শাহিনবাগের পর দিল্লির জাাফরাবাদে শুরু হয়েছিল সিএএ বিরোধী প্রতিবাদ যার জেরে দিল্লির স্বাভাবিক জনজীবন খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে রবিবার সকাল থেকেই। সেই প্রতিবাদ সংঘর্ষ চলতে থাকে সোমবারও। গতকাল রাত পর্যন্ত হিংসার জেরে ২ জন মৃতের খবর উঠে এসেছিল। মঙ্গলবার সকাল হতেই সেই মৃত্যুর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৭ জনে। সকাল থেকেই টহলে নেমেছে ব়্যাফ।
কপিল মিশ্রের বিতর্কিত টুইটে অগ্নিগর্ভ হয় পরিস্থিতি
এর আগে বিতর্ক উস্কে দিয়ে এক টুইট করেন বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র। যার পর থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে শুরু করে দিল্লির এই অঞ্চলগুলিতে। সাম্প্রদায়িক ও উত্তেজক টুইট করার জন্য পরিচিত কপিল জাফরাবাদের কাছে মৌজপুরে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনে একটি মিছিলে নেতৃত্বও দেন।
তিন দিনের আল্টিমেটাম দেন কপিল মিশ্র
কপিল মিশ্র দিল্লি পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়ে টুইট করে জানান, ওই এলাকার অবরুদ্ধ রাস্তা মুক্ত করতে হবে। তিনি লেখেন, 'তিন দিনের হুঁশিয়ারি দিল্লি পুলিশের জন্য। জাফরাবাদ ও চাঁদ বাগের রাস্তা ফাঁকা করে দিতে হবে। এরপর, আমাদের বোঝাতে এসো না। আমরা তোমাদের কথা শুনব না। তিন দিন।' ওই টুইটের সঙ্গে কপিল মিশ্র একটি ভিডিও-ও শেয়ার করেন। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে এক পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলছেন কপিল মিশ্র। আধিকারিককে তিনি বলছেন, 'ট্রাম্প চলে যাওয়া পর্যন্ত আমরা শান্তিপূর্ণ থাকব। এরপরে আমরা এমনকী আপনাদের কথাও শুনব না যদি রাস্তা ফাঁকা না করে দেওয়া হয়।'
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার রাতে
ফেব্রুয়ারি ২২, রাত সাড়ে দশটা :শনিবার থেকে মহিলা সহ বেশ কয়েক জন বিক্ষোভকারী বিপুল সংখ্যায় জড়ো হয় জাফরাবাদ মেট্রো স্টেশনের কাছে। সেখানে রাস্তার একটি অংশ দখল করে তারা। ভীম আর্মির পক্ষ থেকে দেশব্যাপী বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছিল। বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, তারা চাঁদবাগ থেকে রাজ ঘাটে একটি শোভাযাত্রা বের করবেন।
রবিবার সকালে বিক্ষোভকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করে পুলিশ
ফেব্রুয়ারি ২৩, সকাল ৯টা : দিল্লি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিক্ষোভকারীদের এলাকাটি খালি করতে বলেন কারণ এতে এলাকায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল। রাজ ঘাট পর্যন্ত কোনও মিছইল বা শোভআযাত্রা করার অনুমতি নেই বলেও প্রতিবাদকারীদের জানানো হয় দিল্লি পুলিশের তরফে। এর কয়েক ঘণ্টা পর বেলা ১২টা নাগাদ কপিল মিশ্র উস্কানিমূলক টুইট করেন।
সিএএ-র সমর্থনে উস্কানিমূলক বক্তৃতা রাখেন কপিল মিশ্র
ফেব্রুয়ারি ২৩, বিকেল ৪টে নাগাদ : কপিল মিশ্র উস্কানিমূলক বক্তৃতা রাখেন তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে। তিনি বলেন, দিল্লি পুলিশ তাদের জাফরাবাদের দিকে না যেতে বলেছে। এরপরই তিনি তিন দিনের আলটিমেটাম দেন এলাকা থেকে সব রকমের অবস্থান তুলে নেওয়ার জন্য। এরপরই সিএএ সমর্থনকারীদের উদ্দেশ্যে পাথর ছুঁড়তে শুরু করে সিএএ বিরোধীরা।
রবিবার রাতে ফের ছড়িয়ে পড়ে হিংসা
ফেব্রুয়ারি ২৩, রাত ৯টা থেকে ১১টা : সন্ধ্যায় পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও রাত গড়াতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। মৌজপুর, কারাওয়াল নগর, মৌজপুর চক, বাবরপুর এবং চাঁদবাগে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং টিয়ার গ্যাস শেল ছোঁড়ে। দলে দলে আধাসামরিক বাহিনী রাস্তায় নামে।
সোমবার সকালে ফের শুরু ঝামেলা
ফেব্রুয়ারি ২৪, সকাল দশটা : সিএএ সমর্থনকারীদের সঙ্গে ফের ঝামেলা বাধে সিএএ বিরোধীদের। দুপুর গড়াতেই তা পাথর ছোঁড়াছুঁড়িতে পরিণত হয়। পুলিশ ফের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার গ্যাসের শেল ছোঁড়ে। দুপুর ৩টে নাগাদ এলাকার বেশ কয়েকটি বাসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনায় একজন হেড কনস্টেবল গুরুতর ভাবে জখম হন। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। জখম হন দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনারও।
সোমবার রাত পর্যন্ত জারি থাকে অশান্তি
ফেব্রুয়ারি ২৪, রাত ৮টা : গোকুলপুরীতে টায়ার মার্কেটে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। রাত ১০টা নাগাদ অশান্তি শুরু হয় ঘোন্দা চক ও মৌজপুর চকে।
আজ নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
এদিকে ভারত সফরকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়টি উত্থাপন করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার হোয়াইট হাউজ সূত্রে এমনটাই জানানো হয়। পাশাপাশি তাদের তরফে বলা হয়, ভারতের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমেরিকার শ্রদ্ধা রয়েছে। প্রসঙ্গত, ট্রাম্পের সফরকালে সিএএ ও এনআরসি নিয়ে দুই দেশের প্রধানদের মধ্যে কথা বার্তা হবে কি না জিজ্ঞাসা করা হলে সাংবাদিকদের এই কথাগুলি বলা হয়।
সিএএ-এনআরসি নিয়ে মোদীর সঙ্গে আলোচনা হতে পারে ট্রাম্পের
এই বিষয়ে হোয়াইট হাউজের এক আধাকারিক বলেন, 'প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার বক্তব্যে এবং তারপরে অবশ্যই ব্যক্তিগতভাবে গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়টি তুলে ধরবেন। পাশাপাশি এই বিষয়ে পারস্পরিক ভাগিদারি ও সম্পর্কের কথাও বলবেন। বিশেষত তিনি ধর্মীয় স্বাধীনতা সম্পর্কিত ইস্যু ও বাকি বিষয়গুলি উত্থাপন করবেন। এই প্রশাসনের কাছে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয় যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রী মোদীর সাথে তাঁর বৈঠকে এই বিষয়গুলি সম্পর্কে কথা বলবেন। তিনি নরেন্দ্র মোদীকে মনে করিয়ে দেবেন যে বিশ্ব তার গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি শ্রদ্ধা অব্যাহত রাখতে ভারতের দিকে তাকাচ্ছে।'