শুধু পরিকাঠামো নয়, মানবিকতা দিয়ে করোনাকে আটকাতে সক্ষম হয়েছে দিল্লি সরকার
শুধু পরিকাঠামো নয়, মানবিকতা দিয়ে করোনাকে আটকাতে সক্ষম হয়েছে দিল্লি সরকার
আধুনিক সময়ে করোনা ভাইরাস মহামারী এক ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে এসেছে। এই মহামারী বর্তমান যুগের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে। বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতিদিন ভাইরাস আক্রান্ত হচ্ছেন। দেশ থেকে রাজ্য, শহর থেকে গ্রাম - সব এলাকাতেই ছড়িয়ে পড়ছে এই মহামারী। দেশের অন্যান্য বড় শহরের মতো দিল্লিতেও মারাত্মকভাবে এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখা গিয়েছে। মার্চ মাসে যখন ভারতে তখনও সেভাবে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়নি, তখন দিল্লিতে ৩৫ হাজারের বেশি যাত্রী বিদেশ থেকে বিমানে চড়ে নেমেছেন।
মার্চ মাসের ২৫ তারিখ প্রথমবার দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। এই লকডাউনের ফলে ভাইরাস ছড়ানো অনেকটাই রোধ করা গিয়েছে। তবে পাশাপাশি আর্থ সামাজিক নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে দেশের মানুষকে। কারও ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাউকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়েছে। দিনমজুরের কাজ করা মানুষ মজুরি পাননি। পরিযায়ী শ্রমিকেরা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে আটকে পড়েছেন। খাবার এবং পানীয় জলের কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে।
এটা মনে করা হয়েছিল, এই লকডাউন খুব বেশিদিন স্থায়ী হবে না। পরে তা উঠে গেলে অর্থনীতি ধীরে ধীরে সচল হবে। এবং সেই মতো প্রায় ৭০ দিনের অচলাবস্থার পর জুন মাসে লকডাউন ওঠে। এবং আনলক ওয়ান শুরু হয়। তবে একইসঙ্গে দিল্লিতে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। তবে একমাস পর ধীরে ধীরে তা কমতে শুরু করেছে। দিল্লি এমন কী করল যাতে এক মাসের মধ্যেই মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা দিল্লিতে কমতে শুরু করল?
দিল্লিতে খুব দ্রুত হারে করোনা পরীক্ষা এবং প্রয়োজনে আইসোলেশন করা হয়েছে। করোনা আক্রান্ত রোগীদের আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। যাতে তা দ্রুত ছড়াতে না পারে। তবে এক্ষেত্রে অনেকেই ভয় পেয়ে পরীক্ষা করাতে চান না। কারণ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আক্রান্তদের সঙ্গে নানা জায়গায় দুর্ব্যবহারের চিত্র অনেকে দেখেছেন। ফলে ভয়ের পরিবেশ ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল। অনেকেই উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষা না করিয়ে নানা দিকে ঘুরে বেড়াতে পারেন, সেই আশঙ্কাও ছিল। যার ফলে ভাইরাস আরও দ্রুত ছড়িয়ে যেত। তবে দিল্লি কীভাবে এই ভয় মানুষের মধ্য থেকে সরিয়ে এগিয়ে গেল তার উত্তর হল একটাই - মানুষকে হোম আইসোলেশনে উৎসাহিত করা।
দিল্লি সরকার ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের উপসর্গ থাকলে হোম আইসোলেশনে উৎসাহ দিয়েছে। বিশেষ করে যাদের মৃদু উপসর্গ রয়েছে অথবা যারা উপসর্গহীন তাদের ক্ষেত্রে সরকার এটা বোঝাতে সমর্থ হয়েছে যে ভাইরাসকে দমন করতে গেলে হোম আইসোলেশন হল সবচেয়ে অব্যর্থ উপায়।
তবে শুধু হোম আইসোলেশনে পাঠিয়েই সরকার বসে থাকেনি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা নিয়মিত নজরদারি চালিয়ে গিয়েছেন। ফোন করে যোগাযোগ করেছেন। স্বাস্থ্য কর্মীরা স্বাস্থ্যের খোঁজ নিয়েছেন। যাতে রোগী বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থেকে মানসিকভাবে ভালো থাকে। এবং পাশাপাশি শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে ওঠে।
মোদ্দা কথা হল - সরকার মানুষকে এটা বোঝাতে সমর্থ হয়েছে যে হোম আইসোলেশনে থেকেও এই রোগ থেকে সম্পূর্ণ সেরে ওঠা যায়। এবং সরকার পুরোপুরিভাবে জনগণের সঙ্গে রয়েছে। পাশাপাশি এই ভাইরাস সম্পর্কে সঠিক প্রচার করে মানুষের মনের অন্ধকার দূর করার প্রচেষ্টা সরকার চালিয়ে গিয়েছে।
একদিকে যেমন সরকারের তরফে পরীক্ষা অনেক বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, পাশাপাশি মানুষ যাতে অযথা ভয় না পায় সেজন্য সর্বত্র প্রচার করা হয়। এর পাশাপাশি হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জুন মাসের শুরুতে চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতালে ৭০০টি শয্যা ছিল। পরে আরও আড়াই হাজার শয্যা বাড়ানো হয়। ফলে শুধু সরকারি নয়, বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ শয্যা রাখা হয়েছে। কোন হাসপাতালে কতগুলি শয্যা খালি রয়েছে সেই সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য সরকার প্রদান করে চলেছে নিয়মিত।
এর পাশাপাশি করোনা রোগীদের কাউন্সেলিং করে চলেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। এছাড়া মজুত রাখা হয়েছে অক্সিমিটার এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর। অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবার জন্য একটি ওয়ার রুম খুলে জরুরি ভিত্তিতে প্রত্যেকদিন মানুষকে পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি প্লাজমা থেরাপির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে অত্যন্ত উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
এর পাশাপাশি যখনই প্রয়োজন তখনই মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে সরকারের বক্তব্য পৌঁছে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এর পাশাপাশি কিন্তু সরকার মেডিকেল স্টাফ, হোটেল স্টাফ, বিভিন্ন এনজিও, ভেন্টিলেটর, মাস্ক, টেস্টিং কিট সরবরাহকারী সংস্থার সঙ্গে এক অটুট যোগাযোগ স্থাপন করে চলেছে। যা দিল্লিতে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইকে অনেক শক্তিশালী করেছে।
দিল্লিতে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই সহজ হয়েছে। কারণ সরকার শুধু পরিকাঠামো তৈরি করেই ক্ষান্ত থাকেনি। বরং মানুষের শারীরিক ও মানসিক বাধা-বিপত্তিকে আন্দাজ করে অত্যন্ত মানবিকতার সঙ্গে সেইমতো পদক্ষেপ করেছে।
কাদের সহজেই প্রাণ কাড়ছে মারণ করোনা ? জানুন কি বলছে ১.৭ কোটি মানুষের উপর করা বৃহত্তম সমীক্ষা