লালকেল্লা কাণ্ড : কীভাবে কৃষকদের আন্দোলন 'হাইজ্যাক' করলেন এক কট্টরপন্থী অভিনেতা!
সাধারণতন্ত্র দিবসে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দিল্লির রাস্তা৷ আন্দোলনরত কৃষক সংগঠনগুলোর ট্রাক্টর ব়্যালিকে ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় সেখানে। দিল্লির বিভিন্ন সীমান্তে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ৷ ব্যারিকেডও করা হয়৷ তবে অপ্রতিরোধ্য কৃষকদের সামাল দিতে দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে৷ ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে চলেন আন্দোলনরত কৃষকরা৷ দুপুরের দিকে আন্দোলনরত কৃষকদের একটি দল লালকেল্লায় প্রবেশ করে৷ এবং এই ঘটনাতেই নাম উঠে আসছে এক কট্টরপন্থী পাঞ্জাবি অভিনেতা দীপ সিধুর।
দীপ সিধুর বিরোধিতা করেছিলেন কৃষক নেতারা
প্রথম থেকেই দীপ সিধুকে কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করার বিরোধিতা করে এসেছিলেন কৃষক নেতারা। যদিও বিগত দুই মাস ধরেই দীপ সিধু চেষ্টা করে গিয়েছেন এই আন্দোলনের সামনের সারিতে আসার। সেই সুযোগই তাঁর সামনে চলে আসে প্রজাতন্ত্র দিবসের ট্রাক্টর ব়্যালির মাধ্যমে। জানা গিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ের আগে দিল্লির আইটিও-র উদ্দেশে যেই ট্রাক্টর ব়্যালি শুরু হয়েছিল, তার নেতৃত্বে ছিলেন দীপ। পরে এই ব়্যালিটি লাল কেল্লায় গিয়ে নিশান উড়িয়ে আরও বড় বিতর্কের জন্ম দেয়।
কৃষকদের উস্কানি দেন দীপ সিধু এবং গ্যাংস্টার লাখা সিধানা
মূলত ৩২টি কৃষক সংগঠনকে ট্রাক্টর ব়্যালির শর্ত সাপেক্ষ অনুমতি দেওয়া হয়েছিল দিল্লি পুলিশের তরফে। এবং এই মিছিলের জন্যে নির্দিষ্ট রুটও দিয়েছিল পুলিশ। তবে বিপত্তি বাঁধে, যখন এই রুট অমান্য করে পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে দিল্লিতে ঢোকার চেষ্টা করে কৃষকদের একাংশ। এবং কৃষকদের এই অংশের নেতৃত্বে নাকি ছিলেন দীপ সিধু এবং গ্যাংস্টার লাখা সিধানা।
'কৃষকদের ট্রাক্টর মিছিল হবে দিল্লির ভিতরে'
জানা গিয়েছে, সোমবার সিঙ্ঘু সীমান্তে অবস্থানকারীদের মূল মঞ্চে ওঠেন দীপ সিধু। তাঁর সঙ্গেই ছিলেন গ্যাংস্টার লাখা সিধানা। সেখানেই তাঁরা ঘোষণা করেছিলেন যে কৃষকদের ট্রাক্টর মিছিল হবে দিল্লির 'ভিতরে'। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, সিধুর এই দাবিকে সমর্থন জানায় কয়েকটি অতি বামপন্থী সংগঠনও। মঙ্গলবার সকালের মধ্যেই অরাজকতা ছড়ানোর পুরো পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলেন ষড়যন্ত্রকারীরা।
দীপ 'জাস্টিস ফর শিখ'-এর সদস্য
জানা গিয়েছে, কৃষকদের মূল মিছিলের অনেক আগেই মিছিল ুরু করেন দীপ সিধুরা। কথা ছিল, দুপুর ১২টায় প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেড শেষ হলে কৃষকরা ট্রাক্টর মিছিল শুরু করবে। তবে সেই চুক্তি লঙ্ঘন করে দিল্লির আইটিও-তে পৌঁছে যান, সিধু এবং তাঁর অনুগামী আন্দোলনকারীরা। জানা গিয়েছে, সিধু নিজে খালিস্তানপন্থী নিষিদ্ধ সংগঠন 'জাস্টিস ফর শিখ'-এর সদস্য। এদিকে এককালে তিনি বিজেপি ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
দীপ কি আরএসএস-এর এজেন্ট?
কয়েকটি পাঞ্জাবি সিনেমাতে অভিনয় করা দীপ আন্দোলনের প্রথমদিকে কৃষক নেতাদের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এরপর সাম্ভো সীমান্তে দীপ নিজেই একটি মোর্চা খুলে বসেন। যদিও বিগত লোকসভা নির্বাচনের সময় গুরুদাসপুরের বিজেপি সাংসদ সানি দেওলের প্রচারের দায়িত্বে ছিলেন। একদা বিজেপি ঘনিষ্ট এই অভিবেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও সেলফি তুলেছেন। পাঞ্জাবের কৃষক সংগঠনগুলি দীপকে আরএসএস-এর এজেন্ট বলেও আখ্যা দিয়েছে একাধিকবার।
লালকেল্লায় নিশান উত্তোলনের নেপথ্যে সরাসরি ভাবে ছিলেন দীপ
জানা গিয়েছে, প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন, লালকেল্লায় নিশান উত্তোলনের নেপথ্যে সরাসরি ছিলেন দীপ সিধু। যখন এক ব্যক্তি ফ্ল্যাগ পোলে উঠছিল, তখন দীপ নিজেই নাকি তার হাতে নিশান তুলে দেন। সেই ঘটনা ঘিরেও বিরর্ক হয়েছে বিস্তর। কারণ একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সেই ঘটনার সময় পোলে ওঠার চেষ্টা করা এক ব্যক্তি ভারতের জাতীয় পতাকা ছুঁড়ে ফেলছেন।
লোকসান হল কৃষক আন্দোলনেরই
এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, যা ঘটল, তাতে আসলে লোকসান হল কৃষক আন্দোলনেরই। এতদিন কৃষকদের পাশে ছিলেন কংগ্রেস ও বামপন্থী নেতারা। কিন্তু আজকের এই বিশৃঙ্খল আচারণের পাশে দাঁড়াননি কেউই। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলত থেকে শুরু করে পাঞ্জাবের অমরিন্দর সিং, সকলেই আবেদন করেন ট্রাক্টর ব়্যালি শান্তিপূর্ণ করার জন্য। তবে তা হয়নি। যার পরেই নিন্দায় সরব হন শশী থারুর, রাহুল গান্ধীরা।