হিজাব বিতর্কের রেশ অব্যাহত, পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হল না কর্নাটকের ২ জন পড়ুয়াকে
হিজাব বিতর্কের রেশ অব্যাহত, পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হল না কর্নাটকের ২ জন পড়ুয়াকে
কর্নাটকে হিজাব বিতর্ক ক্রমশঃ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। সোমবার এ রাজ্যের কিছু স্কুলে হিজার পরিহিতা ছাত্রীদের স্কুলে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। উডুপি ও শিবামোগ্গা জেলার কিছু স্কুলে ছাত্রীরা হিজাব বা হেডস্কার্ফ পরে আসার কারণে তাদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয়নি। এই ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবারও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অশান্তি অব্যাহত ছিল।
অভিভাবকদের অভিযোগ
এক স্কুল ছাত্রীর অভিভাবক জানিয়েছেন যে তাঁদের মেয়েকে স্কুলের পক্ষ থেকে হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় পোশাক পরে আসার অনুমতি নেই রাজ্যের এই নির্দেশ অমান্য করলে পুলিশি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। উডুপির সরকারি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর পড়ুয়ার অভিভাবক বলেন, 'এই নিষেধাজ্ঞা (হিজাব) এখানে আগে ছিল না। আমাদের সন্তানদের আলাদা ঘরে বসানো হচ্ছে। গতকাল শিক্ষিকারা শিশুদের ওপর চিৎকার করেন, তারা (স্কুল) আগে কখনও এই ধরনের আচরণ করেননি।' ওই অভিভাবক এও বলেছেন, 'স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন যে হিজাব পরে যারা রয়েছে তারা বাইরে বসে থাক, যারা হিজাব ছাড়া রয়েছে তারা ক্লাসে আসুক।' ওই অভিভাবক প্রশ্ন করেন, 'আমাদের সন্তানরা হিজাব পরতে চায় এবং তারা শিক্ষাও চায়। হিন্দু পড়ুয়ারা সিঁদুর পরে, খ্রীষ্টান পড়ুয়াদের জপমালা, তাহলে আমাদের সন্তানেরা হিজাব পরলে তাতে দোষের কোথায়?'
স্কুল কর্তৃপক্ষের হুমকি
একই স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রীর এক অভিভাবক এ প্রসঙ্গে জানান যে গত তিনবছর ধরে তাঁর সন্তান হিজাব পরে স্কুলে আসছে, আর সেই সময় কেউ কোনওদিন অভিযোগ করেনি। তিনি বলেন, 'আমার মেয়ে ক্লাসে হিজাব পরে গিয়েছিল। তাকে হিজাব খুলে রেখে স্কুলের দৈনিক প্রার্থনায় অংশ নিতে বলা হয়। পুলিশ যখন তাকে হুমকি দেয় তখন সে বাধ্য হয় হিজাব খুলতে।' স্কুল কর্তৃপক্ষের থেকে হুমকির মতো আচরণ পাওয়ার অভিযোগ করেন ষষ্ঠ শ্রেণীর এক পড়ুয়ার অভিভাবকও। ওই অভিভাবক জানিয়েছে যে স্কুলের পক্ষ থেকে হুমকি দিয়ে বলা হয় যদি নিয়ম অমান্য করা হয় তবে ছাত্রীদের পুলিশে পাঠানো হবে, তাই তারা স্কার্ফ খুলে স্কুলে ঢোকে।
মুসলিম পড়ুয়াদের প্রতিক্রিয়া
পরীক্ষা দিতে না পারা এক পড়ুয়া, হিনা বলেন, 'আমি হিজাব খুলিনি। আমি এর আগে হিজাব পরেই স্কুলে গিয়েছি। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের বলেছিল নয় হিজাব খুলে ফেল আর নয়ত এই জায়গা ছেড়ে চলে যাও। হিজাব পরে আমাদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয়নি।' সাবরিন নামে আর এক পড়ুয়া বলেন, 'আমি পরীক্ষা দিতে পারিনি কারণ আমাকে হিজাব খুলে ফেলতে বলা হয়েছিল।' অন্যান্য অভিভাবকরা জানিয়েছেন যে কর্নাটক হাইকোর্ট, যে ছয়জন পড়ুয়ার হিজাব নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে পিটিশনের শুনানি চলছে, এই বিষয়ে নিয়ম করার পরই তাঁরা তাঁদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাবেন।
হিজাব বিতর্কে উত্তপ্ত রাজ্য
হিজাব নিষিদ্ধ করা নিয়ে রাজ্যের কোডাগু জেলার কিছু স্কুল পড়ুয়ারা মঞ্চ করে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। প্রসঙ্গত, কর্নাটকের স্কুলগুলি এক সপ্তাহের জন্য এই হিজাব কাণ্ডের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছিল। সোমবার থেকে স্কুল পুনরায় খোলা হলেও কিছু ছাত্রীকে হিজাব খুলে স্কুলে ঢোকার দৃশ্য সামনে আসতেই ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজ্য। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে যে জনবহুল রাস্তার মাঝেই শিক্ষিকারা ছাত্রীদের হিজাব খুলতে বাধ্য করছে। ক্লাসরুমে হিজাব পরা নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে সোমবার শিক্ষার্থীরা যুক্তি দিয়েছিল যে তাদের এটি করতে নিষেধ করার মতো কোনও আইন নেই। তাদের পক্ষ থেকে শীর্ষ আইনজীবী দেবদত্ত কামাত জানিয়েছিলেন যে হিজাব পরার অধিকার সংবিধান দ্বারা প্রদত্ত ধর্মীয় স্বাধীনতার অধীনে সুরক্ষিত। গতমাসে উডুপির স্কুলে শিক্ষিকাদের নিষেধ সত্ত্বেও ছাত্রীরা হিজাব খুলতে অস্বীকার করে। এরপরই রাজ্যজুড়ে শুরু হয় হিজাব কাণ্ড। এরপর ছয় পড়ুয়া হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে, স্কুল এবং কলেজগুলি তিন দিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং বেঙ্গালুরু এবং এর আশেপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। হিজাব কাণ্ড সুপ্রিম কোর্টে গেলে শীর্ষ আদালতের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে সময় আসলে এই বিষয়ে তারা হস্তক্ষেপ করবে।