স্বামী চাই, দাবিতে সোচ্চার উত্তরাখণ্ডের বিধবাদের গ্রাম
দেওলি-ভাঙ্গিরাম। উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপ্রয়াগ জেলার এই গ্রামে বহু মহিলা একাকী জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। ২০১৩ সালের সেই ভয়ঙ্কর বন্যায় এক ঝটকায় এই গ্রামের ৫৪জন বিবাহিত পুরুষের প্রাণ চলে গিয়েছে। তার মধ্যে দুই -তৃতীয়াংশই বিবাহিত ছিলেন।
তাই সেদিনের ঘটনার পরে এক লহমায় ঘরে ঘরে বৈধব্য নেমে এসেছে। সদ্য বিবাহিত যুবতী থেকে শুরু করে বেশ কয়েক বছর বিবাহিত জীবন কাটানো মহিলা- সকলে একসঙ্গে বিধবা হয়ে গিয়েছেন। কারও মাত্র কিছুদিন হয়েছিল বিয়ের, আবার কারও সন্তানের জন্মের পরই স্বামী মারা গিয়েছেন।
এই মহিলাদের প্রায় সকলেই ব্রাহ্মণ পরিবারের। কেদারনাথ শ্রাইনে পুজো-আচ্চাই তাঁদের জীবন-জীবিকার অঙ্গ। উচ্চবর্ণের হওয়ায় গ্রামে তাঁদের মান অনেক বেশি। আর সেখানেই সমস্যা।
গ্রামবাসীরা কী বলবেন, কোন মুখে সকলের সামনে দ্বিতীয় বিয়ের পর মুখে দেখাবেন, এই ভেবে আর কেউ দ্বিতীয় বিয়ের সাহস দেখাতে পারছেন না। সমাজে একঘরে হওয়ার ভয়ে মধ্য কুড়িতেই জীবন একঘেয়ে হয়ে গিয়েছে তাঁদের। পুরো জীবনটা পড়ে রয়েছে যুবতী বিধবাদের সামনে। অথচ উপায় নেই কোনও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহিলারা জানিয়েছেন, চার বছর আগের সেই ঘটনার পর কয়েকজন যুবতী গ্রাম থেকে বেরিয়ে শহরে গিয়ে পড়াশোনা করছে। তবে ফের বিয়ে করলেই গ্রামে ঢোকা বন্ধ হয়ে যাবে। ৩১ বছর বয়সী এক মহিলা জানিয়েছেন, তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তাঁর পক্ষে নতুন করে সংসার পাতা সমস্যার।
তবে যেসমস্ত যুবতীরা স্বামী হারিয়েছেন, যাদের সন্তান নেই, তাঁদের অন্তত নতুন করে সংসার করার সুযোগ দেওয়া হোক। তাদের সামনে পুরো জীবন পড়ে রয়েছে। সকলের হয়ে দাবি জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু গ্রামে বেশিরভাগ মানুষ বিধবা বিবাহের বিরুদ্ধে। তাই বারবার সেখানে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে।
গ্রামের প্রধান বেদ প্রকাশ স্পষ্ট জানিয়েছেন, আমাদের গ্রামে বিধবা বিয়ের একটাও উদাহরণ নেই। এটা আমাদের সংষ্কৃতি নয়। কয়েক শতাব্দি ধরে এই সংষ্কার মেনে চলছি আমরা। ফলে বিধবা যুবতী-মহিলারা শ্বশুর বাড়িতেও থাকতে পারে আবার নিজের বাপের বাড়িতেও থাকতে পারে। সেটা তাদের ইচ্ছে। তবে বিধবা বিবাহ করতে দেওয়া হবে না। ফলে অসহায় মহিলাদের ফের সংসার পাতার স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছে।