বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত মুম্বই, ১৩ বছরের কিশোরী সহ মৃত ৪, দেখুন বিপর্যয়ের জলছবি
আরব সাগরের তির ধরে মৌসুমী বায়ু মুম্বইয়ে প্রবেশ করায় শনিবার থেকেই প্রবল বর্ষণ শুরু হয়েছে। যার জেরে প্রায় বিপর্যস্ত মুম্বই।
আরব সাগরের তির ধরে মৌসুমী বায়ু মুম্বইয়ে প্রবেশ করায় শনিবার থেকেই প্রবল বর্ষণ শুরু হয়েছে। যার জেরে প্রায় বিপর্যস্ত মুম্বই। একদিনের মধ্যেই কোথাও কোথাও ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে গিয়েছে। বহু জায়গায় কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর সমান জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনের তরফে সকলকে সতর্ক করা হয়েছে। বাইরে আটকে পড়লে কী কী করতে হবে তা জানিয়ে সাবধানবাণী শোনানো হয়েছে।
কিশোরীর প্রাণ গেল
মুম্বইয়ের শহরতলি এলাকায় গাছ পড়ে ১৩ বছরের এক কিশোরীর প্রাণ গিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় জল জমা রয়েছে। এছাড়াও আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।
[আরও পড়ুন:দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে গভীর বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস, আজও ভাসবে গোয়া, মুম্বই]
কোলাবায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত
মাত্র ৩ ঘণ্টায় কোলাবা অবজারভেটরি ১০৮ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে।। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এত পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে। সবমিলিয়ে কোলাবায় ১৬০.৮ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
গাছ ভেঙে মৃত্যু
মুম্বই পুরসভার বিপর্যয় মোকাবিলা সেল জানিয়েছে, শনিবার রাত ৯টা ৩৮ মিনিট নাগাদ দাহিসারে এসএন দুবে রোডে ১৩ বছরের কিশোরীর মাথায় গাছ ভেঙে পড়ে। কিশোরীর নাম দৃষ্টি মুঙ্গরা। স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতেই তার মৃত্যু হয়।
মাথায় আঘাত কিশোরীর
পুলিশ দৃষ্টির মৃত্যুর পরে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর রিপোর্ট দায়ের করেছে। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে কিশোরীর। যার ফলে তার মৃত্যু হয়েছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ট্যাঙ্কারের তলায় চাপা পড়ে মৃত
শনিবার সকালে জলের মধ্যে ডুবে থাকা প্রিয়াঙ্কা ঝেন্ডেকে স্কুটার সমেত একটি ট্যাঙ্কার চাপা দিয়ে দেয়। ঘটনাটি ঘটেছে থানেতে কামগর হাসপাতাল এলাকায়। জল থাকায় প্রিয়াঙ্কাকে দেখতেই পায়নি ট্যাঙ্কারের ড্রাইভার। ফলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। থানে পুলিশ অজ্ঞাতপরিচয় ট্যাঙ্কার ড্রাইভারের বিরুদ্ধে মামলা রিজু করে তদন্তে নেমেছে। এখনও ড্রাইভারের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
বিদ্যুতপৃষ্ঠ হয়ে মৃত্যু
ভিওয়ান্ডি এলাকায় ৩৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তি যার নাম আলি আকবর আনসারি তিনি অটো রিক্সা ঠেলছিলেন। রাস্তাতেই বিদ্যুতপৃষ্ঠ হয়ে মারা যান। পুলিশ দুর্ঘটনায় মৃত বলে রিপোর্ট তৈরি করে তদন্তে নেমেছে।
কোঠারি বিল্ডিংয়ে
শনিবার ভোর রাতে কোঠারি বিল্ডিংয়ে আগুন লেগে চূড়ান্ত বিভ্রান্ত ছড়ায়। আগুন নেভাতে এসে দুই দমকলকর্মী আহত হন। ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ আগুন লাগে। বিল্ডিংটিকে ভয়ানক ঘোষণা করে চার বছর আগেই খালি করে দেওয়া হয়েছিল। তবে কেন বিল্ডিংটিকে এখনও ভাঙা হয়নি তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন।
বিল্ডিংয়ের একাংশ খসে পড়ে
আগুন লাগার পরে বিল্ডিংয়ের একাংশ খসে পড়ে। দমকল কর্মীদের প্রায় সকলেই বিপদ বুঝে সরে গিয়েছিলেন। যার ফলে কেউ মারা যাননি। সিঁড়ি বেড়ে উপরে ওঠা দুই দমকলকর্মী আহত হন। মোট ১৮টি দমকলের ইঞ্জিন পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। দমকলকর্মীদের তৎপরতায় তা পাশের বিল্ডিংয়ে ছড়িয়ে পড়েনি।
বাজ পড়ে মৃত
অন্যদিকে থানেতেই স্টেনি আদমানি (৬৬) নামে এক ব্যক্তি বাজ পড়ে মারা গিয়েছেন। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। শনিবার সকাল ৬টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে ভায়ান্ডারে।
আহত বেশ কয়েকজন
এর পাশাপাশি আরও মোট ৬জন মুম্বইয়ে বৃষ্টি ও দুর্যোগের কারণে আহত হয়েছেন। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর গোটা ঘটনা পর্যবেক্ষণে রেখেছে।
১১টি অঞ্চলে বেশি জল
বৃহন্মুম্বই পুরসভা জানিয়েছে, শহরের ১১টি অঞ্চলে জল জমে রয়েছে। দাদর, দাদর টিটি, প্যারেল টিটি, ধারাভী, কিংস সার্কেল, সিওন রোড নং ২৪-এর মতো জায়গায় ১.৫ ফুটের বেশি জল জমে রয়েছে। মোট ৩ হাজার বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে নামানো হয়েছে।
কমিশনারের বক্তব্য
বিএমসি কমিশনার অজয় মেহতা স্বীকার করে নিয়েছেন যে বেশকিছু এলাকায় নিকাশির কাজ সময়ে শেষ করা যায়নি। যার ফলে হিন্দমাতার মতো বেশ কিছু এলাকায় জল জমেছে। তবে গতবছরের চেয়ে দ্রুতগতিতে জল নামছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। কোনও কোনও জায়গায় ১১৯ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে এত জল জমে গিয়েছে বলে পুরসভা সাফাই গেয়েছে। তবে পাম্পিং স্টেশনগুলি পুরোদমে জল নিকাশির কাজে ব্যস্ত বলেও বিএমসি কমিশনার জানিয়েছেন।
পুলিশ স্টেশনে জল
শুধু রাস্তাঘাট ও অফিস-কাছারিই নয়, পুলিশ স্টেশনেও জল জমে গিয়েছে। বাইকুল্লা পুলিশ স্টেশনে জল জমেছে। যার ফলে সমস্ত সরকারি নথি অন্যত্র সরাতে হয়েছে। এক্ষেত্রে পুলিশ কর্তারাও পুরসভাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন।