কোথাও নেই বেড, কোথাও বা অক্সিজেন শূন্য, করোনা বিধ্বস্ত যোগী রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অবনতির দিকে
করোনা বিধ্বস্ত যোগী রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অবনতির দিকে
কোভিড–১৯–এর তীব্র সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা উত্তরপ্রদেশ জুড়ে। ২.৯৭ লক্ষ সক্রিয় করোনা কেস নিয়ে দ্বিতীয় ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য হিসাবে নাম উঠে এসেছে যোগী রাজ্যের। হাসপাতালে, বেড, অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ওষুধের অভাবে মানুষের কান্নার রোল ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না। এক কথায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে উত্তরপ্রদেশে।
কোভিড রোগীরা পাচ্ছে না সরকারি সহায়তা
গত চারদিন ধরে ৫৩ বছরের অনিল বাজপেয়ি চেষ্টা করে চলেছেন তাঁর কোভিড আক্রান্ত স্ত্রীকে কানপুরের হাসপাতালে ভর্তি করানোর। রবিবার অনিল বলেন, 'আমি বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, হাসপাতাল, হেল্পলাইনন নম্বর, বন্ধু-বান্ধব থেকে শুরু করে সকলকে ফোন করেছি। কিন্তু স্ত্রীকে হাসপাতালে বেডের অভাবে ভর্তি করতে পারিনি। রবিবার সকাল থেকে তার অক্সিজেন স্তর ৬০-এর নীচে নেমে গিয়েছে।' অন্যদিকে ৩৪ বছরের এক পুলিশ কনস্টেবল জানিয়েছেন যে তিনি জেলা শাসকের থেকে কোনও সহায়তা পাননি এবং বাড়িতেই চিকিৎসকের সঙ্গে ফোনে ফোনে পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা চলছে তাঁর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কনস্টেবল বলেন, 'আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারিনি কারণ আমি কোভিড পজিটিভের রিপোর্ট পাইনি, তবে আমার গত চারদিন ধরে উপসর্গ দেখা দিয়েছে। শনিবার থেকে আমার অক্সিজেন স্তর কমতে শুরু করে দিয়েছে। হাসপাতাল ও জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে সাহায্য পাব না এটা উপলব্ধি করার পর আমি আমার এক চিকিৎসক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলি, যিনি আমায় চিকিৎসায় সাহায্য করছেন। আমি কোথাও বেড পাইনি তবে লখনউতে আমার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর কিনতে পেরেছি। যার গাম পড়েছে ১ লক্ষ টাকা।'
কানপুরে নতুন ২,১৫৩ জন আক্রান্ত
রবিবার কানপুরে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২,১৫৩ জন এবং মারা গিয়েছে ১৯ জন। রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে যে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ১৬,৯১৬। এই জেলায় এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১,০৬২ জনের, লখনউয়ের পর মৃত্যুতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জেলা। এক শীর্ষ স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানিয়েছেন যে কানপুরে ২৬টি হাসপাতালে কোভিড রোগীদের চিকিৎসা চলছে। তিনি বলেন, 'এই মুহূর্তে কোনও বেড খালি নেই। আমার কাছে বহু ফোন আসছে, কিন্তু আমার কিছু করার নেই। আমি তাঁদের বলছি আমায় পরে ফোন করতে এবং আমি বার বার করে বেড রয়েছে কিনা দেখছি।'
ইউএইচএম হাসপাতালের ভিডিও ভাইরাল
রবিবার ইচ্ছাকৃতভাবে ইউএইচএম হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ওয়ার্ডের ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়া হয়, যেখানে অসহায় চিকিৎসক ও বিশৃঙ্খলা দেখতে পাওয়া যায়। এই ঘটনা নিয়ে কানপুরের জেলা শাসক অলোক টিওয়ারি ও মুখ্য মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ অনিল মিশ্র উভয়ই মন্তব্য করতে চাননি। তাঁদের অধীনস্ত কর্মীরাও জেলায় বেড ও মেডিক্যাল অক্সিজেনের অভাব নিয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন।
অবস্থা খারাপ বারাণসীরও
বারাণসীতে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২,০৫৭ জন এবং গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। পরিস্থিতি একই রকম রয়েছে এখানেও। অনেক রোগীকেই হাসপাতাল বাধ্য হচ্ছে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে, কারণ ভেন্টিলেটর, অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে এই জেলাতেও। যদিও রাজ্য সরকার হাসপাতালগুলির ওপর চাপ সৃষ্টি করে বা ডিআরডিওর মতো সরকারী সংস্থার সহায়তা নিয়ে বেডের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে, তবুও চাহিদা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। দৈনিক ১০ হাজার থেকে ১৮ হাজার সক্রিয় করোনা কেসের জন্য অধিকাংশ এল-২ বেড (অক্সিজেন সাপ্লাই সহ) ও এল-৩ বেড (ভেন্টিলেটর সাপোর্ট সহ) প্রয়োজন রাজ্যে। বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলিতে, যেখানে সব বেডই প্রায় দখল।
১৯ শতাংশ সক্রিয় করোনা রোগী হাসপাতালে ভর্তি
শনিবার মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ নিশ্চিত করে জানিয়েছেন যে ১২০টি এল-২ হাসপাতালে ২৫ হাজার বেড ও ২২২চি এল-৩ হাসপাতালে ২৫,৭০০ বেড, মোট ৫১,০০০ বেড রয়েছে। তবে রবিবার স্বাস্থ্য বিভাগের বুলেটিন অনুযায়ী, মোট ২.৯৭ লক্ষ সক্রিয় রোগীর মধ্যে ৫৫,৩০৫ জন বা ১৯ শতাংশ বেসরকারি-সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমান সঙ্কটের দিকে তাকিয়ে অধিকাংশ এল-২ ও এল-৩ বেড রাজ্যের ভর্তি হয়ে গিয়েছে। গত ৬ দিনে সক্রিয় করোনা কেস বৃদ্ধি পেয়েছে ৭৪,০৭২, অথচ রাজ্য মাত্র অতিরিক্ত ৮,৫২১ জন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে।