গোষ্ঠী সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য বড়সড় প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে ভারতের, বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা
গোষ্ঠী সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য বড়সড় প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে ভারতের, বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা
ভারতে লঘু হচ্ছে লকডাউনের বিধিনিষেধ, আর এর জেরেই গোষ্ঠী সংক্রমণের ক্ষেত্রে করোনা নিজ প্রভাব বাড়াবে, শুক্রবার এমনটাই জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। যদিও কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, ভারত ইতিমধ্যেই করোনা সংক্রমণের তৃতীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অর্থাৎ শুরু হয়েছে গোষ্ঠী সংক্রমণ।
গোষ্ঠী সংক্রমণ কোন পর্যায়ে, তা নিয়ে বিতর্ক
ভারতের জনস্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান অধ্যাপক কে শ্রীনাথ রেড্ডি জানিয়েছেন, "যেসকল করোনা আক্রান্তের কোনো আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ইতিহাস নেই, খতিয়ে দেখলে দেখা যাচ্ছে তাদের অধিকাংশই এমন জায়গায় অবস্থান করছেন যেখানে বিদেশি বা আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের যাতায়াত লেগে আছে। ফলত এখনই এমন আক্রান্তদের ভিত্তিতে গোষ্ঠী সংক্রমণকে বিচার করা ঠিক হবে না।" তিনি আরও বলেন, "গোষ্ঠী সংক্রমণ - এই শব্দবন্ধটি ব্যবহারের পূর্বে এর সংজ্ঞা জেনে নেওয়া ভালো। যেহেতু এখনও এমন কিছুই হয়নি তাই এই শব্দবন্ধটি উল্লেখ না করাই উচিত। তবে যেন গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়েছে, এমনভাবেই ভারতের তৈরি থাকা উচিত।"
লকডাউনের জেরে অমিল করোনা সংক্রান্ত তথ্য
এইমসের হৃদরোগ বিভাগের প্রাক্তন অধিকর্তা কে শ্রীনাথ রেড্ডি জানান, "যেসকল দেশে করোনা ছড়িয়েছে, সেইসব দেশেই যে গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়েছে তা নয়। মালয়েশিয়া, ভারতের ন্যায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে প্রতি ১০ লক্ষ আক্রান্ত পিছু মৃতের সংখ্যা অনেকটাই কম।" গবেষকদের মতে, কম বয়সীদের আধিক্য, গ্রামে জনসংখ্যার আধিক্য, উষ্ণতা, জলবায়ু এবং বর্তমানে গৃহবন্দি থাকার সুবাদে করোনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। যদিও অধিকাংশের দাবি, লকডাউনের জেরে অনেক আক্রান্তের খবরই সময়মত পৌঁছাচ্ছে না, ফলত গোষ্ঠী সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।
বজায় রাখতে হবে সামাজিক দূরত্ব
শ্রীনাথ রেড্ডি জানিয়েছেন, "বস্তি ও অধিক জনবসতিপূর্ণ এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা আছে। তাই আমাদের উচিত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, বয়স্কদের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর ব্যবস্থা করা এবং ঘনবসতিপূর্ণ জায়গা থেকে বয়স্ক-শিশুদের সরিয়ে অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা করা।" অন্যদিকে অনেক চিকিৎসকই জানিয়েছেন, বর্তমানে করোনা আক্রান্তের আধিক্য বড় শহর ও তার আশেপাশের এলাকাতেই দেখা যাচ্ছে। রেড্ডি জানিয়েছেন, "ঘরে ফেরা অভিবাসী শ্রমিকদের উপর নজরদারি চালাতে হবে। তাছাড়া একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে, ভারতের প্রায় ৬৬% অঞ্চল গ্রাম্য এলাকা। সেইসকল অঞ্চলে নজর রাখতে হবে। লকডাউন উঠে গেলেও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে পরবর্তী অন্তত একবছর পর্যন্ত। হাত ধোয়া ও মাস্ক পড়ার মত স্বাস্থ্যকর অভ্যাসকে প্রতিদিনের জীবনের অংশ করে তুলতে হবে।"
রুখতে হবে সংক্রমণের গতি
শ্রীনাথ রেড্ডির মতে, "বিজ্ঞান বলছে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেঁধে ফেলে ভাইরাসটিকে একজায়গায় নিষ্ক্রিয়ভাবে আটক করতে পারলে এটির গতিময়তা কমে যায়। তাই প্রত্যেক ভারতবাসীকে সচেতন থাকতে হবে। পরীক্ষানিরীক্ষা তো চলছেই, কিন্তু গোষ্ঠী সংক্রমণ রুখতে গেলে নাগরিকদেরই পদক্ষেপ নিতে হবে।"
এবার রোহিঙ্গা শিবিরেও থাবা বসাল করোনা ভাইরাস, আতঙ্ক বাড়ছে বাংলাদেশে