আগলে রেখে হিন্দু মেয়ের বিয়ে দিলেন মুসলিম প্রতিবেশীরা, সম্প্রীতির ছবি অশান্ত দিল্লিতে
আগলে রেখে হিন্দু মেয়ের বিয়ে দিলেন মুসলিম প্রতিবেশীরা, সম্প্রীতির ছবি অশান্ত দিল্লিতে
সাবিত্রী প্রসাদ, বয়স ২৩ বছর। তাঁর বিয়ে হাওয়ার কথা ছিল মঙ্গলবার। দিল্লির চাঁদবাগে সেদিন হিংসার আগুন জ্বলছে। অগত্যা বিয়ে বাতিল করতে বাধ্য হন সাবিত্রী প্রসাদের বাবা। তখন মেহেন্দি পরা হাতে চোখের জম মুছছেন সাবিত্রী। ঘরের বাইরে সংঘর্ষ জারি দুই পক্ষের। শানাইয়ের বদলে তখন মারামারি হানাহানির আওয়াজ। সাবিত্রীর বাবা ঠিক করলেন পরের দিন, অর্থাৎ বুধবার হবে মেয়ের বিয়ে। সৌজন্যে মুসলিম প্রতিবেশীদের অভয় দান।
সাবিত্রীর পরিবারকে আগলে রাখেন মুসলিম প্রতিবেশীরা
দিল্লির উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের চাঁদবাগ এলাকাটি মূলত মুসলিম অধ্যুষিত। সেখানে ৭০ শতাংশ মুসলিমের বাস। শনিবার শুরু হওয়া হিংসার আগুনে জ্বলতে শুরু করে দিল্লির চাঁদবাগও। পরিস্থিতি এমনই যে, মুসলিম পাড়ায় যেতে সাহস না পাওয়ারই কথা হিন্দু পরিবারের বর যাত্রীদের। কিন্তু সেই অবস্থাতেই রক্ষাকবচের মতো সাবিত্রী ও তাঁর পরিবারকে আগলে রাখল তাঁদের মুসলিম প্রতিবেশীরা।
একদিকে ছোড়া হচ্ছে ঢিল, অন্যদিকে বিয়ের ফুল
বুধবার নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হল সাবিত্রীর বিয়ে। যেই টালির ছাদের বাড়িতে সাবিত্রীর বিয়ে হয়, তার থেকে ঢিল ছোড়া দুরত্বে তখন দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। একদিকে যখন নবদম্পতির উপর ফুল ছুড়ছেন বিয়েতে আগত অতিথিরা, অন্য দিকে তখন রাস্তায় পাথড় ছুড়ছে দুষ্কৃতীরা। চাঁদবাগে তখন গাড়ি, দোকানপাট কিছুই আস্ত নেই। দেখলে মনে হবে যেন কোনও যুদ্ধক্ষেত্র। তবে সেই যুদ্ধক্ষেত্রেই প্রতিবেশীদের স্নেহ ও সাহসিকতার ফলে নিজের বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে বিদায় নেয় সাবিত্রী।
অশান্তি বাঁঁচিয়ে বরকে নিয়ে আসেন প্রতিবেশীরা
সাবিত্রীর বাবা জানান, বুধবার চাঁদবাগের মুসলিম প্রতিবেশীরা বরযাত্রীকে অশান্তির আগুন থেকে বাঁচিয়ে সাবিত্রীর বাড়ি নিয়ে আসেন। আবার বিয়ে চলাকালীন সেই মুসলিম প্রতিবেশীরাই কড়া পাহারায় ছিলেন যাতে নবদম্পতির কোনও ক্ষতি না হয়। অশান্তির জেরে বিয়েবাড়িতে আসতে পারেননি কোনও আত্মীয়। তবে তাদের স্থানে বিয়ে বাড়ি উল্লাস মুখর করে রাখেন প্রতিবেশীরা। দিল্লির উত্তর-পূর্ব অংশে যখন রক্তক্ষয়ী হিংসা চলছে, ঠিক তখনই এভাবেই সম্প্রীতির ছবি উঠে আসে চাঁদবাগে।
'আমরা সকলেই শান্তি চাই'
বিয়ে সম্পন্ন হলে সাবিত্রীর বাবা ভোদে প্রসাদ বলেন, 'মঙ্গলবার যখন ছাদে উঠি পরিস্থিতি আঁচ করতে, তখন দেখি যে চারিদিক শুধু কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। চতুরদিকে অশান্তির আগুন। আমরা এসব চাই না। যারা এই অশান্তির আগুন লাগিয়েছে তারা আমার প্রতিবেশী নয়। এখানে হিন্দু-মুসলিম আমরা মিলেমিশে থাকি। আমরা সকলেই শান্তি চাই।'