বুথ ফেরত সমীক্ষাকে বুড়ো আঙুল, হার্দিক যা বললেন তাতে বিপন্ন মোদীরাজ
হার্দিকের মতে, পাতিদাররা এবার গুজরাতের শাসনতন্ত্রে পরিবর্তন দেখতে চায়। আর তার জন্যই পাতিদাররা ভোট দিয়েছে।
বুথ ফেরত সমীক্ষা-কে ঘিরে ক্ষিপ্ত হার্দিক প্যাটেল? এমনটা এখনও প্রকাশ পায়নি। তবে, গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়া পাতিদার জনগোষ্ঠীর প্রধান নেতা যে ১৮ ডিসেম্বরের ভার্ডিক্ট ডে-র আগে মচকাতে রাজি নন তা ফের বুঝিয়ে দিয়েছেন।
১৪ ডিসেম্বর অধিকাংশ বুথ ফেরত সমীক্ষাতেই দেখানো হয়েছে গুজরাত ও হিমাচলে গেরুয়া রাজের সম্ভাবনা। কংগ্রেস গুজরাতে তো তখতে বসতেই পারবেন না, সেইসঙ্গে হিমাচলেও তারা ক্ষমতাচূত্য হচ্ছে বলে দেখানো হয়েছে বুথ ফেরত সমীক্ষায়। পাতিদার আন্দোলনের নেতা হার্দিক প্যাটেল অবশ্যই বুথ ফেরত সমীক্ষার এমন সব তথ্যে বিচলিত হতে রাজি নন। তাঁর সাফ বক্তব্য কংগ্রেস এবারের গুজরাত নির্বাচনে অন্তত ১০০ থেকে ১০৫টি আসন নিশ্চিতভাবেই পাচ্ছে।
হার্দিকের মতে, পাতিদাররা এবার গুজরাতের শাসনতন্ত্রে পরিবর্তন দেখতে চায়। আর তার জন্যই পাতিদাররা ভোট দিয়েছে। ভোটাধিকার থাকা প্রতিটি পাতিদার যাতে বুথে গিয়ে ভোট দিয়ে আসতে পারে তার জন্য 'পাস' আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা প্রবলভাবে উদ্যোগী ছিল। হার্দিকের অভিযোগ, পাতিদারদের উপরে যেভাবে গুজরাত সরকার বুলডোজার চালিয়েছে তা বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার ভোট এটা। প্যাটেল সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে হওয়া পাতিদার আনামাত আন্দোলন সমিতি বা পাস-এর ১৪ জন সদস্য পুলিশি হিংসায় প্রাণ হারিয়েছেন বলেও দাবি করেন হার্দিক। এই ১৪ জনের জীবন কোনওভাবেই পাতিদাররা ব্যর্থ হতে দেবে না বলে সাফ জানান তিনি।
হার্দিকের মতে, গুজরাতে প্রথম দফার ভোটে ৮৯টি আসনের মধ্যে কংগ্রেসের ঝুলিতে কম করেও ৫২ থেকে ৫৫টি আসন থাকছে। দ্বিতীয় দফার ভোটে ৯৩টি আসনের মধ্যে অন্তত ৪৫ টি আসন কংগ্রেস পাচ্ছে বলেও দাবি করেছেন হার্দিক।
গুজরাটের মোট ভোটব্যাঙ্কের ১৪ শতাংশ পাতিদার জনগোষ্ঠীর। গুজরাতে বিজেপি-র যে বাড়-বাড়ন্ত তা এই পাতিদারদের ভোটব্যাঙ্ককে কাজে লাগিয়েই। এমনকী, গোধরা হিংসায় এই পাতিদারদের সঙ্গে পেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু, সেই পাতিদাররা এখন বিজেপি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
আহমেদাবাদ এবং মেহসানায় পাতিদাররাই সংখ্য়াধিক্য। এবারের ভোট ঘিরে এই দুই এলাকায় প্রবল উত্তেজনা রয়েছে। এই সব অঞ্চলে পাতিদার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা প্রকাশ্যেই প্রত্যেককে কংগ্রেসের ঝুলিতে তাঁদের ভোট দিতে বলেছে। ভোটগ্রহণকালে কোথাও কোথাও পাতিদার আন্দলোনের সদস্যরা নিজেরাই ভোটারদের সঙ্গে করে বুথে বুথে নিয়ে গিয়েছে।
হার্দিক জানিয়েছেন, আন্দোলনের জন্য ১ বছর ধরে তিনি তাঁর গ্রামেও ফিরতে পারেননি। কিন্তু, ভোটের সময় তিনি নিজের গ্রাম ভিরামগ্রামে ফিরেছেন এবং সেখানে গিয়ে ভোট দিয়েছেন। প্রতিটি পাতিদার যেন এবার গুজরাতে পরিবর্তনের জন্য ভোট দেয় তার জন্যই তিনি উদাহরণ তৈরি করতে চেয়েছেন।
শুধু হার্দিক নন পাতিদার আন্দোলনের প্রতিটি মানুষ এখনও ১৮ ডিসেম্বরের ভার্ডিক্ট ডে-র দিকেই তাকিয়ে। বুথ ফেরত সমীক্ষায় যত ভাবেই বিজেপি-কে এগিয়ে রাখা হোক না কেন তা তারা মানতে রাজি নন। তাঁদের সকলেরই একটা কথা গুজরাতে এই পরিবর্তনের জন্য প্রতিটি পাতিদার মুখিয়ে আছে। গত কয়েক বছর ধরে গুজরাতের বিজেপি সরকার এবং তাদের পুলিশবাহিনীর অত্যাচার এবং খুনে মেজাজের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে। এখন ইভিএম-এ সেই গর্জে ওঠার সময়। পাতিদার এই সুযোগ হাতছাড়া করবে না বলেই হার্দিকদের বিশ্বাস।
তাই, বুথ ফেরত সমীক্ষা নয় হার্দিকের কাছে এখন বড় বেশি বিশ্বাসের জায়গা পাতিদাররা। কারণ, এই মানুষগুলির বিশ্বাসকে সম্বল করেই গুজরাতে নয়া প্রজন্মের নেতা হিসাবে উত্থান হয়েছে হার্দিক প্যাটেলের। নিজের জীবনকে বাজি রেখে পাতিদারদের আন্দোলনের মুখ হয়েছেন হার্দিক। সুতরাং, তাঁর বিশ্বাসকে কোনও পাতিদার ভাঙবে না বলেই আশা করেন তিনি।