করোনা সঙ্কটে দেশের একশোটি হাসপাতালে তৈরি হবে অক্সিজেন প্ল্যান্ট, ঘোষণা কেন্দ্রের
দেশের একশোটি হাসপাতালে তৈরি হবে অক্সিজেন প্ল্যান্ট
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ দেশে বাড়ার পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের হাসপাতালে অক্সিজেন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বহু কোভিড রোগী সঠিক সময়ে অক্সিজেন না পেয়েই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। এছাড়াও দেশের বহু হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ না থাকার কারণে বহু কোভিড রোগী শ্বাস–প্রশ্বাসের কষ্টে ভুগছেন। এই সমস্যার সুরাহা করতে এবার কেন্দ্র সরকার উদ্যোগ নিল। নিজেদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন এবার নিজেরা তৈরি করবে দেশের ১০০টি হাসপাতাল। এর জন্য পিএম–কেয়ার তহবিলের অর্থ ব্যবহার করে হাসপাতালগুলিতেই মেডিক্যাল অক্সিজেন প্রস্তুতকারক ইউনিট তৈরি করা হবে।
অক্সিজেন নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক
প্রসঙ্গত, মেডিক্যাল অক্সিজেন কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। কেন্দ্রের কোভিড-১৯ 'ক্ষমতায়িত গ্রুপ-২'-এর উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই আলোচনায় দেশে অক্সিজেন সরবরাহ অক্ষুণ্ণ রাখতে স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি তিনটে মূল পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এগুলি হল, প্রথমত কোভিডের বাড়বাড়ন্তে এই মুহূর্তে কোন রাজ্যগুলির হাসপাতালে অক্সিজেনের চাহিদা সবথেকে বেশি সেরকম ১২টি রাজ্য চিহ্নিত করা, দ্বিতীয়ত একশোটি নতুন হাসপাতালে পিএম-কেয়ার তহবিলের অধীন নিজস্ব অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরি করতে হবে এবং ৫০ হাজার মেট্রিক চন মেডিক্যাল অক্সিজেন আমদানি করতে হবে। প্রসঙ্গত, মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলিতে মেডিক্যাল অক্সিজেন সহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সরবরাহের জন্য গত বছরের মার্চে কেন্দ্রের এই ক্ষমতায়ন গ্রুপ-২ গঠন করা হয়।
১২টি রাজ্য সনাক্ত
দেশে কোভিডের দ্বিতীয় ওয়েভের পর থেকেই ১২চি রাজ্যে উচ্চ সংখষায় করোনা সক্রিয় কেসের বাড়বাড়ন্তর জন্য মেডিক্যাল অক্সিজেনের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই রাজ্যগুলির তালিকায় রয়েছে, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, কর্নাটক, কেরল, তামিলনাড়ু, পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও রাজস্থান। সরকারি এক আধিকারিক জানিয়েছেন যে বর্তমানে দেশে প্রকৃতপক্ষে মেডিক্যাল অক্সিজেনের অভাব নেই বরং সঙ্কট দেখা দিয়েছে সেই সব জায়গায় যেখানে প্রয়োজন বেশি কিন্তু উপলব্ধতা কম। ওই আধিকারিক বলেন, 'দেশে প্রতিদিন ৭,১২৭ মেট্রিক টন মেডিক্যাল অক্সিজেন উৎপাদন হয়, যা যথেষ্ট। প্রয়োজন অনুসারে, ইস্পাত প্ল্যান্টে ব্যবহৃত অক্সিজেনও জরুরি অবস্থায় ব্যবহার করা হচ্ছে। ভারতে অক্সিজেনের একশো শতাংশ উৎপাদন রয়েছে।' কেন্দ্রের দেওয়া তথ্যে বলা হয়েছে যে ১২ এপ্রিল ভারতের মেডিক্যাল অক্সিজেনের পরিমাণ ছিল ৩,৮৪২ মেট্রিক টন। এটি দেশের প্রাত্যহিক উৎপাদন ক্ষমতার ৫৪ শতাংশ। মেডিক্যাল অক্সিজেনের চাহিদা মহারাষ্ট্র, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটক, তামিলনাড়ু, দিল্লি, ছত্তিশগড়, পাঞ্জাব ও রাজস্থানে সবচেয়ে বেশি, কারণ এইসব রাজ্যে করোনা কেসের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
একশো হাসপাতালে অক্সিজেন প্ল্যান্ট
যেখানে অক্সিজেনের অভাব রয়েছে তা মেটাতে পিএম-কেয়ার তহবিলের টাকায় ১০০ টি হাসপাতালে অক্সিজেন উৎপাদনের প্ল্যান্ট তৈরি করা হবে। সাধারণত প্রত্যন্ত এলাকার হাসপাতালগুলিতে তৈরি হবে প্রেসার সুইং অ্যাডসর্পশন (পিএসএ) প্ল্যান্ট। পিএসএ প্ল্যান্ট অক্সিজেন উৎপাদন করবে এবং হাসপাতালগুলিকে স্ব-নির্ভরশীল তৈরি করবে। যাতে হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে মেডিক্যাল অক্সিজেন মজুত থাকে। এর পাশাপাশি পিএম-কেয়ার তহবিলের আওতায় ১৬২টি পিএসএ প্ল্যান্টকে অনুমোদন দেওযা হয়ে গিয়েছে।
৫০ হাজার মেট্রিক টন অক্সিজেন আমদানি
অক্সিজেনের দেশীয় চাহিদা বৃদ্ধির কারণে কেন্দ্র ৫০ হাজার মেট্রিক টন অক্সিজেন আমদানি করবে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'স্বাস্থ্য মন্ত্রককে এর জন্য দরপত্র চূড়ান্ত করতে এবং বিদেশ মন্ত্রকের মিশনগুলির দ্বারা চিহ্নিত আমদানির সম্ভাব্য উৎস অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।'