বিধানসভা নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ নিয়ে ধাক্কা! 'ওয়াটারলু' গোয়ায় তৃণমূলের হারের পিছনে উঠে আসছে যেসব কারণ
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন গোয়া (Goa) জয়ের। বিভিন্ন দল থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে নেতারা যোগও দিয়েছিলেন তৃণমূলে (Trinamool Congress)। কিন্তু সেখানেই কিনা প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ পশ্চিমবঙ্গের শাস
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন গোয়া (Goa) জয়ের। বিভিন্ন দল থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে নেতারা যোগও দিয়েছিলেন তৃণমূলে (Trinamool Congress)। কিন্তু সেখানেই কিনা প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল। তৃণমূলের এই হারের (lose) পিছনে বেশ কিছু কারণ উঠে আসছে। গোয়া জয়ের চ্যালেঞ্জ তৃণমূলের কাছে 'ওয়াটারলু' (Waterloo) হয়ে উঠেছিল বলেও মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন অভিষেক
গত অক্টোবরে গোয়া জয়ের চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় জয়ের পরে তিনি বলেছিলেন, তৃণমূল এখন শুধু বাংলাতেই সীমাবদ্ধ নেই, গোয়াতেও পৌঁছে গিয়েছেন। শূন্য থেকে শুরু করে একবারেই সরকার গঠনের দাবি করেছিলেন তিনি। অভিষেক এরসঙ্গে আরও বলেছিলেন, মেঘালয়, অসম এবং উত্তর প্রদেশের নামও। তবে অভিষেক কি গোয়ায় দলের ভীত পরীক্ষা না করেই এই মন্তব্য করেছিলেন বলে বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
মমতার কংগ্রেসের জায়গা নেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ
গোয়ায় প্রচারে গিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসকে আক্রমণ করে বলেছিলেন, তারাই বিজেপিকে সুযোগ করে দিয়েছে। একের পর এক নির্বাচনে কংগ্রেস বিজেপির কাছে পরাস্ত হওয়ার কথাও তুলে ধরেছিলেন তাঁরা। তৃণমূল কংগ্রেসের বিকল্প বলেও দাবি করেছিলেন। সেক্ষেত্রে তৃণমূল যদি গোয়ায় বলার মতো কোনও ফল করতে পারত, তাহলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করতে পারতেন, পশ্চিমবঙ্গের বাইরেও তাঁর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। কেননা গোয়ায় যে প্রচার করা হয়েছিল, তা হয়েছিল শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দিয়ে।
সঙ্গী আগে থেকেই হেলে ছিল বিজেপির দিকে
গোয়ার ৪০ টি আসনের মধ্যে তৃণমূল প্রার্থী দিয়েছিল ২৬টিতে। আর সহযোগী মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তকপার্টি বাকি আসনে প্রার্থী দেয়। এই দল ২০১৭-র নির্বাচনের পরে গোয়ায় বিজেপির সরকারে ছিল। কিন্তু প্রমোদ সওয়ান্ত মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে তাদেরকে বাদ দেওয়া হয়। তারা প্রমোদ সওয়ন্তের ওপরে কিছুটা ক্ষিপ্ত হলেও, বিজেপির প্রতি আনুগত্য খুব একটা বদলায়নি। ভোটের পরে ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনায় তাদের কথাই বিজেপি আগে মনে করেছে। যা শিকার করে নিয়েছিল এমজিপি নেতৃত্বও।
পরিস্থিতি জানতেন প্রশান্ত কিশোর!
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলেছিলেন বিজেপি রাজ্যে ১০০ পার করতে পারবে না। হয়েছিলও তাই। বিজেপি ৭৭-এ থেকে গিয়েছিল। কিন্তু গোয়ায় আইপ্যাক তৃণমূলের হয়ে কাজ করলেও, প্রশান্ত কিশোরকে তেমন কিছু বলতে শোনা যায়নি। এছাড়াও গোয়ায় নির্বাচনের পরেই প্রশান্ত কিশোর এবং আইপ্যাকের বিরুদ্ধে সেখানকার তৃণমূল সভাপতির অভিযোগ ছিল, নির্বাচনের পরে প্রার্থীদের ছেড়ে চলে গিয়েছে। ফলে দাবি আর কাজের মধ্যে যে বড় ফাঁক ছিল তা ফল প্রকাশের পরে সামনে এসেছে।
একের পর এক নেতা দল ছেড়েছিলেন ভোটের আগেই
খুব কম দিনেই তৃণমূল যেমন গোয়ায় দলের শক্তি দেখাতে চেয়েছিল, সেখানে ধাক্কা লেগেছিল ভোটের আগেই। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের জয়ে আকৃষ্ট হয়ে লুইজিনো ফেলেইরো তৃণমূলে যোগ দিয়ে রাজ্যসভার সাংসদ হয়ে যান। এর কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন দল থেকে ছোট -বড় নেতারা তৃণমূলে যোগ দেন। কিন্তু নেতাদের তৃণমূল ত্যাগ শুরু হয়ে যায় ডিসেম্বর থেকেই। আর জানুয়ারিতে গোয়ার ভোট ঘোষণাক পরে একসঙ্গে বেশ কয়েকজন নেতা দল ছাড়েন। তালিকায় ছিলেন গোয়ার প্রভাবশালী নেতার বলে পরিচিত অ্যালেক্সো রেজিনেল্ডো, লাভু মামলেদারের মতো নেতারা। পরে লুইজিনো ফেলেইরো বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করতে অস্বীকার করেন। যেখানে দল জমাট বাঁধল না, তার আগেই সেখানে ফাঁকও তৃণমূলের হারের জন্য দায়ী।
লিয়েন্ডারসহ অনেকেই সরে গিয়েছিলেন
অক্টোবরের শেষে গোয়ায় গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধামাকা লাগিয়ে দিয়েছিলেন। লিয়েন্ডার পেজ হোন কিংবা নাফিসা আলি একে একে তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলেন। সেই তালিকায় ছিলেন দামোদর ধানেকার, প্রাক্তন ফুটবলার ফ্রাঙ্কোও। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাঁদেরকে সেইভাবে তৃণমূলের পতাকার তলে দেখা যায়নি। তৃণমূল কেন তাঁদের ধরে রাখতে পারল না, সেই প্রশ্নও তুলছেন অনেকে। গোয়াকে পশ্চিমবঙ্গের জয়ের চোখ দিয়ে দেখায় কোথাও হিসেবের গণ্ডগোল হয়ে গিয়েছে বলেও মন্তব্য করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বলতে গেলে নেপোলিয়ানকেও ওয়াটারলুর যুদ্ধে পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল!
গোয়ায় খাতা খুলতে পারল না তৃণমূল! বিধানসভা নির্বাচনে আপের পিছনে মমতার দল
Recommended Video