চাহিদা অনুযায়ী দিল্লিকে অক্সিজেন দেওয়া হোক, অক্সিজেন সঙ্কটে কেন্দ্রকে কড়া নির্দেশ হাইকোর্টের
অক্সিজেন সঙ্কটে কেন্দ্রকে কড়া নির্দেশ হাইকোর্টের
দেশের জাতীয় রাজধানীতে করোনা আবহের মাঝেই চূড়ান্তভাবে অক্সিজেন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে দেখা দিয়েছে কেন্দ্র–রাজ্য সংঘাত। বৃহস্পতিবার দিল্লি হাইকোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে দিল্লিতে ৪৮০ মেট্রিক টন অক্সিজেন পাঠাবে কেন্দ্র এবং তা কোনও বাধা ছাড়াই রাজধানীতে পৌঁছাবে। হাইকোর্ট এও জানিয়েছে যে এ নিয়ে কোনও গাফিলতি যেন না হয় কারণ এতে বহুজনের প্রাণ যেতে পারে।
অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে হবে
দিল্লিতে অক্সিজেন সঙ্কট নিয়ে গত তিনদিন ধরে চলা হাইকোর্টে শুনানিতে কেন্দ্রের উদাসীনতার তীব্র ভর্ৎসনা করা হয়। হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় দিল্লিকে তার প্রয়োজন অনুযায়ী অক্সিজেন সরবরাহ করতে হবে। কিছু রাজ্যে বিশেষ করে হরিয়ানায় অক্সিজেন ট্যাঙ্কার নিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছিল, এ ক্ষেত্রে হাইকোর্ট জানিয়েছে যে বিশেষ করিডর ও আধা সেনার নিরাপত্তা দিয়ে এই অক্সিজেনগুলি পৌঁছে দিতে হবে। বিচারপতিরা এও জানিয়েছেন যে অক্সিজেন নিয়ে যাওয়ার সময কেউ যদি তা আটকায় বা সমস্যার সৃষ্টি করে তবে তার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক মামলা করা হবে।
অক্সিজেন সঙ্কট দিল্লির হাসপাতালে
বৃহস্পতিবার সকালে দিল্লির এক হাসপাতালে অক্সিজেন শেষ হয়ে যায, সেই হাসপাতালের আবেদনকে উল্লেখ করে হাইকোর্ট বলে, 'কী হতে চলেছে তা ভেবে আমরা কেঁপে উঠছি। প্রায় সমস্ত হাসপাতাএই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।' হাইকোর্ট বলে, '৪৮০ মেট্রিক টন অক্সিজেন বরাদ্দ করার কড়া আদেশ দেওয়া হয়েছে এবং এই নির্দেশ কড়াভাবে মেনে চলতে হবে। এই আদেশের অমান্য করলে অপরাধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।' হাইকোর্ট এও বলে যে, 'অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়ার জন্য ট্যাঙ্কারের অতিরিক্ত নিরাপত্তা এবং যাত্রাপথে কোনও প্রতিবন্ধকতা না আসে তার ওপর নজর রাখতে হবে এবং অক্সিজেন দ্রুত পৌঁছে দিতে গ্রিন করিডর গঠন করতে হবে। হাইকোর্ট এর সঙ্গে এও বলে, 'সরকার চাইলে স্বর্গ ও মর্ত্যকেও মিলিয়ে দিতে পারে।'
দিল্লিতে অক্সিজেন প্লান্ট নেই
প্রতিবেশী রাজ্যগুলি থেকে হাসপাতালে অক্সিজেন পৌঁছানো নিয়ে বহু সমস্যা দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে ট্যাঙ্কারের নিরাপত্তা ও সঠিক সময়ে সরবরাহ নিয়ে অহেতুক ঝামেলা বাড়ছে। কিছু ক্ষেত্রে রাস্তায় অক্সিজেনের গাড়ি থামানো হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে প্লান্ট থেকেই অক্সিজেনের গাড়ি বের হয়নি। দিল্লিতে অক্সিজেনের জন্য বাংলা ও ওড়িশা থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দিল্লি সরকার। কিন্তু এতেও সুরক্ষা ও অন্যান্য কারণগুলি বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দিল্লির মতো মেট্রো শহরে উচ্চ পর্যায়ের দূষণের কারণে রাজধানীর দূরা দূরান্ত সীমান্তেও কোনও অক্সিজেন প্লান্ট নেই। যদিও দিল্লি হাইকোর্ট জানিয়েছে যে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ না হওয়া পর্যন্ত এই বিষয় নিয়ে শুনানি চলবে।
শিল্পে অক্সিজেনের ব্যবহার
এর আগে শিল্পে অক্সিজেনের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার কয়েকটি ক্ষেত্রকে ছাড় দিয়েছে কেন্দ্র। তা নিয়ে হাইকোর্টের তোপের মুখে পড়তে হয় কেন্দ্রকে। হাইকোর্ট বলে, 'পেট্রোলিয়াম ও স্টিল কারখানার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার অধীনস্থ। কেন আপনারা রাশ টানতে পারছেন না? বা ন্যূনতম ব্যবহারে জোর দিচ্ছেন না? পেট্রোলিয়াম উৎপাদন বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে কমানো তো সম্ভব। আমরা নিশ্চিত সেই অক্সিজেন মেডিক্যাল ব্যবহারে কাজে লাগাতে ঘাটতি পূরণ সম্ভব হবে।'
কোভিড পরিস্থিতিতে জাতীয় নীতি
এরই মধ্যে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য অক্সিজেন ও অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের জোগানের মতো বিভিন্ন বিষয়গুলির জন্য কেন্দ্রকে একটি 'জাতীয় নীতি' তৈরির নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। দেশে এই মুহূর্তে জাতীয় জরুরি অবস্থার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের নজর এড়ায়নি দেশের এই অবস্থা। শীর্ষ আদালতের মুখ্য বিচারপতি এসএ বোবদে কেন্দ্রকে জাতীয় টিকাকরণ কর্মসূচি পরিকল্পনা সহ কোভিড প্রস্তুতির জাতীয় পরিকল্পনা আদালতে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে।