গৌরীই ছিলেন তাঁর প্রথম প্রেম, প্রাক্তন স্ত্রীকে নিয়ে চিদানন্দ রাজঘাট্টা যা বললেন তাতে চোখে জল আসবে
প্রাক্তন স্ত্রী গৌরী লঙ্কেশকে প্রথম প্রেম বলেই শ্রদ্ধা জানালেন বিশিষ্ট লেখক চিদানন্দ রাজঘাট্টা ।
৫ বছরের প্রেম, তারপর বিয়ে। তাও বছর পাঁচেকের বেশি স্থায়ী হয়নি। কিন্তু ২৭ বছর আগে বিচ্ছেদ হওয়ার পরও বন্ধুত্ব অটুট ছিল। ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে কপট রাগ-অভিমানও চলত। কিন্তু এখন সব ফাঁকা। একটা শূন্যতা যেন গ্রাস করেছে। গৌরী আর নেই, এবার কার সঙ্গে কথা হবে, সিগারেট খাওয়া নিয়ে ঝগড়া হবে। এভাবেই প্রাক্তন স্ত্রী গৌরী লঙ্কেশকে স্মরণ করেছেন বিশিষ্ট লেখক ও কলমনিস্ট চিদানন্দ রাজঘাট্টা।
গৌরীর সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখা ন্যাশনাল কলেজে। তখন দুজনেই সদ্য কৈশোর পেরিয়েছেন। প্রতারণা, ধর্মান্ধতা, গোঁড়ামো নিয়ে প্রশ্ন করা শিখেছেন। এভাবেই প্রেম হয় দুজনের। একসঙ্গে মরে যাওয়া নয়, একসঙ্গে বেঁচে থাকার অঙ্গীকার করেছিলেন তাঁরা। কলেজে থাকাকালীন তাঁর ধূমপান নিয়ে তীব্র আপত্তি ছিল গৌরীর। অনেক বছর পর যখন তিনি ধূমপান ছেড়ে দিয়েছেন, ততদিনে গৌরী সেটা ধরে নিয়েছিলেন। চিদানন্দ জানাচ্ছেন, একবার আমেরিকায় তাঁর কাছে গিয়ে ঘরের মধ্যে ধূমপান করছিলেন গৌরী। তখন চিদানন্দ তাঁকে বারনও করেন।
বিচ্ছেদের পরেও তাঁদের মধ্যে এই বন্ধুত্ব দেখে অনেক বন্ধুই অবাক হতেন বলে জানিয়েছেন চিদানন্দ। ভারতে বিবাহ বিচ্ছেদের অভিজ্ঞতা কারওরই খুব সুখকর হয় না। তাঁদেরও কিছু খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু সেসব দিন খুবই দ্রুতই তাঁরা কাটিয়ে উঠেছেন বলে জানিয়েছেন চিদানন্দ। গৌরী বাম মানসিকতার মানুষ ছিলেন। এই নিয়ে দুজনের মতবিরোধও হত। চিদানন্দের প্রযুক্তি নির্ভর হওয়া নিয়েও আপত্তি ছিল গৌরীর। চিদানন্দকে তিনি প্রায়ই বলতেন, সেলফোন নিয়ে আলোচনা বন্ধ করতে। এদেশের গরীবরা কী সেলফোন খাবে। বাধা দেননি চিদানন্দ। কারণ তিনি জানতেন যে গৌরীই ঠিক।
একদিন হঠাৎ গৌরী তাঁকে ফোন করে বলেন, ছেলেকে নিয়ে আমেরিকা আসছেন তিনি। চিদানন্দ প্রশ্ন করেন, আবার নতুন করে কাকে দত্তক নিলে তুমি। উত্তরে গৌরী বলেন, কানহাইয়া কুমার। কিছুক্ষণ পরেই গৌরী জানান, কানহাইয়ার ফ্লাইট দেরি করেছে, তাই এযাত্রায় আর যাওয়া হচ্ছে না। শেষবারের মত সেটাই গৌরীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছিল।
কিন্তু এখন আর সেসব কিছুই নেই। তিনি এখন কিছু ছেঁড়া স্মৃতি নিয়ে ফিরছেন দেশে। যে দেশে আর নেই গৌরী। বামপন্থা, হিন্দুত্ববাদ বিরোধী, গোঁড়ামো এসব কথার আর কোনও মানে নেই তাঁর কাছে। আজ গৌরী শুধুই তাঁর বন্ধু, তাঁর প্রথম প্রেম।