৪০০ কোটি শোধ না করেই পলাতক ঋণ খেলাপি, চারবছর পর এসবিআই দ্বারস্থ সিবিআইয়ের কাছে
আবারও এক ঋণ খেলাপি দেশ ছেড়ে পলাতক। জানা গিয়েছে, দিল্লির এক সংস্থার মালিক স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই) ও অন্যান্য ব্যাঙ্কের থেকে মোট ৪০০ কোটি টাকার ঋণ নেন। কিন্তু তা ব্যাঙ্ককে শোধ না করেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি। সূত্রের খবর, দিল্লির বাসমতি চাল রপ্তানিকার রাম দেব ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের মালিকের বিরুদ্ধে ছ’টি ব্যাঙ্কের সঙ্গে প্রতারণা করার জন্য তদন্ত চলছে। যদিও সংস্থার মালিক ২০১৬ সাল থেকেই গায়েব।
চার বছর পর অভিযোগ দায়ের
২০১৬ সাল থেকেই সংস্থাটি সম্পত্তি নিরপেক্ষ বলে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছিল। চার বছর পর টনক নড়ে এসবিআইয়ের। চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগ করা হয়। গত সপ্তাহে ২৮ এপ্রিল সিবিআই মামলা দায়ের করে।
ছ’টি ব্যাঙ্ক থেকে ৪১৪ কোটির ঋণ
রাম দেব ইন্টারন্যাশনাল ছ'টি ব্যাঙ্ক থেকে মোট ৪১৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। যার মধ্যে এসবিআইয়ের থেকে নেওয়া হয়েছে ১৭৩.১১ কোটি, কানাড়া ব্যাঙ্ক থেকে ৭৬.০৯ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া থেকে ৬৪.৩১ কোটি, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া থেকে ৫১.৩১ কোটি, কর্পোরেশেন ব্যাঙ্ক থেকে ৩৬.৯১ কোটি এবং আইডিবিআই ব্যাঙ্ক থেকে ১২.২৭ কোটি ঋণ নিয়েছে সংস্থাটি। এসবিআইয়ের অভিযোগ অনুযায়ী, সিবিআই ওই সংস্থা ও সংস্থার ডিরেক্টর নরেশ কুমার, সুরেশ কুমার, সঙ্গীতা ও অজ্ঞাতপরিচয় সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। জালিয়াতি ও প্রতারণা এবং দুর্নীতি ও বিশ্বাসভঙ্গের ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে।
ভুয়ো অ্যাকাউন্ট তৈরি করে ঋণ নেয় সংস্থা
এসবিআইয়ের অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘অর্থের সমস্যার কারণে ২৭.০১.২০১৬ থেকে ১৭৩.১১ কোটি টাকা বকেয়ার সঙ্গে উক্ত সংস্থার খাতা নিরপেক্ষ হয়ে গিয়েছে।' ভারতের সবচেয়ে বড়ো ঋণদাতা আরও জানিয়েছে যে ২০১৬ সালে বিশেষ অডিটে দেখা গিয়েছে যে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলেছিল, ব্যালেন্স-শিটের সঙ্গে প্রতারণা করেছিল এবং ব্যাঙ্ক তহবিলের টাকা নয়ছয় করার জন্য বেআইনিভাবে যন্ত্রপাতি সরিয়ে নিয়েছিল। সংস্থার অ্যাকাউন্টকে নিরপেক্ষ ঘোষণা করার পর এসবিআই যৌথভাবে সংস্থার সম্পত্তি পরিদর্শনে যায় ২০১৬ সালের আগস্ট ও অক্টোবর মাসে। যদিও এই পরিদর্শনের আগেই সংস্থার সদস্যরা নিখোঁজ হয়ে যায়।
দুবাই পালিয়ে গিয়েছে সংস্থার কর্ণধাররা
এসবিআইয়ের অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘যৌথ পরিদর্শনের সময় গ্রাহকরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন না এবং হরিয়ানা পুলিশকে সংস্থার বাইরে মোতায়েন করে আসা হয়। আমরা তদন্ত করে দেখেছি যে গ্রাহকরা পলাতক এবং দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন।' ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে যদিও বলা হয়েছে দেরি করে অভিযোগ দায়ের করা হয়নি, সংস্থার মালিকদের নিখোঁজ অবস্থা নিশ্চিত করতে কমপক্ষে একবছর সময় দরকার হয়। ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইব্যুনালের (এনসিএলটি) অন্য একটি মামলায় এই বিষয়টি ধরা পড়ে। এনসিএলটির তথ্যে দেখা গিয়েছে, ওই সংস্থা মুস্সাদি লাল কৃষ্ণ লাল নামে অন্য একটি সংস্থা ফেঁদে ৩০ লক্ষ টাকা ঋণ নেয়। ২০১৮ সালের মে মাস থেকে রাম দেব ইন্টারন্যাশনালের ডিরেক্টরদের বিরুদ্ধে তিনবার পরোয়ানা জারি করেছে এনসিএলটি। কিন্তু তাঁদের পাওয়া যায়নি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ট্রাইব্যুনাল নিশ্চিত করে জানায় যে ডিরেক্টররা দুবাই পালিয়ে গিয়েছে।
অধিকাংশ সম্পত্তি বিক্রি করে পলাতক সংস্থার মালিক পক্ষ
এসবিআই যখন উপলব্ধি করে যে সংস্থা তাদের অধিকাংশ সম্পত্তি বেচে দিয়ে পালিয়ে গিয়েছে এবং ব্যাঙ্কের সম্পত্তি বিক্রি করে ঋণ আদায়ের কোনও সম্ভাবনা নেই তখনই ব্যাঙ্ক সিবিআইয়ের দ্বারস্থ হয়।