ক্যাবিনেট বার্থ থেকে কেন্দ্রীয় নীতি, জেনে নিন নীতীশ কুমারের সঙ্গে বিজেপির দুরত্ব বাড়ার কারণগুলি
রাজনীতির ময়দানে ফের ইতিহাস তৈরি হল। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ফের এনডিএ সরকারের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক ছেদ করে আরজেডি ও তাদের সঙ্গীদের সঙ্গে নতুন জোট তৈরি করার পথে এগিয়ে গেলেন। ইতিমধ্যেই তিনি বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিয়েছেন। সূত্রের খবর, নতুন ক্যাবিনেটে স্পিকারের পদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্ব নেওয়ার দাবি জানিয়েছে আরজেডি। নীতীশ কুমার ও বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব বিহারের রাজ্যপালের সঙ্গে বিরোধী দলের সমর্থনে নতুন সরকার গড়া নিয়ে দেখা করবেন। প্রসঙ্গত, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেননি নীতীশ। যা ঘিরে এই পর্বে নয়া জল্পনা দানা বাঁধে। জুলাই থেকে কেন্দ্রের ডাকা চতুর্থ নীতি আয়োগের বৈঠক, যেখান থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নেন নীতীশ কুমার। সম্প্রতি নীতীশ কুমারের জেডি(ইউ) ও বিজেপির মধ্যে একাধিক ইস্য নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়, যার ফলস্বরূপ বিজেপির থেকে দুরত্ব তৈরি হতে থাকে নীতীশের। আসুন দেখে নেওয়া যাক কোন কোন ইস্যু নিয়ে দুই জোটের সদস্যরা একে-অপরের বিরুদ্ধতা করেন।
স্পিকার নিয়ে তাণ্ডব
নীতীশ কুমার চেয়েছিলেন বিহার বিধানসভার স্পিকার বিজয় কুমার সিনহাকে সরিয়ে দেওয়া হোক। সরকারকে প্রশ্ন করে প্রকাশ্যে সংবিধানের নিয়ম লঙ্ঘন করার অভিযোগ তোলার পাশাপাশি বিজয় কুমার সিনহার প্রতি মেজাজও হারান মুখ্যমন্ত্রী।
ক্যাবিনেট বার্থ
২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদী সরকারে জেডি(ইউ) মাত্র একটি বার্থ পেয়েছিল। সম্প্রতি জেডি(ইউ)-এর জাতীয় সভাপতি রাজীব রঞ্জন সিং জানান যে তাঁদের দল ইউনিয়ন কাউন্সিল অফ মিনিস্টারের অংশ আবার হবে না। তিনি বলেন, 'লোকসভা নির্বাচনের পর ২০১৯ সালে আমরা আমাদের জায়গায় অটল রয়েছি এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে কেন্দ্রে সরকারের সঙ্গে আমরা যোগ দেব না।' সাম্প্রতিক মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের সময়, নীতীশ কুমার তাঁর দলের আট সহকর্মীকে বিহার মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন এবং বিজেপির জন্য একটি আসন খালি রেখেছিলেন।
বিজেপি নীতির বিরুদ্ধতা
জেডি(ইউ) বারংবার কেন্দ্রের একাধিক বিষয় নিয়ে তাদের জোট বিজেপির বিরুদ্ধতা করেছে। সম্প্রতি অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে হিংসাত্মক প্রতিবাদের সময়, নীতীশ কুমার নীরব থাকলেও, উপেন্দ্র কুশওয়াহা ও লালন সিংয়ের মতো দলের শীর্ষ নেতারা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য কেন্দ্রকে অনুরোধ করছিলেন। শোনা এও গিয়েছিল যে সেই সময় জেডি(ইউ)-এর একাংশ এই বিক্ষোভে ঘি ঢেলেছিল। জেডি(ইউ) প্রধান একই সঙ্গে রাজ্য ও জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিজেপির প্রস্তাবের বিরুদ্ধেও। রাজ্য এবং সংসদে একযোগে নির্বাচনের ধারণাটি প্রধানমন্ত্রী মোদীর দ্বারা তৈরি হয়েছিল, যা বিরোধীরা আপত্তি করেছিল।
জেডি(ইউ) যে বিষয়গুলি বলতে চায়
বিহারের মন্ত্রিসভায় বিজেপির মন্ত্রীদের বাছাই করার ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের আরও কিছু বলার ছিল। তবে এই পদক্ষেপটি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নিকটবর্তী হিসাবে দেখা মন্ত্রীদের নির্বাচনের মাধ্যমে রাজ্যের উপর তাঁর দখলকে দুর্বল করবে।
বৈঠকে যোগ দেননি নীতীশ কুমার
গত মাসে এনডিএ-এর বাছাই করা রাষ্ট্রপতি দৌপদী মুর্মুর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেও যাননি নীতীশ কুমার। এর আগে ১৭ জুলাই, নীতীশ কুমার জাতীয় পতাকা সম্পর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ডাকা মুখ্যমন্ত্রীদের একটি বৈঠকও বয়কট করেছিলেন। বিধানসভা পরিষদের সাতজন নবনির্বাচিত সদস্যের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আয়োজিত বিদায়ী রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের জন্য নৈশভোজের আমন্ত্রণও রক্ষা করতে আসেননি নীতীশ কুমার। যার ফলে তাঁর সঙ্গে এনডিএ-এর দুরত্ব ক্রমেই বাড়তে থাকে।