সাঁঝোয়ান সেনা ক্যাম্পে অভিযানের তীব্রতা বাড়াল সেনা, নিহত চতুর্থ জঙ্গি, শহিদ ৬
জম্মু সাঁঝোয়ান সেনা ক্য়াম্পে জঙ্গি হামলায় চতুর্থ জঙ্গিকে মারতে সমর্থ হল সেনাবাহিনী। জঙ্গি হামলায় মোট মৃতের সংখ্যা ৬ হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। মোট ৫ জন জওয়ান শহিদ হয়েছেন। এর তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে।
জম্মু সাঁঝোয়ান সেনা ক্য়াম্পে জঙ্গি হামলায় চতুর্থ জঙ্গিকে মারতে সমর্থ হল সেনাবাহিনী। তবে, এখনই অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করতে রাজি নয় তারা। শনিবার ভোররাতে জঙ্গিরা ক্যাম্পে ঢুকে পড়ে হামলা চালায়। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সেনাবাহিনীর অনুমান হামলাকারীরা দলে ৪ জন ছিল। তাই হিসেব মতো অভিযান শেষ হয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু, বিশাল সেনা ক্যাম্পে আর কোন জঙ্গি আত্মগোপন করে আছে কি না ভালোমতো খতিয়ে দেখছে সেনা।
জঙ্গি হামলায় মোট মৃতের সংখ্যা ৬ হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। মোট ৫ জন জওয়ান শহিদ হয়েছেন। এর তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়াও মৃত্যু হয়েছে আরও এক নাগরিকের। যে সব জওয়ানরা শহিদ হয়েছেন তাঁদের নাম- মদন লাল চৌধুরী, মহম্মদ আসরাফ মীর, হাবিলদার হাবিবুল্লা কুরেশি, নায়েক মঞ্জুর আহমেদ, লেফটেন্যান্ট নায়েক মহম্মদ ইকবাল। এছাড়াও জঙ্গিদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে লেফটেন্যান্ট মহম্মদ ইকবালের বাবার।
Operation is still underway. I think it is not right to comment on it while the operation is on. I am sure that our jawans, who are in the operation, will successfully conclude it: Home Minister Rajnath Singh #SunjwanArmyCamp pic.twitter.com/HLy8hHwn34
— ANI (@ANI) February 11, 2018
শনিবার সেনাবাহিনী ও জঙ্গিদের মধ্যে দিনভর গুলির লড়াই-এর পর রাতের অন্ধকারে গুলির আওয়াজ অতটা শোনা যায় নি। কিন্তু ভোরের আলো ফুটতেই আস্তে আস্তে অভিযানের তীব্রতা বাড়ায় সেনাবাহিনী। এই অভিযানের তীব্রতায় নিহত হয় চতুর্থ জঙ্গি। শনিবার দুপুর থেকে জঙ্গি নিধন অভিযানের নেতৃত্ব হাতে তুলে নেয় স্পেশাল ফোর্স। এর পিছনে ছিলেন সেনা জওয়ানরা। সেনা ক্যাম্পের চারিদিকে নিরাপত্তা প্রবলভাবে কঠোর করা হয়। আকাশে সমানে চক্কর কেটেছ সশস্ত্র হেলিকপ্টার। সাঁঝোয়ান সেনা ক্যাম্পের অন্তত আড়াই শ'গজের মধ্যে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। বাইরের রাস্তায় নামানো হয় ট্যাঙ্ক।
Kathua: Family of JCO Madan Chaudhary (who lost his life in #SunjwanAttack) in mourning. #JammuAndKashmir pic.twitter.com/O3xAQLsGZi
— ANI (@ANI) February 11, 2018
ভোররাতে সেনা ক্যাম্পের মধ্যে ঢুকে পড়া জঙ্গিদের গুলিতে দুই জওয়ান শহিদ হন। এঁরা হলেন হানি লেফটেন্যান্ট মদনলাল চৌধুরী এবং হাবিলদার হাবিবুল্লা কুরেশি। মদনলাল চৌধুরীর বাড়ি কাঠুয়ায়। কুরেশি কুপওয়ারার বাসিন্দা। এছাড়াও ৯ জন জখম হন। এঁদের মধ্যে পাঁচজন মহিলা এবং বাকিরা শিশু। ২ জন জখমের অবস্থা আশঙ্কা জনক বলেও জানায় সেনাবাহিনী। বাকিদের আঘাত গুরুতর নয়। জঙ্গিরা যে সেনা কোয়ার্টারে আত্মগোপন করে ছিল তা ফাঁকা বলেই জানা গিয়েছে। তবে, এর আশপাশে থাকা ১৫০টি কোয়ার্টার থেকে মহিলা ও শিশুদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
Family of Parveen Akhtar, a resident of Lehran, who died in shelling by Pakistan in Nowshera sector of Rajouri last night, in mourning. #JammuAndKashmir pic.twitter.com/JA0TMX66hp
— ANI (@ANI) February 11, 2018
জঙ্গিরা যে হামলা করতে পারে সপ্তাহখানেক আগেই সে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল। আর এই সতর্কবার্তা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। কাশ্মীর ও জম্মুর সমস্ত সেনা ক্যাম্পগুলিকে সতর্ক করেছিল তারা। এই সতর্কবার্তায় বলেই দেওয়া হয়েছিল উরি এবং পাঠানকোটের ধাঁচে ফের জঙ্গি হামলা হতে পারে কাশ্মীর ও জম্মুর সেনা ক্যাম্পে।
৯ ফেব্রুয়ারি আফজল গুরুর ফাঁসির বর্ষপূর্তি ছিল। তাই সতর্কবার্তায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা নাকি এমনও বলেছিলেন যে জইশ-মহম্মদ-এর আফজল গুরু স্কোয়াড এই আক্রমণ শানাতে পারে। গোয়েন্দাদের এই সতর্কবার্তাকে কিছুটা হলেও মান্যতা দিয়েছিল সপ্তাহখানেক আগে প্রকাশ্যে আসা জইশ-ই-মহম্মদ-এর প্রধান মাসুদ আজাহারের প্রকাশিত বারো মিনিটের একটি ভিডিও। জম্মু-কাশ্মীরে হামলার জন্য মাসুদ আজাহারকেও নির্দেশ দিতে দেখা গিয়েছিল ওই ভিডিও-তে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা শুধু তাঁদের সতর্কবার্তায় নিরাপত্তা কড়া করারই পরামর্শ দেয়নি, সেইসঙ্গে ২৪ ঘণ্টা কঠোর নজরদারির কথাও বলেছিল। তার সত্ত্বেও কী ভাবে ক্যাম্পের মধ্যে জঙ্গিরা ঢুকে পড়তে সমর্থ হল তা নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করে দিয়েছে সেনাবাহিনী। এক্ষেত্রে নিরাপত্তার কোনও গাফিলতি ছিল কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্থানীয় মানুষের কোনও সাহায্য এক্ষেত্রে ছিল কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সাঁঝোয়ান সেনা ক্যাম্পে জঙ্গি হামলায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের কোনও যোগ আছে কি না তদন্তে তাঁর স্ক্যানারে ফেলা হচ্ছে। ভারতবর্ষে এই মুহূর্তে ৪০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম বসবাস করছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক, অন্তত ৭ হাজার, রোহিঙ্গা মুসলিম রয়েছে জম্মুতে। জম্মু ও কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা করাতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের দুঃখ-দুর্দশাকেও হাতিয়ার করেছে করেছে জইশ-ই-মহম্মদ। তাদের নেতা মাসুদ আজাহার সম্প্রতি তাঁর প্রকাশিত ভিডিও বার্তাতেও রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য জঙ্গি হামলার ডাক দেয়।
এদিকে, সাঁঝোয়ান থেকে বের হওয়া সমস্ত রাস্তায় বসানো হয়েছে চেক-পোস্ট। যার দায়িত্বে আছে জম্মু পুলিশ। এমনকী, পঞ্জাবে ঢোকার সমস্ত রাস্তায় চলছে খানা তল্লাশি। শনিবার সন্ধ্যার দিকে ২ জঙ্গিকে মেরে ফেলতে সমর্থ হয় সেনাবাহিনী। এই ২ জঙ্গি পালানোর চেষ্টা করছিল বলে জানা গিয়েছে। নিহত জঙ্গিদের কাছে থেকে একে ফিফটি সিক্স থেকে শুরু করে অসংখ্য হ্যান্ড গ্রেনেড, গোলা-বারুদ উদ্ধার হয়েছে। এছাড়াও মিলেছে বেশকিছু কাগজপত্র এবং জইশ-মহম্মদ জঙ্গি গোষ্ঠীর ফ্ল্য়াগ। জঙ্গিদের পরনে ভারতীয় সেনা বাহিনীর পোশাক ছিল বলেও জানা গিয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও জঙ্গি গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।