কে সেরা, সোনিয়া-মনমোহন নিয়ে অকপট প্রণব, বাক্যবাণে বিঁধলেন কাকে
শতাব্দী প্রাচীন কংগ্রেসকে নিয়ে আগের মতোই প্রত্যয়ী প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। একটা সময় কংগ্রেসের ক্রাইসিস ম্যানেজার হিসেবে তিনি নিজেকে তুলে ধরেছিলেন। সেদিনের কথায় এখনও স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েন প্রণব।
আজও তাঁর অন্তরের অন্তঃস্থলে জায়গা অমলিন জাতীয় কংগ্রেসের। হৃদয় চিরলে হয়তো দেখা যাবে হাত চিহ্নের ছাপও। ভারতের সদ্য প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মন আজও কেঁদে ওঠে কংগ্রেসের জন্যে। তাই তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, 'আবার ফিরে আসবে কংগ্রেস। কংগ্রেসকে বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়া ঠিক নয়।' এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, '২০০৪ সালে সোনিয়া গান্ধীর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করা উচিত ছিল। তাহলে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়ত দেশে।'
শতাব্দী প্রাচীন কংগ্রেসকে নিয়ে আগের মতো এখনও একইরকম প্রত্যয়ী শোনাল প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির কথা। একটা সময় কংগ্রেসের ক্রাইসিস ম্যানেজার হিসেবে তিনি নিজেকে তুলে ধরেছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী থেকে শুরু করে হাল আমলে সোনিয়া গান্ধী- এক বাক্যে সমস্যায় পড়লে তাঁর স্মরণ নিতেন। যাবতীয় বিপদভঞ্জন করে দলকে আবার চাঙ্গা করতে তিনি ছিলেন ওস্তাদ।
কিন্তু সেসব এখন অতীত। এখন রাজনীতির আঙিনা ও সংসদীয় ক্ষেত্র ছেড়ে তিনি প্রবেশ করেছেন অন্য জগতে। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর আর কেউই সক্রিয় রাজনীতিতে নামতে পারেন না। কিন্তু মনের ভিতরে যাঁর নাম লেখা রয়েছে, তা কি মুছে ফেলা যায়! সেই হৃদয়ের ভাবাবেগেই অকপট হলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অবসর নেওয়ার দিন সংসদ ত্যাগ করার মুহূর্তে যেভাবে স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়, আজও তিনি একইরকম স্মৃতিরোমন্থনে ভোগেন। তাই তো আজও তাঁর বুকে বাজে ফেলে আসা সে সব দিনের কথা। তাই তো তিনি অবলীলায় বলে চলেন ইন্দিরা-রাজীব, সোনিয়া ও মনমোহনের সঙ্গে তাঁর রসায়নের কথা।
সম্প্রতি এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে মুখোমুখি হয়েছিলেন ভারতের এই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। তিনি সেই অনুষ্ঠানে স্মৃতির দুয়ার খুলে পাড়ি দিয়েছিলেন পুরনো দিনে। বর্তমান সময়ের নোটবাতিল থেকে শুরু করে জিএসটি নিয়েও প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। অকপটেই তিনি বলে যান বহু না বলা কথা। অবসর নেওয়ার পর এই প্রথম। তাঁর অতীত, বর্তমান, এমনকী ভবিষ্যৎ নিয়েও কত কথা বলে গেলেন তিনি।
প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেন, '২০০৪ সালে দেশের মানুষ সোনিয়া গান্ধীর পক্ষেই রায় দিয়েছিল। তিনি দেশের প্রশানমন্ত্রীর দায়িত্ব অবলীলায় ছেড়ে দিয়েছিলেন। এটা তাঁর মহানুভবতার পরিচয়।' কিন্তু এর পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, 'সোনিয়া গান্ধী সেদিন প্রধানমন্ত্রী হলেই ভালো করতেন। সেদিন অন্তরাত্মার ডাকে সাড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার হেলায় ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি যদি সেদিন প্রধানমন্ত্রী হতেন, দেশজুড়ে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বাড়ত।'
তিনি কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন, '২০০৪ সালে ইউপিএ জয়ী হয়ে জোট সরকার গঠন করে। সেই সরকারে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য দেশজুড়ে কংগ্রেস কর্মীরা আন্দোলনে নেমেছিলেন। সেবার ভোটে জনাদেশ গিয়েছিল সোনিয়া গান্ধীর পক্ষেই। তিনি দায়িত্ব নিলে অনেক ভালো হত, তাঁর পক্ষে, তাঁর দলের পক্ষে।'
এ প্রসঙ্গে মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে তাঁর অলিখিত লড়াই নিয়েও অকপট প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। তিনি নিজের দুর্বলতা নিয়েও কোনও রাখঢাক করলেন না। সটান বলেই দিলেন, 'রাজনৈতিক জীবনের একটা দীর্ঘ সময় আমি রাজ্যসভার সাংসদ ছিলাম। রাজনৈতিক জীবনের একেবারে শেষের দিকে আমি লোকসভার সাংসদ হই। তারপর আমি ভালো হিন্দি জানি না, ভালো হিন্দি না জানলে দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়া যায় না। সেই কারণে মনমোহনের প্রতি সোনিয়া গান্ধীর আস্থার যুক্তিসঙ্গত কারণ ছিল বলে তিনি মনে করেন। প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার পাশাপাশি তাঁর অর্থনৈতিক প্রজ্ঞাও তাঁকে যোগ্যতম ব্যক্তি করে তুলেছিল প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে।' এমনকী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে কাজ করতেও তাঁর কোনও সমস্যা হয়নি কোনওদিন। তাও জানালেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।
২০১৪ সালে লোকসভায় কংগ্রেসের হারের জন্য তিনি দায়ী করেছেন কিছু ভুলকে। তাঁর কথায়, 'ভাবনা থেকে শুরু করে অঙ্ক অনেক কিছুতেই ভুল ছিল কংগ্রেসের। প্রথম দু-দফার মতোর কোয়ালিশন গড়ে ওঠেনি তৃতীয় দফায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেরিয়ে গিয়েছিলেন জোট ছেড়ে। সেটা একটা বড় ধাক্কা ছিল। কেননা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন ইউপিএ-র বড় ভরসা। তারপর কংগ্রেস বিভিন্ন কারণে ক্ষয়িষ্ণুও হয়েছিল দেশজুড়ে। তাই ২০০ আসন পাওয়ার যে অঙ্ক কষা হয়েছিল, তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।' তবু তিনি বিশ্বাস করেন, কংগ্রেস ঠিকই ফিরে আসবে। সঠিক সময়েই সঠিক দিশায় প্রত্যাবর্তন ঘটবে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের।'