পাঁচ নেতা কোভিড পজিটিভ, রাহুল গান্ধীর হস্তক্ষেপে আপাতত স্থগিত কর্নাটকে কংগ্রেসের পদযাত্রা
রাহুল গান্ধীর হস্তক্ষেপে আপাতত স্থগিত কর্নাটকে কংগ্রেসের পদযাত্রা
করোনা বিধি কার্যত শিকেয় তুলে কর্নাটকে শুরু হয়েছিল কংগ্রেসের ১০ দিন ব্যাপী মেকেদাতু পদযাত্রা। কিন্তু প্রকৃতি বাঁচানোর এই পদযাত্রা মাঝপথেই থামাতে হয় কংগ্রেসকে। কারণ দলের পাঁচজন নেতা করোনায় আক্রান্ত হন। সূত্রের খবর, দলের শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধীর ফোন আসার পরই এই পদযাত্রা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে রাজ্যের কংগ্রেস দল।
পদযাত্রা প্রত্যাহার কংগ্রেসের
রাজ্যে করোনা কেস বৃদ্ধির মধ্যেই বিতর্কিত পদযাত্রা কোভিড বিধি লঙ্ঘন করার জন্য ৬০ জনের বেশি কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয় পদযাত্রার পঞ্চম দিনেই। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধী দলনেতা সিদ্ধারামাইয়া সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা গত পাঁচদিনে সফলতা পেয়েছি। আমাদের বেঙ্গালুরুতেই হয়ত পদযাত্রা সমাপ্ত করতে হবে। কারণ করোনার তৃতীয় ওয়েভের কারণে এই পদযাত্রা এখনকার মতো পিছিয়ে দেওয়া হল।' তবে ওমিক্রন-চালিত করোনা সংক্রমণের মধ্যেও প্রচার চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সিদ্ধারামাইয়া এও জানিয়েছেন যে এই পদযাত্রার পরিকল্পনা দু'মাস আগে থেকে করা হয়েছিল।
মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি কংগ্রেসকে
বৃহস্পতিবারই কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই সিদ্ধারামাইয়া ও রাজ্য কংগ্রেসের প্রধান ডিকে শিবকুমারকে চিঠি লিখে এই পদযাত্রা প্রত্যাহার করার জন্য আর্জি জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, কাবেরী নদীর ওপর হওয়া মেকেদাতু বাঁধ প্রকল্প বন্ধ করার জন্য এই পদযাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল। বোম্মাই চিঠিতে আশ্বস্ত করেন যে এই প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা চলছে।
করোনায় আক্রান্ত কংগ্রেসের দুই শীর্ষস্থানীয় নেতা
কর্নাটক থেকে শুরু হওয়া কংগ্রেস কর্মীদের বিশাল পদযাত্রার ভয়াবহ ভিড়ের চিত্র দেখে অনেকেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন এই করোনা পরিস্থিতিতে। এই পদযাত্রার ফলে রাজ্যে বুধবার সন্ধ্যায় কোভিড কেস ৪৪ শতাংশ লাফিয়ে বেড়ে যায় এবং রিপোর্ট হয় ২১ হাজারের বেশি করোনা কেসের। পদযাত্রার নেতৃত্বে থাকা কংগ্রেসের দুই শীর্ষস্থানীয় নেতা বীরাপ্পা মৌলি ও মল্লিকার্জুন খার্গে ইতিমধ্যেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং পদযাত্রার সময় এঁরা দু'জন শিবকুমার ও সিদ্ধারামাইয়ার সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন।
পদযাত্রা ফের শুরু করা হবে
'সুপার-স্প্রেডার' পদযাত্রা নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ার পর বৃহস্পতিবার সকালেই স্থানীয় কংগ্রেস নেতাদের নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন শিবকুমার। তিনি বলেন, 'পাঁচদিনের জন্য পদযাত্রা যখন শুরু করেছিলাম তখন কেউ আইসিইউতে ভর্তি হননি। আমাদের নাগরিকদের সুস্বাস্থ্যের কথা ভেবে আমরা পদযাত্রা প্রত্যাহার করছি।' তবে তিনি আশ্বস্ত করেছেন যে দল এখনই এই পদযাত্রা বন্ধ করবে না। শিবকুমার বলেন, 'যেখানে এই পদযাত্রা শেষ হবে সেখান থেকেই আমরা আবার তা শুরু করব। এটা শুধুমাত্র সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ। আমরা হাইকোর্টের নির্দেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের বিষয়টিতে সম্মান জানিয়ে এটা করছি।'
প্রকৃতি বাঁচানোর লক্ষ্য নিয়ে পদযাত্রা
কাবেরী নদীর তীর বরাবর প্রকৃতি বাঁচানোর বিশেষ প্রকল্প শুরু করার দাবিতে এই পদযাত্রা চালু করে কংগ্রেস। রাজ্যের বিজেপি সরকার তামিলনাড়ু সীমান্তের কাছে মেকেদাতু প্রকল্প বন্ধ করার উদ্দেশ্য নিয়ে এই পদযাত্রার সূচনা করে। যদিও তামিলনাড়ু আদালতে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলে যে কর্নাটকের পরিকল্পনা হল বাঁধ তৈরি করে বন্যার সময় জল সংরক্ষণ করা ও সেই জল ২০০ কিমি দূরে বেঙ্গালুরুকে দেওয়া। কংগ্রেস ঠিক করে যে ১৩৯ কিমি এই পদযাত্রা বেঙ্গালুরুতে গিয়ে সমাপ্ত করবে কিন্তু সেখানকার পুরনিগম তাদের শহরে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে।
এফআইআর দায়ের
১৪কিমি পদযাত্রায় কোভিড বিধি লঙ্ঘন ও অধিকাংশের মুখে মাস্ক না থাকায় ও সামাজিক দুরত্ব না মানায় বুধবার শিবকুমার ও সিদ্ধারামাইয়া সহ ৬৪ জন দলের নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়। প্রসঙ্গত, বুধবারই কর্নাটক হাইকোর্ট রাজ্যের বিজেপি সরকারকে প্রশ্ন করে যে কেন তারা কংগ্রেসকে পদযাত্রা করার অনুমতি দিয়েঠে এবং তা থামানোর জন্য কেন কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। শুধু তাই নয়, কর্নাটকের কংগ্রেস ইউনিটকেও প্রশ্ন করা হয় যে তারা পদযাত্রা করার জন্য কি অনুমতি নিয়েছিল এবং দল কি কোভিড বিধি মেনেছিল। তবে কর্নাটকে এই মুহূর্তে সারা দেশের মতোই করোনা বাড়ছে।