রাজ্যের প্রথম অক্সিজেন প্ল্যান্টের নির্মাণ বিশ বাঁও জলে, চরম অক্সিজেন সঙ্কটে ভুগছে মধ্যপ্রদেশ
রাজ্যের প্রথম অক্সিজেন প্ল্যান্টের নির্মাণ বিশ বাঁও জলে, চরম অক্সিজেন সঙ্কটে ভুগছে মধ্যপ্রদেশ
দেশজুড়ে করোনা ভাইরাসের লাগামছাড়া বৃদ্ধির মধ্যেই অক্সিজেনের সঙ্কট তীব্রভাবে দেখা দিয়েছে একাধিক রাজ্যে। দিল্লি, উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশও অক্সিজেনের ঘাটতির সমস্যায় ভুগছে। এ রাজ্যে নিজস্ব অক্সিজেন প্ল্যান্ট নেই। দ্বিতীয় করোনা ওয়েভের জেরে দৈনিক কেস ১৩ হাজারের ওপর, বাধ্য হয়ে রাজ্য সরকারকে গুরাত, ছত্তিশগড়, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র থেকে অক্সিজেন আমদানি করতে হচ্ছে। কোভিড রোগীদের এই তীব্র অক্সিজেনের চাহিদা কিছুটা হলেও হ্রাস পেত যদি মধ্যপ্রদেশের হোশাঙ্গাবাদে আইনক্স অক্সিজেন প্ল্যান্টটি সঠিক সময়ে গড়ে উঠত।
বিশ বাঁও জলে অক্সিজেন প্ল্যান্ট
উত্তরপ্রদেশের বেসরকারি সংস্থার ১৫০ কোটি টাকার বেসরকারি অক্সিজেন প্ল্যান্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে ছ'মাসের মধ্যে এই প্ল্যান্টটি কাজ করতে শুরু করবে এবং রাজ্যে কোনও অক্সিজেনের ঘাটতি হবে না। প্রতিদিন ১৫০ মেট্রিক টন তরল অক্সিজেন এবং ৫৪ মেট্রিক টন তরল নাইট্রোজেন উৎপাদন করার মতো সুবিধা গঠন করা হবে বলে সেই সময় জানানো হয়। কিন্তু বর্তমান দৃশ্য অন্যরকম, কোনও অক্সিজেন প্ল্যান্ট সেখানে এখনও গড়ে উঠতে পারেনি, শুধু ফাঁকা জমিতে পরে রয়েছে কিছু ধাতব পদার্থ, রড, বালি ও পাথরের স্তুপ। মধ্যপ্রদেশের জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন কমিশনার ছবি ভরদ্বাজ জানিয়েছেন রাজ্যে প্রতিদিন ৩৯০-৪০০ এমটি তরল অক্সিজেনের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, 'এটা প্রতিদিনের লড়াই। অক্সিজেনের চাহিদা অসম্ভব রকমভাবে বাড়ছে। মধ্যপ্রদেশে নিজস্ব অক্সিজেন প্ল্যান্ট নেই।' মঙ্গলবার গোটা রাজ্যজুড়ে ৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সোনার চেয়েও দামি এখন অক্সিজেন
ইন্দোরের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ঢুকে দেখা গেল পুরনো, ব্যবহৃত অক্সিজেন সিলিন্ডার দাঁড় করানো হয়েছে, চিকিৎসকরা অপেক্ষা করছে নতুন সরবরাহের। তবে কিছু চিকিৎসকরা এটিকে আরও যুক্তিযুক্তভাবে ব্যবহার করার একটি উপায় খুঁজে পেয়েছেন যাতে তাঁরা আরও রোগীদের চিকিৎসা করতে পারেন। ইন্দোরের শ্রী অরবন্দ হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ রবি দোশী কীভাবে অক্সিজেন নিরীক্ষণ করেছিলেন তার ব্যাখা দেন। দোশী বলেন, 'অক্সিজেন প্রাণ বাঁচায়। যার প্রয়োজন হয় তাকে না দিয়ে থাকা যায় না। আমরা তাই অক্সিজেন নিরীক্ষণের কড়া নীতি গ্রহণ করেছি। আমরা ১০ লিটার দিয়ে শুরু করি, যদি দেখী রোগী ভালো রয়েছেন, তবে তা কমিয়ে ৫ লিটার ও পরে তা ২ লিটার করে দিই। অপ্রয়োজনে যাতে অক্সিজেন নষ্ট না হয় সেদিকেও কড়া নজর রাখি আমরা।'
মঙ্গলবার একটি পর্যালোচনা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন যে ভারতে তরল অক্সিজেনের উৎপাদন ২০২০ সালের অগাস্টের ৫,৭০০ এমটি থেকে বাড়িয়ে তা ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিলে ৮,৯২২ এমটি করা হয়েছে। অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে দেশের একাধিক হাসপাতাল যখন রোগী ভর্তি করতে চাইছেন না সেই সময় প্রধানমন্ত্রীর এই বিবৃতি সামনে আসে।
কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল মার্চে
হোশাঙ্গাবাদের মোহাসা-বাবাই ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকায় অবস্থিত প্ল্যান্টের সামনে লাগানো আইনক্স হোর্ডিংয়ের সামনে থাকা নিরাপত্তারক্ষী জানান এ বছরের মার্চ থেকেই কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। যদিও প্ল্যান্টের নির্মাণ ম্যানেজার সৌম্য বিশ্বাস জানিয়েছেন যে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। মধ্যপ্রদেশের ইন্ডাস্ট্রিয়াল কর্পোরেশনের ম্যানেজার রাকেশ তিওয়ারি জানান যে আইনক্স প্ল্যান্টটি বড় শিল্পের আওতায় রয়েছে এবং তাদের চুক্তি অনুসারে, উৎপাদন শুরু করতে কমপক্ষে ৩-৪ বছর সময় লাগবে। মুখ্যমন্ত্রীর ৬ মাসের প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে তিওয়ারি কোনও মন্তব্য না করলেও তিনি জানিয়েছেন যে এক একর জমি তৈরি করা হচ্ছে এর জন্য। তিনি বলেন, 'এই প্লান্টটি ১১ একর জমিতে জুড়ে নির্মাণ করা হচ্ছে, যার বিনিয়োগ ১৫০ কোটি টাকা। উৎপাদন শুরু হতে কিছুটা সময় লাগবে। এখনই সীমানা প্রাচীরটি শেষ করা দরকার, তারপর ভবনটি তৈরি করা হবে, এরপরে বিদেশি যন্ত্রগুলি আনা হবে। অতএব উৎপাদন হতে কিছুটা সময় লাগবে।' তিনি এও জানান যে নির্মাণ কাজ শেষ হতে দেড় বছরের মতো সময় লাগবে।
বড় শহরগুলির পরিস্থিতি
উৎপাদন থেকে বহু ক্রোশ দূরে এখন প্ল্যান্ট, কিন্তু রাজ্যের বড় বড় শহরগুলি ইতিমধ্যেই অক্সিজেনের যোগান নিয়ে সংঘর্ষ করে চলেছেন। ভোপালের অক্সিজেনের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম কালেক্টর রাজেশ গুপ্তা মার্চ মাসে জানিয়েছিলেন যে শহরে দৈনিক অক্সিজেন প্রয়োজন ২৫-৩০ এমটি, যা এখন দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ এমটি। ভোপালের মতোই ইন্দোর, দেওয়াস, গুনা, হোশাঙ্গাবাদ, ধর, উজ্জ্বয়িনি সহ বড় বড় শহরগুলি অক্সিজেন সঙ্কটে ভুগছে। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য বুলেটিনের খবর অনুযায়ী, ইন্দোর ও ভোপালে রাজ্যের ৩৪ শতাংশের বেশি কোভিড মৃত্যু হয়েছে।