বাইশ প্রশ্নের প্রথম দুই-এ রাজীব কুমারকে চেপে ধরল সিবিআই, রবিবার ফের ১১টা থেকে জেরা
৮ ঘণ্টা। ২ প্রশ্ন। এই নিয়েই রাজীব কুমারের কথার জাগলারি চালিয়ে গেল সিবিআই। শিলঙে সিবিআই দফতরে রাজীব জেরায় এমন তথ্যই সূত্র মারফত সামনে এসেছে।
৮ ঘণ্টা। ২ প্রশ্ন। এই নিয়েই রাজীব কুমারের কথার জাগলারি চালিয়ে গেল সিবিআই। শিলঙে সিবিআই দফতরে রাজীব জেরায় এমন তথ্যই সূত্র মারফত সামনে এসেছে। সিবিআই বনাম দুঁদে আইপিএস রাজীব কুমারের এই জেরার টক্কর নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই। কারণ একদিকে যদি সিবিআই অফসাররা হব বাঘা তেঁতুল, তাহলে উল্টোদিকে এক চূড়ান্ত চতুর ও বুদ্ধিমান আইপিএস। যিনি কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান। যার কাজ ছিল যে কোনও জায়গা থেকে ক্লু সংগ্রহ করে এসটিএফ-এর অভিযানকে সফল করা। স্বভাবতই জেরায় যে কথার মারপ্য়াঁচের লড়াই যে জমবে তাতে সন্দেহ ছিল না। কার্যক্ষেত্রে দেখাও গেল যে চিটফান্ড নিয়ে রাজীব কুমার-কে জেরার পর সিবিআই অফিসারদের মুখে হাসি নেই। রাজীব কুমার দীর্ঘ ৮ ঘণ্টার জেরায় যা জবাব দিয়েছেন তাতে সিবিআই খুশি নয়।
এদিন এই দীর্ঘ সময়ের জেরায় মূলত দুইটি প্রশ্নেই নাকি বারবার ঘুরে এসেছে। একটি প্রশ্ন হল কাশ্মীর থেকে সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়দের জেরা করার পর যে ল্যাপটপ, পেন ড্রাইভ ও কাগজপত্র পাওয়া গিয়েছিল তার ফরেনসিক রিপোর্ট কেন নেই। আর দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছিল সারদাকাণ্ডে যে সব প্রভাবশালী জডিত ছিল তাঁদের প্রথমে গ্রেফতার করা হল না কেন?
শনিবার সোয়া এগারোটা নাগাদ জেরা শুরু হতেই রাজীব কুমারকে ফরেনসিক রিপোর্ট নিয়ে চেপে ধরেছিলেন সিবিআই অফিসাররা। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা নাকি জেরার মাঝে রাজীব কুমারকে জানিয়ে দেয় যে কোথাও একটি কন্টিনিউয়েশন ব্রেক হচ্ছে। এমন কিছু মিসিং লিংক তৈরি হচ্ছে যার জবাব পাওয়া যাচ্ছে না। রাজীব কুমার নাকি বোঝানোর চেষ্টা করে যান কোনও মিসিং লিংক নেই। তিনি তাঁর মতো করে যুক্তি সাজিয়ে উত্তর দিতে থাকেন। যুক্তির ভাঁজে ভাঁজে একটা কথা পিঠেআর একটি কথা নাকি চাপিয়ে দিয়ে উত্তর দিয়ে গিয়েছেন রাজীব কুমার। কলকাতার পুলিশ কমিশনারে উত্তরে একটা সময় সিবিআই অফিসাররা বিরক্তও প্রকাশ করেন। সোয়া এগারোটা থেকে মধ্যাহ্নভোজ পর্যন্ত রাজীব কুমারকে জেরা করছিলেন ছয় সিবিআই অফিসার। এরা একেক সময়ে একেক অ্যাঙ্গেল থেকে ফরেনসিক রিপোর্ট নিয়ে রাজীব কুমারকে প্রশ্ন করতে থাকেন। কিন্তু, রাজীব কুমার যে উত্তর দিয়েছেন তাতে নাকি জবাবে খুব একটা হেরফের পাওয়া যায়নি।
সারদাকাণ্ডে আটক ল্যাপটপ, পেন ড্রাইভ, হার্ড ডিস্ক এবং বেশকিছু কাগজ পত্রের ফরেনসিক রিপোর্ট না থাকা নিয়ে একাধিক স্থানে তদন্তে সিবিআই মিসিং লিংক খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু, এদিন রাজীব কুমারের কাছ থেকে এমন কোনও উত্তর বের কাই যায়নি। এমনকী মধ্যাহ্নভোজের দ্বিতীয়ার্ধে যখন প্রভাবশালী তত্ত্ব নিয়ে জেরা শুরু হয় তখনও রাজীব কুমারকে বিচলিত করা যায়নি বলেই সূত্রের খবর। রাজীব কুমার নিজের মতো করে প্রতিটি উত্তর দিয়ে গিয়েছেন।
সারদা চিটফান্ড কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত সুদীপ্ত সেন সিবিআই-কে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। এই চিঠিতে এমন কিছু তথ্য-প্রমাণের উল্লেখ সুদীপ্ত সেন করেছিলেন যা হাতে পেলে সিবিআই তদন্তে একটা সদর্থক দিশা পেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এই চিঠিতে সুদীপ্ত সেন দাবি করেছিলেন যে তাঁর কাছে থাকা কিছু কাগজপত্র, ল্য়াপটপ, হার্ড ডিস্ক ও পেন ড্রাইভ বিধাননগর থানা আটক করেছিল। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের তৎকালীন কমিশনার রাজীব কুমারের উপস্থিতিতে এগুলি জমা করা হয়েছিল। এদিনের জেরা সিবিআই অফিসাররা এই চিঠিপ বিভিন্ন অংশ ধরে ধরে রাজীব কুমারকে জেরা করেন।
সিবিআই আপাতত ৩ দিন ধরে রাজীব কুমারকে জেরা করার পরিকল্পনা নিয়েছে। যার জন্য রবিবার বেলা ১১টায় ফের তাঁকে শিলঙের অকল্যান্ড মোড়ে সিবিআই দফতরে হাজিরা দিতে হবে। এদিন জেরা শেষ হতেই সিবিআই দফতরে পৌঁছে যান রাজীব কুমারের তিন সঙ্গী- আইপিএস জাভেদ শামিম ও মুরলিধর শর্মা এবং আইনজীবী বিশ্বরূপ দেব। সিবিআই দফতরের চৌহদ্দি থেকেই গাড়িতে উঠে ত্রিপুরা ক্যাসেল অতিথিশালার উদ্দেশে বেরিয়ে যান রাজীব ও তাঁর দুই সহযোগী। পরে রাজীব কুমারের আইনজীবী বিশ্বরূপ দেব জানান, 'সিবিআই-এর সঙ্গে সহযোগিতা করছেন রাজীব কুমার। সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে তা মেনেই রাজীব সিবিআই-এর জেরার মুখোমুখি হয়েছেন। তাই দীর্ঘ ৮ ঘণ্টা জেরার পরও রাজীব রবিবার জেরায় বসতে আপত্তি জানাননি।'