প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেড নিয়ে জেনে নিন কিছু অজানা, আকর্ষণীয় তথ্য
প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেড নিয়ে জেনে নিন কিছু অজানা, আকর্ষণীয় তথ্য
প্রত্যেক বছর দেশে ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন করা হয়। আর এই বছর ভারতে ৭৩তম প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করা হবে। বুধবার দেশজুড়ে পালিত হবে এই দিবস। তবে এ বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডের সময়ে বদল আনা হয়েছে। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর প্রজাতন্ত্র দিবস সকাল দশটার পরিবর্তে সাড়ে দশটা থেকে শুরু হবে কারণ দিল্লিতে সেই সময় কুয়াশা থাকার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
প্রজাতন্ত্র দিবসের তাৎপর্য
এদিন ভারতের রাষ্ট্রপতি দেশের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন। এই অনুষ্ঠানে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতি ও দেশের সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা প্রদর্শিত হবে। প্রসঙ্গত, ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতের সংবিধান প্রয়োগ করা হয়েছিল তাই প্রত্যেক বছর এই ঐতিহাসিক দিনটি পালন করা হয় দেশে।
কি হতে চলেছে ২৬ জানুয়ারির প্যারেডে
প্রজাতন্ত্র দিবসে জাতীয় পতাকা উড়তে দেখে প্রত্যেক ভারতীয়রাই গর্ব বোধ করেন। আপনি জানেন কি প্রত্যেক বছর ২৬ জানুয়ারির প্যারেড দেখার জন্য প্রায় ২ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়? কিন্তু গত বছর থেকে বিশ্বজুড়ে মারণ করোনা ভাইরাসের প্রকোপের ফলে ভারতে প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন কোনও প্রধান অতিথি আসেননি। এ বছরও কোভিড বিধি মেনেই এই দিনটি পালন করা হবে। এ বছর প্রজাতন্ত্র দিবসে ৫ থেকে ৮ হাজার জন প্যারেডে অংশ নেবে বলে জানা গিয়েছে।
এই প্যারেড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা নিশ্চিত করার জন্য, হাজার হাজার সেনা এবং আরও বেশ কিছু লোক এই প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে জড়িত। কুচকাওয়াজ আয়োজনের আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের উপর রয়েছে যা বিভিন্ন সংস্থা দ্বারা সহায়তা করে। তবে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে দর্শকের সংখ্যা, কুচকাওয়াজের আকার সহ অন্যান্য পার্শ্ব আকর্ষণে কাটছাঁট করা হয়েছে।
কতগুলি রাজ্য যোগ দিচ্ছে
২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে যোগ দেবে ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং ন'টি মন্ত্রক ও বিভাগ, তারা তাদের ট্যাবলোতে নিজেদের কাজের প্রদর্শন করবে। অরুণাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, ছত্তিশগড়, গোয়া, গুজরাত, কর্নাটক, মেঘালয়, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড অংশ নেবে। এ বছর বাংলার ট্যাবলো বাতিল করে দেওয়া হয়েছে প্যারেড থেকে।
২৬ জানুয়ারির প্যারেড সম্পর্কে জেনে নিন কিছু আকর্ষণীয় তথ্য
১) এটা আমরা সকলেই জানি যে ২৬ জানুয়ারির প্যারেড প্রত্যেক বছর দিল্লির রাজপথেই আয়োজন করা হয়ে থাকে। কিন্তু আপনাদের এটা জানা আছে কি যে ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেড রাজপথে আয়োজন করা হয়নি? এই বছরগুলিতে ২৬ জানুয়ারির প্যারেড করা হয়েছিল আরউইন স্টেডিয়াম (বর্তমানে যা ন্যাশনাল স্টেডিয়াম), কিংসওয়ে, লাল কেল্লা ও রামলীলা ময়দানে। ১৯৫৫ সাল থেকে রাজপথ স্থায়ী জায়গা হয়ে যায় প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডের জন্য। এই রাজপথই সেই সময় 'কিংসওয়ে' বলে পরিচিত ছিল।
২) প্রত্যেক বছর ২৬ জানুয়ারির প্যারেডে কোনও দেশের প্রধানমন্ত্রী/রাষ্ট্রপতি/বা শাসক প্রধান অতিথি হয়ে আসেন। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রথম প্যারেডে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট ডাঃ সুকর্ণো প্রধান অতিথি হিসাবে আমন্ত্রিত ছিলেন। ১৯৫৫ সালে রাজপথে আয়োজিত প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে পাকিস্তানের গর্ভনর-জেনারেল মালিক গুলাম মহম্মদকে প্রধান অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। ২০২০ সালে ৭১তম প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে প্রধান অতিথি হিসাবে আসেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর মেসিয়াজ বলসোনারো।
৩) ২৬ জানুয়ারির প্যারেড অনুষ্ঠান শুরু হয় দেশের রাষ্ট্রপতির আগমনের মধ্য দিয়ে। প্রথমে রাষ্ট্রপতির অশ্বারোহী দেহরক্ষীরা জাতীয় পতাকাকে অভিবাদন জানান এবং এই সময় জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয় এবং ২১টি গান স্যালুটও দেওয়া হয়। কিন্তু আপনি কি জানেন যে ২১টি কামান দিয়ে গুলি চালানো হয় না? পরিবর্তে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৭টি কামান, যা '২৫-পন্ডার্স' নামে পরিচিত, ৩ রাউন্ডে গুলি চালানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। মজার তথ্য হল, গান স্যালুট যখন দেওয়া হয় তখনই জাতীয় সঙ্গীত হয় এবং একই সঙ্গে এই দু'টি বিষয় চলে। জাতীয় সঙ্গীতের শুরুতে প্রথম গুলি চালানো হয় এবং ৫২ সেকেন্ড পরে শেষ গুলি চালানো হয়। প্রসঙ্গত, এই কামানগুলি ১৯৪১ সালে তৈরি করা হয়েছিল এবং সেনাবাহিনীর সমস্ত আনুষ্ঠানিক কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত।
৪) প্যারেডে অংশগ্রহণকারীরা ভোররাত ২টোর মধ্যে প্রস্তুত হয়ে যায় এবং ভোর ৩টের মধ্যে রাজপথে পৌঁছে যায়। অংশগ্রহণকারীদের প্রাথমিকভাবে প্যারেডে অংশ নেওয়ার কথা জানানোর পর এই প্যারেডের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় গত বছরের জুলাই থেকে। অগাস্ট পর্যন্ত, তারা তাদের সম্পর্কিত চত্ত্বরে কুচকাওয়াজ অনুশীলন করে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে দিল্লি পৌঁছায়। অংশগ্রহণকারীরা ২৬ জানুয়ারির প্যারেডে অংশ নেওয়ার আগে প্রায় ৬০০ ঘণ্টা অনুশীলন করে।
৫) ইন্ডিয়া গেট চত্বরের কাছে একটি বিশেষ শিবিরের আয়োজন করা হয়, যেখানে সমস্ত ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান এবং ভারতের সামরিক শক্তি দেখানো আধুনিক সরঞ্জামগুসি রাখা হয়। প্রতিটি কামানের জন্য তদন্ত প্রক্রিয়া এবং হোয়াইটওয়াশের কাজ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১০টি পর্যায়ে সঞ্চালিত হয় তবে এবার হয়তো ভিন্ন হবে।
৬) ২৬ জানুয়ারি কুচকাওয়াজের মহড়ার জন্য, প্রতিটি দল ১২ কিলোমিটার দূরত্ব কভার করে কিন্তু প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন তারা কেবল ৯ কিলোমিটার দূরত্ব কভার করে। বিচারকরা প্যারেডের পুরো পথ জুড়ে বসে থাকেন, যারা ২০০টি প্যারামিটারের ভিত্তিতে প্রতিটি অংশগ্রহণকারী দলকে বিচার করেন এবং এই রায়ের ভিত্তিতে, 'সেরা মার্চিং গ্রুপ' খেতাব প্রদান করা হয়।
৭) ২৬ জানুয়ারির প্যারেড ইভেন্টে সম্পাদিত শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি কার্যকলাপের প্রস্তুতি আগে থেকে শুরু হয়ে যায় । অতএব, ছোটখাটো ত্রুটি এবং কয়েক মিনিটের বিলম্ব আয়োজকদের ওপর ভারী প্রভাব ফেলতে পারে।
৮) এই ইভেন্টে প্যারেডে অংশ নেওয়া প্রত্যেক সেহাকর্মীকে ৪ স্তরের তদন্তের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এর পাশাপাশি তাঁদের অস্ত্রগুলিও পরীক্ষা করা হয়, যাতে তাঁদের অস্ত্রে কোনও ধরনের বুলেট বা কার্তুজ না থাকে।
৯) প্যারেডে যোগ দেওয়া ট্যাবলোগুলির গতি ঘণ্টায় ৫ কিমি থাকে, যাতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরা তা দেখতে পারেন। এটা শুনে খবু অবাক হবেন যে ট্যাবলোর চালকরা একটা ছোট জানলার মধ্য দিয়ে ট্যাবলোগুলিকে চালিয়ে নিয়ে যান। ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে যোগ দেবে ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং ন'টি মন্ত্রক ও বিভাগ, তারা তাদের ট্যাবলোতে নিজেদের কাজের প্রদর্শন করবে। অরুণাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, ছত্তিশগড়, গোয়া, গুজরাত, কর্নাটক, মেঘালয়, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড অংশ নেবে।
১০) এই প্যারেড অনুষ্ঠানে সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হল 'ফ্লাইপাস্ট'। এই ফ্লাইপাস্টের দায়িত্বে রয়েছে ওয়েস্টার্ন বায়ুসেনা কম্যান্ড, যেখান থেকে ৪১টি উড়ান অংশ নেবে। প্যারেডে অংশ নেওয়া এই বিমানগুলি বায়ুসেনার বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে উড়বে এবং রাজপথে নির্দিষ্ট সময়ে অবতরণ হবে।
১১) প্রত্যেক প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন প্যারেডের সময় মহাত্মা গান্ধীর প্রিয় গান 'অ্যাবাইড উইথ মি' চালানো হয়।
১২) প্যারেডে সেনাবাহিনীর সদস্যরা দেশীয় ইনসাস রাইফেল নিয়ে কুচকাওয়াজ মার্চে অংশ নিচ্ছেন, অন্যদিকে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মীরা ইসরায়েলে তৈরি টাভোর রাইফেল নিয়ে মার্চ করছেন। তবে এটা আলাদাও হতে পারে।
১৩) তথ্য জানার অধিকার থেকে জানা গিয়েছে যে ২০১৪ সালের প্যারেড থেকে প্রত্যেক বছর ২৬ জানুয়ারির প্যারেডে ৩২০ কোটি টাকা ব্যয় হয়। ২০০১ সালে এই খরচ ছিল ১৪৫ কোটি। ২০০১ থেকে ২০১৪ সালে প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডের এই ব্যয় বেড়েছে ৫৪.৫১ শতাংশ।