করোনায় সুস্থ হয়ে ওঠার পরও কী কী জটিলতা দেখা দিতে পারে শরীরে, জেনে নিন এখনই
করোনায় সুস্থ হয়ে ওঠার পরও কী কী জটিলতা দেখা দিতে পারে শরীরে, জেনে নিন এখনই
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার পরও শরীরে বেশ কিছু জটিলতা দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক–গবেষকরা। উদাহরণ স্বরূপ জানা গিয়েছে, ৫৬ বছরের এক চিকিৎসক যাঁর দু’মাস আগে কোভিড–১৯ ধরা পছিল এবং তাঁকে এখনও অক্সিজেন সাপোর্টে রাখা হয়েছে। তিনি অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
ফুসফুসে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব
এই হাসপাতালের পালমোনোলজি ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিভাগের শীর্ষ পরামর্শদাতা ডাঃ রাজেশ চাওলা এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন যে ওই রোগী জ্বর এবং সর্দি নিয়ে জুনের প্রথম সপ্তাহে হাসপাতালে আসেন এবং এরপর শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা শুরু হওয়ায় তাঁকে অক্সিজেনের সাপোর্ট দেওয়া প্রয়োজন ছিল। ডাঃ চাওলা বলেন, ‘তিনি গত গত দু'মাস ধরে আইসিইউতে রয়েছেন। ফুসফুসে ফাইব্রোসিস হ্রাস করার জন্য ওষুধের পাশাপাশি আমরা তাঁকে নিয়মিত উচ্চ প্রবাহের অক্সিজেন থেরাপি দিচ্ছি।'
সুস্থ হয়ে ওঠার পরও অক্সিজেনের সাপোর্ট দরকার হয়
স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতালের শীর্ষ চেস্ট বিশেষজ্ঞ ডাঃ অরূপ বাসু জানিয়েছেন যে কোভিড-১৯ ফুসফুসের ক্ষতি করে তা সকলেরই জানা। এমনকী এই মারণ রোগ থেকে সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরও তার প্রভাব রয়ে যায় ফুসফুসে। তিনি বলেন, ‘দাগ বা ঘন টিস্যুগুলির জন্য ফুসফুসের সঠিকভাবে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই রোগীকে বাঁচিয়ে রাখতে অক্সিজেনের সাপোর্ট প্রয়োজন হয়ে পড়ে।' তিনি আরও জানিয়েছেন যে এক ২২ বছরের রোগী কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠার একমাস পরও আইসিইউতে রয়েছেন এবং উচ্চ প্রবাহের অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে তাঁকে। চিকিৎসকদের আশঙ্কা, কোভিড-১৯ মহামারি হয়ত অধিকাংশ রোগীর ফুফুসকে পঙ্গু করে তোলে, চিকিৎসাতেও তা কোনওভাবে ঠিক করা যাচ্ছে না। ডাঃ বসু বলেন, ‘২০২০ সালে করোনা ভাইরাস মহামারির প্রকোপে গুরুতর তীব্র শ্বাস প্রশ্বাসের সিন্ড্রোম কেস দেখা দিতে শুরু করেছে। এই মারণ রোগ সেরে যাওয়ার পরও বহু রোগীই রিপোর্ট করছেন যে তাঁদের শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ২০০৯ সালে এইচ১এন১ মহামারির সময়ও ফুসফুস ক্ষতির সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তবে পরবর্তী তিন-চার মাসের মধ্যেই সেই সব রোগূ সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান।'
ফুসফুস ও মস্তিষ্কে বেশি প্রভাব ফেলে কোভিড–১৯
করোল বাগের ৬৪ বছরের এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে তাঁর কোভিড-১৯ ধরা পড়ে এবং এখনও তাঁকে শ্বাস নেওয়ার জন্য অক্সিজেন সাপোর্টের প্রয়োজন পড়ে। এমনকী তিনি শৌচালয়েও যেতে পারেন না ওটা ছাড়া। মেদান্ত ইনস্টিটিউট অফ ক্রিটিকাল কেয়ারের চেয়ারম্যান ডাঃ যতীন মেহতা জানান যে ফুসফুসের ফাইব্রোসিস কোভিডের পরের জটিল সমস্যা। তিনি বলেন, ‘দেখা গিয়েছে যে কোভিড-১৯-এর দীর্ঘ সময়ের প্রভাবের ফলে তা শরীরের অন্যান্য অঙ্গ, বিশেষকরে মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে।' কোভিড-১৯ শ্বাসযন্ত্রের পদ্ধতিকে প্রভাবিত করে বলে জানা যায়। তবে নতুন প্রমাণ থেকে উঠে আসছে যে কিছু ক্ষেত্রে মস্তিষ্কও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
ফুসফুস ও মস্তিষ্ককে একসঙ্গে ক্ষতি করতে শুরু করে
এইমস-এর নিউরোলজির অধ্যাপক ডক্টর কামেশ্বর প্রসাদ বলেছেন, ‘কোভিড-১৯ মস্তিস্ককে একাধিক উপায়ে প্রভাবিত করতে পারে। প্রথমে ভাইরাল সংক্রমণটি ফুসফুসের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে, যার জন্য দেহে অক্সিজেনের অভাব দেখা দিতে পারে। যদি মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন না পায় তবে এর প্রভাবে অজ্ঞানতা, বিভ্রান্তি এমনকি মৃত্যুর দিকেও চালিত করে। দ্বিতীয়ত, কোভিড-১৯-এর কারণে স্বাদ ও গন্ধ চলে যাচ্ছে, যার অর্থ হল এটি ঘ্রাণশক্তির স্নায়ুকে প্রভাবিত করে, যা মস্তিষ্কের সংক্ষিপ্ততম। সংক্রমণ সরাসরি এই রুট দিয়ে স্নায়বিক রোগ সৃষ্টি করে মস্তিষ্কে ভ্রমণ করতে পারে। তৃতীয়ত, কোভিড -১৯ সম্পর্কে তত্ত্বগুলি মস্তিষ্কে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে যা অনেক পরে ক্লিনিকাল লক্ষণগুলিতে প্রকাশ পায়।'
বারুইপুরে তুলকালাম, সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তীর উপর হামলা, স্পিকারকে ফোন মমতার