জ্বর কোভিড–১৯ এর প্রধান লক্ষণ নয়, ফস্কে যাচ্ছে অন্যান্য করোনা ভাইরাস কেস, দাবি এইমসের
করোনার প্রধান লক্ষণ হিসাবে জ্বরের ওপর বেশি জোর দেওয়ার জন্য বেশ কিছু কোভিড–১৯ কেস ফস্কে যেতে পারে বলে এক গবেষণায় জানিয়েছে ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ। প্রসঙ্গত দেশে করোনা ভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে। বিশ্ব তালিকায় তৃতীয় নম্বরে রয়েছে এই দেশ।
গবেষণা করা হয় কীভাবে
এই সমীক্ষা গবেষণা করা হয়েছে উত্তর ভারতের ১৪৪ জন হাসপাতালে ভর্তি নিশ্চিত কোভিড-১৯-এর রোগীর ওপর। যাঁরা প্রত্যেকেই দেশের শীর্ষ সরকারি হাসপাতাল এইমসে ভর্তি ছিলেন বলে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত করা হয়েছে দিল্লির এইমসের পক্ষ থেকে। এই গবেষণায় যোগ দিয়েছিলেন এইমসের ডিরেক্টর ডাঃ রনদীপ গুলেরিয়া সহ ২৯ জন লেখক। এই গবেষণার নাম দেওয়া হয় ‘লিনিকো-ডেমোগ্রাফিক প্রোফাইল উত্তর ভারত এলাকার হসপাতালে ভর্তি কোভিড-১৯ রোগীদের ফলাফল'। এই সমীক্ষাতে ২৩ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তির তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। ১৪৪ জন রোগীর মধ্যে ৯৩ শতাংশ (১৩৪) পুরুষ ও ১০ জন রোগী বিদেশি নাগরিক।
উপসর্গ যেগুলি দেখা দেয়
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ‘আমাদের রোগীদের মধ্যে ১৭ শতাংশের মধ্যে জ্বর দেখা গিয়েছিল, গোটা বিশ্বের অন্যান্য রিপোর্টের তুলনায় যা অনেকটাই কম। ব্যতিক্রম শুধু চিন। এখানে ৪৪ শতাংশ কোভিড রোগীর শরীরে জ্বর দেখা গিয়েছিল একটা সময়ের মধ্যে এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ৮৮ শতাংশের জ্বর কমে যায়। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ‘অধিকাংশ উপসর্গ রয়েছে রোগীদের সর্দি, গলায় ব্যাথা ও কাশি সহ হাল্কা শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয়, যেগুলি অন্যান্য সমীক্ষা থেকে পাওয়া রিপোর্টের চেয়ে আলাদা। রোগীদের উল্লেখযোগ্য অনুপাতে ৪৪ শতাংশ রোগী হাসপাতালে ভর্তির সময় উপসর্গহীন ছিলেন এবং হাসপাতালের বাকি দিনগুলোতেও পুরো সময় তাঁরা এভাবেই ছিলেন। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ‘এটা উদ্বেগের বিষয় যে উপসর্গহীন এইসব রোগীরা সংক্রমণের সম্ভাব্য বহনকারী এবং এদের থেকেই গোষ্ঠী সংক্রমণ হতে পারে।'
সমীক্ষায় উল্লেখ করেছে যে রোগীদের শীর্ষ বৈশিষ্ট্যগুলি হল, ‘অল্প বয়স, উপসর্গহীন ব্যক্তিদের উচ্চ অনুপাত, পিসিআর নেতিবাচকতার জন্য দীর্ঘ সময় এবং আইসিইউয়ের প্রয়োজন কম।'
জমায়েত, দেশীয় ভ্রমণ সংক্রমণের কারণ
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, যে কোনও জমায়েতে কোভিড-১৯ রোগীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা সবচেয়ে বেশি নথিভুক্ত হয়েছে, এর পাশাপাশি আক্রান্ত রাজ্যে সফরের ফলেও সংক্রমণ হতে পারে। সমীক্ষা অনুযায়ী, ‘আমাদের রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই গণ জমায়েতে অংশ নিয়েছিলেন, প্রধানত অধিকাংশ পুরুষরা, যেগুলি পরে কোভিড-১৯ হটস্পট হিসাবে চিহ্নিত হয় এবং সক্রিয় স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে রোগীদের সনাক্ত করা হয়।' এর মধ্যে কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা করছিলেন এমন দুই স্বাস্থ্য কর্মী রয়েছেন এবং একজন সরকারি আধিকারিক যিনি কাজের সময় খুব কাছে ছিলেন কোভিড-১৯ রোগীর। এই সমীক্ষাতে স্বাস্থ্য কর্মী ও আইন প্রনয়নের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ঝুঁকিকে তুলে ধরা হয়েছে।
বয়স, লিঙ্গ ও ধূমপানের সঙ্গে সম্পর্ক নেই
১৪৪ জন রোগীর মধ্যে ৪ জনের (২.৮ শতাংশ) গুরুতর কোভিড রোগী, অন্যদিকে বাকি ১৪০ জন (৯৭.২ শতাংশ) হাল্কা থেকে মাঝারি সংক্রমণ। ভর্তির সময় মাত্র ১৬ জন (১১.১ শতাংশ)-এর জ্বর ছিল। সমীক্ষায় ধরা পড়েছে যে এই মারণ রোগের সঙ্গে কোনওভাবেই বয়স, লিঙ্গ ও ধূমপান আসক্তি, টিএলসি (মোট ফুসফুসের ক্ষমতা) গ্রেডিং বা লিম্ফোপেনিয়ার সম্পর্ক নেই।
মৃত্যুর হার
সমীক্ষাতে মৃত্যুর হারও অনেক কম ছিল, যা ১.৪ শতাংশ। ১৪৪ জনের মধ্যে মাত্র দু'জনের মৃত্যু হয়। উভয় মৃত্যুর কারণই হল তাঁরা গুরুতরভাবে সংক্রমিত হয়ে পড়েছিল।
চিকিৎসা
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ‘বেশিরভাগ রোগীদেরই সহায়ক যত্ন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছিল এবং কেবল লক্ষণগত চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল।' ব্যবহৃত শীর্ষ ওষুধগুলির মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিহিস্টামাইনস, ভিটামিন সি এবং প্যারাসিটামল। এই অ্যান্টিবায়োটিক অ্যান্টিহিস্টামাইনস প্রেসক্রাইবড করা হয় ২৯ জন রোগীর ক্ষেত্রে, অন্যদিকে অ্যান্টি-ম্যালেরিয়া ড্রাগ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ২৭ জন রোগীকে দেওয়া হয় এবং ১১ জন রোগীকে অ্যান্টিহিস্টামাইনস ও হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন উভয় ওষুধই দেওয়া হয়।