প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন ঐতিহাসিক ট্র্যাক্টর র্যালি, রুট সহ একাধিক নির্দেশ দেখে নিন এক ঝলকে
প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন ঐতিহাসিক ট্র্যাক্টর র্যালি
কেন্দ্রের সঙ্গে বারংবার বৈঠকের পরও কোনও রফাসূত্র না মেলায় অবশেষে ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন কৃষকরা ট্র্যাক্টর র্যালি করার সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন শান্তিপূর্ণ ট্র্যাক্টর র্যালি করার জন্য কৃষক সংগঠন দিল্লি পুলিশের সঙ্গে একটি চুক্তিও করেছে। জানা গিয়েছে, এই র্যালি দিল্লির তিনটে সীমান্ত এলাকা থেকে হবে, সিংঘু, টিকরি ও গাজিপুর সীমান্ত থেকে। পুলিশ জানিয়েছে যে পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশ থেকে শত শত কৃষক এই ট্র্যাক্টর প্যারেডের জন্য দিল্লিতে এসে পৌঁছেছেন।
২৫০ কিমি দীর্ঘ ট্র্যাক্টর র্যালি
সরকারিভাবে জানা গিয়েছে, গাজিপুর সীমান্ত থেকে যে ট্র্যাক্টর র্যালি বেরোবে তা ৫০ কিমি লম্বা, সিংঘু সীমান্তের র্যালি ১০০ কিমি এবং টিকরি সীমান্তের র্যালি ১২৫ কিমি দীর্ঘ বলে জানা গিয়েছে। মোট ২৫০ কিমি দীর্ঘ হতে চলেছে এই ট্র্যাক্টর র্যালি। ভারতীয় কিষাণ সংগঠনের জাতীয় জনসংযোগ আধিকারিক ধর্মেন্দ্র মালিক জানান যে দিল্লির সীমান্ত ছাড়াও, গোটা ভারত জুড়ে কৃষকরা তাঁদের নিজ নিজ জেলাতে এই ট্র্যাক্টর র্যালি করবেন। তিনি বলেন, '২৫ লক্ষ ট্র্যাক্টর দিল্লিতে আসবে। কিছু কৃষক নেতা জানিয়েছিলেন যে ৬ জানুয়ারি ট্র্যাক্টর র্যালির মহড়ায় মাত্র ৬০ হাজার ট্র্যাক্টর অংশ নিয়েছিল, যেখান দেশে ৪০ লক্ষ নিবন্ধীকরণ ট্রষাক্টর রয়েছে। তবে এই র্যালিতে কৃষকরা তাঁদের শক্তি প্রদর্শন করবেন সরকারকে।' তবে কোনও বড় তারকা এই র্যালিতে যোগ দেবেন কিনা সেরকম কোনও খবর নেই। প্রত্যেক ট্র্যাক্টরে থাকছে জাতীয় পতাকা এবং র্যালিতে বাজানো হবে দেশভক্তি ও আঞ্চলিক গান।
বিকেইউ প্রধান রাকেশ টিকেত বলেন, 'গাজিপুরের ট্র্যাক্টর র্যালি অকসরধাম মন্দির পর্যন্ত যাবে এবং ফেরত আসবে। ট্র্যাক্টরের গতি সীমিত করে দেওয়া হয়েছে প্রতি ঘণ্টায় ১০ কিমি। এই প্যারেডে কোনও বহিরাগতরা থাকছেন না, শুধুমাত্র নথিভুক্ত ট্র্যাক্টররাই অংশ নেবেন।'
কৃষক সংগঠনগুলি নিজস্ব সুরক্ষা ব্যবস্থা
ট্র্যাক্টর র্যালি চলাকালীন সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্য কৃষক সংগঠনগুলি বেসরকারি এজেন্সির সুরক্ষা বাহিনী নিয়োগ করেছে। ১৫০ জন থেকে বাড়িয়ে স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী ৫০০ জন করেছে কৃষক বাহিনী। সিসি ক্যামেরাও ৮ থেকে বাড়িয়ে ২০ টি করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবীদের বিভিন্ন পদে মোতায়েন করা হয়েছে। র্যালি চলাকালীন কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিত করতে প্রতিটি প্রতিবাদকারী স্থানে একটি যুদ্ধকালীন রুম স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসক, নিরাপত্তা বাহিনী এবং সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার সহ ৪০ জনের সদস্য থাকবে প্রত্যেক রুমে। র্যালির রুটে ৪০টি অ্যাম্বুলেন্স থাকবে জরুরিকালীন স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য। আর এক কৃষক সংগঠনের নেতা জানিয়েছেন যে প্যারেড যাতে শান্তিপূর্ণভাবে হয় এবং কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ।আতে না ঘটে তার জন্য ৩ হাজার জন স্বেচ্ছাসেবী নিযোগ করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবীদের পরিচয় পত্র ও ব্যাজ দেওয়া হয়েছে।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসাররা এই প্রতিবাদে সামিল হবেন এবং সুরক্ষা ব্যবস্থাও খতিয়ে দেখবেন। ট্র্যাক্টরে যদি কোনও ত্রুটি হয় তবে তা দেখার জন মেকানিক্যাল টিমেরও বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
কৃষকদের প্রতিবাদ চিত্রিত করতে ট্যাবলো
প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন কৃষকদের প্রতিবাদ স্বরূপ এই ট্র্যাক্টর র্যালির পাশাপাশি দিল্লিজুড়ে ট্যাবলো বের করা হবে, যেখানে গ্রাম্য জীবন, কৃষি বিল নিয়ে কেন্দ্রের বিরোধিতায় কৃষকরা এবং তাঁদের এই সাহসকে সাধুবাদ জানানোর চিত্র তুলে ধরা হবে। কৃষকদের মুখপাত্র জিতেন্দ্র সিং জিতু বলেন, 'আরদাসের (প্রার্থনা) পর সকাল ১১টা থেকে এই র্যালি শুরু হবে।'
কৃষক সংগঠনের পক্ষ থেকে নির্দেশ
সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা (এসকেএম)-এর পক্ষ থেকে বলা হয়, 'ইতিহাসে কখনই প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন প্রজাতন্ত্রের নাগরিকরা এই প্রকৃতির প্যারেড কোনওদিন দেখেছেন। আমাদের দুর্দশার কথা দেশ ও বিশ্বকে জানাতে হবে। তিনটি কৃষক বিরোধী আইন সম্পর্কে আমাদের সত্য প্রকাশ করতে হবে। এই ঔতিহাসিক কুচকাওয়াজ যেন অক্ষত থাকে আমাদের সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।' এসকেএমের পক্ষ থেকে হেল্পলাইন নম্বরও দেওয়া হয়েছে যাতে কোনও সমস্যা হলে তা জানানো যায়।
এসকেএমের প্রস্তুতি প্যারেডের আগে
১) কুচকাওয়াজে ট্রলির প্রবেশ নিষিদ্ধ। ট্র্যাক্টর ও অন্য যান অংশ নিতে পারবে র্যালিতে। বিশেষ টেবিলক্স সহ ট্রলিকে ছাড় দেওয়া যেতে পারে।
২) ২৪ ঘণ্টার রেশন এবং জল কৃষকদের সঙ্গে রাখতে হবে। ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে যথাযথ বন্দোবস্ত কৃষকদেরই করতে হবে। আপনি যদি কোনও ট্র্যাফিক জ্যামে আটকে থাকেন তবে এটির প্রয়োজন হতে পারে।
৩) সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে যে প্রত্যেক ট্র্যাক্টর বা গাড়িতে কৃষক সংগঠনের পতাকার পাশাপাশি জাতীয় পতাকা থাকবে এবং কোনও রাজনৈতিক দলের পতাকা থাকবে না।
৪) কোনও অস্ত্র নিয়ে র্যালিতে আসা যাবে না। এমনকী কোনও লাঠিও নয় এবং উস্কানিমূলক বা নেতিবাচক স্লোগান রয়েছে এমন ব্যানার ব্যবহার করা চলবে না।
৫) যদি আপনিও এই প্যারেডে অংশ নিতে চান তবে ৮৪৪৮৩৮৫৫৫৬ নম্বরে মিস কল দিন।
যে যে নির্দেশ মেনে চলতে হবে এসকেএমের
১) কুচকাওয়াজের নেতৃত্বে কৃষক নেতাদের নিয়ে গাড়ি চলবে। কোনও গাড়ি / ট্র্যাক্টর সেই গাড়িটিকে ছাড়িয়ে যাবে না। সবুজ জ্যাকেট পরিহিত স্বেচ্ছাসেবীদের নির্দেশাবলী অনুসরণ করতে হবে।
২) প্যারেডের রুট পূর্ব-নির্ধারিত এবং চিহ্নিত। পুলিশ ও ট্রাফিকের কর্মীরা গাইড করবে। রুট থেকে বিচ্যুত যে কোনও গাড়ি / ট্র্যাক্টর পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৩) এসকেএম সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে কোনও গাড়ি / ট্র্যাক্টর যদি কোনও কারণ ছাড়াই কোনও জায়গা আটকে / দখল করে, সেই গাড়ি / ট্র্যাক্টর স্বেচ্ছাসেবীদের দ্বারা অপসারণ করা হবে। কুচকাওয়াজের সমস্ত গাড়ি / ট্র্যাক্টর কুচকাওয়াজ শেষ করে প্রারম্ভিক পয়েন্টে ফিরে আসবে।
৪) একটা ট্র্যাক্টরে চালক সহ ৫ জনের বেশি থাকতে পারবে না। কেউ ট্র্যাক্টরের বনেট, বাম্পার বা ছাদে চড়তে পারবে না।
৫) সমস্ত ট্র্যাক্টরকে অবশ্যই একটি লাইনে এগিয়ে যেতে হবে এবং প্যারেড জুড়ে কোনও ওভারটেকিং হবে না। দয়া করে কুচকাওয়াজের নেতৃত্বদানকারী কৃষক নেতাদের যানবাহনটি অতিক্রম করবেন না।
৬) ট্র্যাক্টরে গান চলবে না। কোনও সমস্যা ছাড়াই যাতে সকলে প্যারেডে ঘোষণা শুনতে পান সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
৭) প্যারেডের আগে বা সেই সময় কোনও মাদকের ব্যবহার নিষিদ্ধ। মাদকদ্রব্য রাখা / সেবনকারী যে কেউ পাওয়া গিয়েছে তবে তা ট্র্যাফিক স্বেচ্ছাসেবককে জানানো হবে।
৮) দয়া করে মনে রাখবেন যে আমাদের উদ্দেশ্যটি নিষ্ঠার সঙ্গে প্যারেড পরিচালনা করা এবং আমাদের সহকর্মীদের মন জয় করা। পুলিশ সদস্যরাও আমাদের অংশ, আমাদের কোনও ঝগড়া-বিবাদ করা উচিত নয়। সমস্ত সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।
৯) জঞ্জাল রাস্তায় ফেলে প্যারেডের রুট দূষিত ও অপরিস্কার করবেন না। তার জন্য ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া যায় এমন ব্যাগ নিয়ে আসবেন।
আমরাই ছিলাম, আমরাই থাকব! পুরশুড়া থেকে দলত্যাগীদের বড় বার্তা মমতার