মহারাষ্ট্র উত্তাল কৃষকদের আন্দোলনে, মুম্বইয়ে মুখ্যমন্ত্রীর লিখিত আশ্বাসে উঠল বিক্ষোভ
চাষিদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয় সরকার। পরে মুখ্যমন্ত্রীর লিখিত আশ্বাসের পর বিক্ষোভে বিরতি টেনেছে কৃষকরা।
সম্পূর্ণ ঋণ মকুব, ফসলের ন্যায্য দাম, কৃষকদের জমি বিলি, প্রান্তিক চাষি ও ক্ষেতমজুরদের পেনশন সহ একাধিক দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে উত্তাল হয়ে রয়েছে মহারাষ্ট্র। নাসিক থেকে শুরু হয়ে বাম নেতৃত্বাধীন কৃষকদের আন্দোলন মুম্বইয়ে এসে পৌঁছয় আজ সকালে। আজাদ ময়দানে ৩০-৩৫ হাজার মানুষ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। বিরোধীরা রাজ্যের বিজেপি সরকারকে চেপে ধরলেও দেবেন্দ্র ফড়নবীশের সরকার পিছু হঠতে রাজি নয়। চাষিদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয় সরকার। পরে মুখ্যমন্ত্রীর লিখিত আশ্বাসের পর বিক্ষোভে বিরতি টেনেছে কৃষকরা।
দেবেন্দ্র ফড়নবীশ জানিয়েছিলেন, তাঁর সরকার কৃষকদের চাহিদা পূরণ করতে আগ্রহী। মোর্চার আন্দোলনের প্রথম দিন থেকেই আমরা যোগাযোগ ও আলোচনার চেষ্টা করেছি। গিরীশ মহাজন আলোচনার চেষ্টা করেছিলেন। তবে কৃষকরা মোর্চা বের করতেই বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন, বলেন দেবেন্দ্র।
শিবসেনা নেতা আদিত্য ঠাকরে জানান, কৃষকদের দাবি শোনা উচিত। যারা আমাদের মুখে খাবার তুলে দেয় তাদের দুরবস্থায় শিব সৈনিকরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আহতদের জখম সারিয়ে দিচ্ছে। কোন দল, কোন রাজনীতির মানুষ এরা তা জানা প্রয়োজন নেই। সরকারকে কৃষকদের কথা শুনতে হবে।
এসবের মাঝে মুম্বইয়ের বিখ্যাত ডাব্বাওয়ালারা আজাদ ময়দানে কৃষকদের খাবার পরিবেশন করেছেন। সোমবার সকালে বিক্ষোভরত কৃষকদের কাছে খাবার পৌঁছে দেন ডাব্বাওয়ালারা। দাদর ও কোলাবার মধ্যে খাবার ও জল সংগ্রহ করে তা বিক্ষুব্ধদের হাতে তুলে দেন।
জানা গিয়েছে, সারা দেশের কৃষক সভা ও অ্যাসোসিয়েশনগুলি মহারাষ্ট্রের পর দিল্লিতে এপ্রিল মাসে মেগা বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিতে চলেছে বলে জানা গিয়েছে। এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে কেন্দ্রের কৃষক বিরোধী নীতিকেই। অসম, গুজরাত, তামিলনাড়ু থেকে কৃষকদের বিক্ষোভ এবার দিল্লিতে গিয়ে পুঞ্জীভূত হবে।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশ বলেছেন, মুম্বইয়ে আন্দোলন করা কৃষকদের ৮০ শতাংশই উপজাতি মানুষ। তারা ঋণ মকুব নয়, জমির অধিকার চায়। এদের প্রতি সরকার সহানুভূতিশীল। গোটা ঘটনার রিপোর্ট দিতে ছয় সদস্যের কমিটিও তৈরি করা হয়েছে। কৃষকদের একটি দলের সঙ্গে সরকারের আলোচনাও শুরু হয়েছে। সেই বৈঠকের নেতৃত্বে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশ।
কৃষকদের আন্দোলন ও বিক্ষোভে কংগ্রেস তাদের পাশে রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি রাহুল গান্ধী। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের ও মহারাষ্ট্রের দেবেন্দ্র ফড়নবীশের সরকারের উচিত ইগোকে দূরে সরিয়ে কৃষকদের দাবি মেনে নেওয়া, মত রাহুলের।
বিক্ষোভরত কৃষকদের বড় অংশের দাবি ঋণ মকুব। মহারাষ্ট্রে ঋণ মুকবের জন্য ৮৯ লক্ষ কৃষক রয়েছেন। তাদের মধ্যে লোন ওয়েভার স্কিমের সুবিধা পেয়েছেন মাত্র ৩৫.৬৮ লক্ষ কৃষক। তার জন্য সরকারের খরচ হয়েছে ১৩ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। বাকী কৃষকদের বড় অংশ এখনও এই সুযোগের বাইরে রয়েছেন। এই অবস্থায় বিক্ষোভে বিরতি দিলেও পরে আরও বড় আন্দোলন সংগঠিত হতে পারে।