কৃষকদের ভারত বন্ধের জের, তীব্র যানজট গুরুগ্রাম–দিল্লি সীমান্তে, স্তব্ধ হাইওয়ে, নাজেহাল নিত্য যাত্রী
কৃষকদের ভারত বন্ধ
কেন্দ্রের তিন বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবি নিয়ে সপ্তাহের শুরুতেই কৃষকদের ডাকা ভারত বন্ধের জেরে নিত্যযাত্রীদের নাজেহাল হতে হচ্ছে। সোমবার সকাল থেকেই গুরুগ্রাম–দিল্লি সীমান্তে জাতীয় রাজধানীতে প্রবেশকারী গাড়িগুলিকে দিল্লি পুলিশ তল্লাশি করার দরুণ এখানে একের পর এক গাড়ি দাঁড়িয়ে যাওয়ায় ব্যাপত যানজটের সৃষ্টি হয়। সাধারণ মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে যেন দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি হয়ে পড়েন।
বিশাল পুলিশ বাহিনী
দিল্লি-গুরুগ্রাম সীমান্তে বিশাল পুলিশ বাহিনী চোখে পড়ে এদিন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি দিল্লি ও গুরুগ্রাম পুলিশের পক্ষ থেকে সীমান্তে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছিল। এর কারণে শুধুমাত্র জয়পুর থেকে দু'টি লেন, যা দিল্লির দিকে যাচ্ছে, সেই দু'টোই সাধারণ যাত্রীর জন্য খোলা ছিল দিল্লি প্রবেশের ক্ষেত্রে। অন্যদিকে, ৪৮ নম্বর জাতীয় হাইওয়েতে যানের গতি ধীর হয়ে যায় এবং দিল্লিগামী যানবাহন একের পর এক দাঁড়িয়ে পড়ে।
ধীরগতিতে ট্রাফিক
গুরুগ্রাম ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের পক্ষ থেকে বলা হয় যে এক্সপ্রেসওয়ের যানবাহনের গতি ধীর গতিতে রয়েছে কারণ দিল্লি-গুরুগ্রাম সীমান্তে ও রাজোকরি ফ্লাইওভারে দিল্লি পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে। ট্রাফিক কন্ট্রোলের এক আধিকারিক বলেন, 'কৃষক সংগঠনের ডাকা বন্ধ নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।' গুরুগ্রাম পুলিশের এক মুখপাত্র বলেন, 'আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় গুরুগ্রামের যানজটের পরিস্থিতি কেমন রয়েছে সে বিষয়ে নিত্যযাত্রীদের আপডেট দিতে থাকব।' স্বাভাবিক যানজট কেটে যাচ্ছে কিন্তু গাড়ি তল্লাশির কারণে যানজট কিছুটা ধীরগতিতে রয়েছে বা যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সমস্ত সীমান্তে হাজারেরও বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ রুটে যান চলাচল ব্যাহত
কিছু গুরুত্বপূর্ণ রুটে যান চলাচল ব্যাহত হওয়ার পর দিল্লির সঙ্গে গাজিয়াবাদ এবং নয়ডা সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। গাজিয়াবাদ পুলিশ দিল্লির গাজিয়াবাদ এবং নিজামুদ্দিনের সংযোগকারী একটি জাতীয় হাইওয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। উত্তরপ্রদেশ গেটে, যেখানে গত বছরের নভেম্বর থেকেই ভারতীয় কিষাণ সংগঠন (বিকেইউ) প্রতিবাদে বসেছে, সেখানে পুলিশ গাড়ি তল্লাশি করার জন্য ব্যারিকেড বসিয়ে দিয়েছে। এসপি জ্ঞানেন্দ্র সিং জানিয়েছেন যে ভারত বন্ধের কারণে দিল্লি ও গাজিয়াবাদের মধ্যেকার এই রুট দিয়ে কেউ যাতায়াত করতে পারবেন না। তবে এসপি এও জানান যে গাজিপুর সীমান্তের ইউপি গেট ছাড়া দিল্লি ও গাজিয়াবাদের তিনটে সীমান্তের মধ্যে থাকা আনন্দ বিহার, দিলশাদ গার্ডেন-অপ্সরা সিনেমা ও তুলসি নিকেতন খোলা রয়েছে।
বন্ধ অনেক রাস্তা
এদিকে, নয়ডা ট্রাফিক পুলিশও দিল্লি যাওয়ার বা সফরের জন্য গাজিয়াবাদ সংলগ্ন গাজীপুরের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পথে যাত্রীদের সাবধান করেছে। প্রসঙ্গত, ৪০টিরও বেশি কৃষক সংগঠনকে নিয়ে গঠিত সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা ১০ মাস ধরে তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের জন্য কেন্দ্রকে ক্রমাগত চাপ দেওয়ার পর সোমবার তারা ভারত বন্ধের ডাক দিয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নয়ডা ও চিল্লা হয়ে দিল্লি ও ডিএনডি ফ্লাইওয়ে খোলা রয়েছে।
তীব্র যানজট বিভিন্ন রুটে
কিন্তু অফিস যাওয়ার সময় এই রুটের যানজট তীব্রভাবে বেড়ে গিয়েছিল। এই চাপের কারণেই যানজটের গতি একটু ধীর হয়ে যায় বলে জানান এক ট্রাফিক পুলিশ। অন্যদিকে, যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে সহ এক্সপ্রেসওয়েগুলি, গ্রেটার নয়ডা থেকে উত্তরপ্রদেশের অভ্যন্তরীণ জেলায় যেমন মথুরা, আগ্রা, আলিগড়, লখনউ সহ অন্যান্য রুটগুলি সকাল সকাল কোনও বাধা ছাড়াই খোলা ছিল। দিল্লি পুলিশ তার সীমান্তগুলিতে নিরাপত্তার খাতিরে তল্লাশি বাড়িয়েছে যার কারণে যানজট ধীর হয়ে যায়।
টুইটে আপডেট পুলিশের
দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে গাজিপুর সীমান্তের দু'দিকেই গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখেছিল, এছাড়াও পুলিশ যানজট ও রাস্তা বন্ধের বিষয়ে সাধারণ যাত্রীদের টুইটারে আপডেটও দিচ্ছিল। টুইটারে ট্রাফিক পুলিশ জানিয়েছে যে ২৪ ও ৯ নম্বর ন্যাশনাল হাইওয়ে অবরোধের কারণে সরাই কালে খান থেকে আসা যাত্রীরা গাজিয়াবাদ যাওয়ার জন্য বিকাশ মার্গ ও নয়ডা যাওয়ার জন্য ডিএনডি বিকল্প রুট ব্যবহার করতে পারেন। কৃষকদের ধর্নায় বসার কারণে গাজিপুর সীমান্তের দু'দিকের যানজট স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ এবং দিল্লির মধ্যে এবং যেতে ইচ্ছুক যাত্রীরা ডিএনডি ফ্লাইওয়ে ব্যবহার করতে পারেন। ন্যাশনাল হাইওয়ে ২৪ এবং ৯-এর যানগুলিকে মহারাজপুর, অপ্সরা এবং ভোপুরা সীমান্তের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে টুইটে জানানো হয়েছে।
১২ ঘণ্টার বন্ধ থেকে ছাড় জরুরি পরিষেবা
ভারত বন্ধের জেরে দিল্লিতে সব দোকানপাট খোলা রয়েছে এবং অটো-ট্যাক্সির পরিচালনাও স্বাভাবিক, কারণ তাদের সংগঠন ও সমিতিগুলি এই ধর্মঘটকে শুধুমাত্র 'নীতিগত সমর্থন' করেছে। সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার পক্ষ থেকে জানানো হয় যে সোমবার সকাল ৬টা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলবে। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয় ন্যাশনাল হাইওয়ের কিছু অংশে তারা যান চলাচল ব্যাহত করবে। ১২ ঘণ্টার এই বন্ধে সরকারি ও বেসরকারি অফিস, শিক্ষা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, ইন্ডাস্ট্রি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, জন সমাগম সবকিছু দেশজুড়ে বন্ধ রাখা হবে বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তবে এই বন্ধ থেকে ছাড় রয়েছে জরুরি পরিষেবা ও প্রতিষ্ঠান, যার মধ্যে রয়েছে হাসপাতাল ও ওষুধের দোকান, উদ্ধার কাজের সঙ্গে যুক্ত এবং যে ব্যক্তিরা ব্যক্তিগত জরুরি কাজে যাচ্ছেন তাঁরা।