চলে গেলেন সাহিত্যিক আফসার আহমেদ, থেকে গেল সেই নিখোঁজ মানুষগুলো
কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বিখ্যাত বাঙালী সাহিত্যিক আফসার আহমেদ। কিছুদিন ধরেই তিনি লিভার রোগে ভুগছিলেন।
চলে গেলেন বাংলা ভাষার প্রখ্যাত সাহিত্যিক আফসার আহমেদ। বেশ কিছুদিন ধরেই লিভারের সমস্যায় ভুগছিলেন। শনিবার বিকেল পাঁচটায় এসএসকেএম হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর। থেকে গেল সেই নিখোঁজ মানুষটা বা ধান জ্যোৎস্নার মতো তাঁর সৃষ্টি। তাঁর প্রয়াণে বাংলা সাহিত্যের জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
১৯৫৯ সালে হাওড়ার বাগনানে জন্ম হয়েছিল এই কথা সাহিত্যিকের ছোটর থেকেই লেখালেখিতে আগ্রহ ছিল। পড়াশোনা শেষ করে পূর্ণ সময়ের লেখকই হতে চেয়েছিলেন তিনি। মোট ২৭ টি উপন্যাস আছে তাঁর। এরমধ্য়ে ২০১৭ সালে 'নিখোঁজ সেই মানুষটা' উপন্যাসের জন্য সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরষ্কারও পান। পেয়েছেন কথা পুরষ্কার, শরৎ সাহিত্য পুরষ্কারের মতো আরও নানান সম্মান।
উপন্য়াসের বাইরেও ছোটগল্প ও প্রবন্ধ মিলিয়ে আরও ১৪টি মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন আফসার আহমেদ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য খণ্ডবিখণ্ড, স্বপ্নসম্ভাস, দ্বিতীয় বিবি, মেটিয়াবুরুজের কিসসা, রমণীর কিস্সাহত্যার প্রমোদ জানি অত্যাদি। ছোটদের জন্যও লেখালেখি করেছেন। তাঁর উপন্যাস থেকে ফিল্মও হয়েছে। 'ধান জ্যোৎস্না' অবলম্বনে মৃণাল সেন বানিয়েছিলেন 'আমার ভুবন'। বাস্তববাদী এই লেখকের লেখার ভিত গাঁথা ছিল বাংলার মাটিতে। চরিত্ররা ছিল সব গ্রাম-শহরের প্রান্তিক মানুষ। কলমের আঁচরে এঁকেছেন বিচিত্র সব মানবিক সম্পর্ক। কিসসা কথনরীতিকে তিনিই উপন্যাসে তুলে এনেছিলেন। সংখ্যালঘু জীবন তাঁর হাতে মূর্ত হত।
আর্থিক সঙ্কটে পড়ে পুরো সময়ের লেখক হওয়া হয়নি তাঁর। কাজ নিয়েছিলেন বাংলা অ্যাকাডেমিতে। সেখানেও ১৩ বছরে অনেক ভাল ভাল বই সম্পাদনা করেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তাঁর কর্মকাণ্ডে বারবার থাবা বসিয়েছে তাঁর শরীর। লিভারের সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন লেখক। প্রথমে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসায় সাড়া দিলেও দিন কয়েক আগে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভর্তি করা হয় এসএসকেএম-এ। সেখানেই নিজের জীবনের উপন্যাস শেষ করলেন এই কথা সাহিত্যিক।