করোনা সঙ্কটে অপুষ্টির জেরে দীর্ঘ স্বাস্থ্যহানির শিকার হতে পারে শিশুরা, সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা
করোনা সঙ্কট আর লকডাউনের জেরে প্রায় আড়াই মাসের উপর বন্ধ দেশের সমস্ত সরকারি স্কুল-কলেজ। ফলত মিড-ডে মিল থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে অপুষ্টিতে ভুগছে দেশের প্রায় সাড়ে ৯ কোটি শিশু। সূত্রের খবর, ভারত সরকারের মিড-ডে মিল স্কিমের আওতায় শিশুদের ভাত, শাকসবজি, দুধ ও ফল সম্বলিত যে সম্পূর্ণ আহার পাওয়ার কথা, ২৪শে মার্চ থেকে দেশব্যাপী লকডাউনের জেরে তা কার্যত অমিল। একাধিক সময় খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার কথা হলেও বাস্তবে তার কোনও ফল মেলেনি। এবার এই করোনা সঙ্কটে অপুষ্টির জেরে দীর্ঘ স্বাস্থ্যহানির শিকার হতে পারে শিশুরা, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

করোনা সেবায় অঙ্গনওয়ারী কর্মীরা
একের পর এক অঙ্গনওয়ারী কেন্দ্র বন্ধ থাকায় শিশুদের অযত্ন হচ্ছে। অঙ্গনওয়ারী ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মীদের করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত করার ফলে অপুষ্টি দূর করার কয়েক দশকের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার মুখে। বিশেষজ্ঞদের মতে, লকডাউনে শিশুরা ক্রমাগত অপুষ্টিতে ভুগলে তার জেরে আগামীতে তাদের অপূরণীয় শারীরিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে। ভারতীয় জন স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান কে শ্রীনাথ রেড্ডি জানান, মাতৃজনিত অপুষ্টি ও শৈশবে সঠিক আহার না জোটার ফলে ২০১৭ সালে ভারতে প্রায় ১০ কোটি ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যু হয়। বর্তমানে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের প্রত্যন্ত গ্রাম গুলিতে শিশুদের অবস্থা মারাত্মক।

'চাইল্ড গ্রোথ ফেলিওর'-র সম্মুখীন বিশ্ব
'চাইল্ড গ্রোথ ফেলিওর' নির্ধারণ করা হয় মূলত তিনটি মাপকাঠির উপর নির্ভর করে। বয়সের অনুপাতে কম উচ্চতা, বয়সের অনুপাতে কম ওজন এবং উচ্চতার অনুপাতে কম ওজনের নিরিখেই ঠিক হয় চাইল্ড গ্রোথ ফেলিওর। শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে এই তিন মাপকাঠি অনুসারেই ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চল গুলির শিশুরা অপুষ্টির শিকার। ২০২০-এর মে মাসে ইউনিসেফ কর্তৃক প্রকাশিত একটি তথ্যে জানান হয়, মহামারীর জেরে প্রত্যহ বিশ্বে প্রায় ৬০০০ পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশু অপুষ্টির জেরে মারা যেতে পারে। ভারতে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর ৬৮ শতাংশই হয় অপুষ্টির কারণে। গবেষকদের মতে, করোনার অন্যান্য ক্ষতি সামলাতে গিয়ে শিশুদের অপুষ্টির বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে গেছে, ফলত অপুষ্টি কমিয়ে আনার এতদিনের প্রচেষ্টা বিশ বাঁও জলে। ইউনিসেফের মতে, অপুষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেহের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা, ফলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে।

অঙ্গনওয়ারী ও আশা কর্মীরা মাঠে না নামলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে
ভারতের কেন্দ্রীয় শিশু কল্যাণ দপ্তর কর্তৃক আইসিডিএস প্রোগ্রাম গুলির আওতায় পড়ে অঙ্গনওয়ারী ও আশা কর্মীদের কাজ। মূলত ৬ বছরের কমবয়সী শিশুদের সুষম খাদ্য, গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টিকর খাদ্য, কিশোরী মেয়েদের পুষ্টির মত বিষয় সুনিশ্চিত করে এই সকল সরকারি কেন্দ্র গুলি। বিশ্বব্যাঙ্কের ২০২০ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, অঙ্গনওয়ারী কর্মীরাই অপুষ্টি রুখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। এদিকে এইসকল কর্মীদের অভিবাসী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নজরদারি সহ অন্যান্য করোনা সম্পর্কিত কর্মকান্ডে যুক্ত করে দেওয়ায় শিশুদের পুষ্টির বিষয়টি অধরাই থেকে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। অক্সিলারি নার্স মিডওয়াইফ(এএনএম)-এর নার্স রচনা মিশ্র জানান, "বহু পরিবার শুধু নুন আর চাপাটি খেয়ে বেঁচে আছে। এদিকে ক্রমবর্ধমান কাজের চাপের মাঝে, অপুষ্টি রুখতে দ্বারে দ্বারে ঘুরে সচেতন করার মত সময়ও নেই।"

প্রশ্ন একটাই, 'খাব কি?'
বেসরকারি সংস্থার একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, উত্তরপ্রদেশের অধিকাংশ গরিব পরিবারের একমাত্র রোজগেরে মূলত হরিয়ানা, দিল্লি, গুজরাট, মহারাষ্ট্রে কর্মরত ছিল। কিন্তু বর্তমানে কাজ হারিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকরা ঘরে ফিরতেই তাদের পরিবারের চোখে মুখে একটাই প্রশ্ন, "খাব কি?" মহামারীর আবহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সদ্যোজাত ও শিশুদের টাটকা ফল, সবজি ও দুধ খাওয়ার কথা বললেও, দিন-আনি-দিন-খাই সংসারে তা কিভাবে সম্ভব হবে, তা ভেবেই কূলকিনারা পাচ্ছেন না শ্রমিকরা। সরকারের পক্ষে রেশনে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়া হলেও, অধিকাংশ এলাকায় লম্বা লাইন, নিম্নমানের খাদ্যশস্য ও রেশন ডিলারদের দুর্নীতির মত একাধিক অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি এখনও সিংহভাগ পরিযায়ী শ্রমিকের ঘরেই পৌঁছানি সরকারি রেশনের সুবিধা।
সন্তান জন্মের পরেই অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ, কাঠগড়ায় আসানসোলের হাসপাতাল