বড় বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচল জেট-এর বিমান! মাঝআকাশে ঘটতে পারত ভয়ঙ্কর ঘটনা
বডসড় দুর্ঘটনার সাক্ষী হতে পারত ভারত। এমনটাই মত বিমান বিশেষজ্ঞদের। কারণ কেবিন প্রেসার যে কোনও উড়ানের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এতে কোনও ধরণের ত্রুটি হলে বড় ধরনের বিপদ ঘটে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হয়।
বডসড় দুর্ঘটনার সাক্ষী হতে পারত ভারত। এমনটাই মত বিমান বিশেষজ্ঞদের। কারণ কেবিন প্রেসার যে কোনও উড়ানের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এতে কোনও ধরণের ত্রুটি হলে বড় ধরনের বিপদ ঘটে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হয়। এমনকী বিমান ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
বৃহস্পতিবার সকালে মুম্বই থেকে জয়পুরগামী জেট এয়ারওয়েজের বোয়িং ৭৩৭ তথা ফ্লাই নম্বর ৯ডবলু ৬৯৭-এ আগে থেকে কেন কেবিন প্রেসার সুইচ অন করার বিষয়টি দেখা হল না? তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। বিমান টেক-অফ করার আগে কেবিন প্রেসার সুইচের বিষয়টি দেখে নিতে হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে বিষয়টি যে সম্পূর্ণভাবেই গাফিলতির জন্য হয়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। সবচেয়ে বড় কথা কেবিন ক্রু সুইচ অন করার কথা ভুলে গেলেও দুই পাইলট ক্রস-চেকিং-এর বিষয়টি ভুলে গেলেন কী করে? কারণ, টেক অফ-এর মুহূর্তে লাস্ট-মিনিট চেক বলে একটি গাইড-লাইন থাকে। পাইলটদের তা চেক করে নিতে হয়।
টেক অফ-এর চূড়ান্ত কলের আগে পাইলটরা বিষয়টি লক্ষ করলে এই বড় বিপদের ফাঁড়ার মধ্যে পড়তে হত না। কেবিন প্রেসার মূলত আকাশে অক্সিজেনের ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে। কারণ, বিমান অন্তত তিরিশ হাজার ফিট উপর দিয়ে যায়। টেক অফ-এর পর দ্রুত বিমানকে একটা বিশাল উচ্চতায় চলে যেতে হয়। এত উপর দিয়ে বিমান গেলেও যাত্রীরা সহজে অক্সিজেনের অভাব টের পান না। এর মূলে কেবিন প্রেসার প্রসেস। সুতরাং, কেবিনের মধ্যে অক্সিজেনের অভাব তৈরি হয় তাহলে 'হাইপোক্সিয়া'। এর প্রভাবে বিমান সওয়ারীরা শ্বাসকষ্ঠ থেকে শুরু করে বমি, মাথা-ঘোরার মতো সমস্যার সম্মুখিন হন। অক্সিজেনের অভাবে অনেকে হৃদরোগেও আক্রান্ত হতে পারেন। মাঝআকাশে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাটাই কমে যায়।
এয়ারপোর্ট ট্রাফিক কন্ট্রোল-এর প্রাক্তন আধিকারিক মিলন দত্ত এক টেলিভিশন চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেন, বৃহস্পতিবার মাঝ-আকাশে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে পারত। ভাগ্য ভালো যে এমনটা হয়নি। গোটা ঘটনাটাই যে একটা চূড়ান্ত গাফিলতি তা তিনি তীব্র ভাষায় জানিয়েছেন। এই ঘটনায় জেট এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ সামান্য দুঃখ প্রকাশ করেই দায় ঝেড়ে ফেলতে পারে না বলেও মনে করছেন তিনি। এই ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত এবং কড়া পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। চূড়ান্ত অপেশাদারী মানসিকতায় মাঝ আকাশে যে কোনও যাত্রীর মৃত্যু হতে পারত বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন .তিনি। বিমান চালনার সমস্ত নিয়ন্ত্রণ পাইলটেটর কাছে থাকে। দুই পাইলট কেন কেবিন প্রেসার নিয়ন্ত্রণের সুইচ যে অন নেই তা দেখতে পেলেন না?
বিশেষজ্ঞ মিলন দত্তের মতে, অক্সেজেনের অভাবে পাইলটদেরও কিছু হতে পারত। সেক্ষেত্রে বিমান ভেঙে পড়ারও আশঙ্কা ছিল। এই বিপদকে কোনওভাবেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলেই মনে করছেন মিলন দত্তের মতো অনেকেই।
বর্তমান দিনে অধিকাংশ বিমান-ই ৩৫,০০০ থেকে ৩৯,৫০০ ফিট উচ্চতার মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করে। এই উচ্চতায় বিমানের বাইরে বায়ুর চাপ প্রায় শূন্যের কাছাকাছি চলে যায়। ফলে, এই উচ্চতায় বিমানের বাইরে অক্সিজেন মাস্ক ছাড়া শ্বাস নেওয়া কার্যত অসম্ভব।
[আরও পড়ুন:বিমান আকাশে উঠতেই রক্তাক্ত ৩০ যাত্রী, মুম্বই-এ জরুরি অবতরণ জেট-এর বিমানের]
কেবিনের ভিতরে ৮,৫০০ ফিট উচ্চতার কথা মাথায় রেখে এয়ার প্রেসার ঠিক করা হয়। এই এয়ার প্রেসার ভূস্পৃষ্টের এয়ার প্রেসার থেকে অন্তত ২৫ শতাংশ কম। ফলে, শ্বাসকষ্ঠের গুরুতর সমস্য়া থাকাদের অনেক সময় উড়ানে অক্সিজেন মাস্কের আশ্রয় নিতে হয়। অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকায় কেবিনে হাইপোক্সিয়া তৈরির সমূহ সম্ভাবনা থাকে। তাই কেবিন প্রেসারের গণ্ডগোলে হাইপোক্সিয়া পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এর ফলে হার্টবিট মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়। রক্তে কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়।
[আরও পড়ুন: অক্সিজেনের অভাবে মাঝ-আকাশে আতঙ্কিত যাত্রীরা, তারপর কী হল, দেখুন ভিডিও]
বিমানের ভিতরে অক্সিজেনের মাত্রা যেহেতু এক সুক্ষ লাইন বরাবর রাখা হয় তার জন্য বিমানের ভিতরে ধূমপান করতে দেওয়া হয় না। এতে উড়ানে কার্বন-ডাই অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যায় শুধু নয় রক্তেও সিও২-এর প্রভাবে বেড়ে যায়। সেই কারণে পাইলটদের নির্দেশ দেওয়াই থাকে কেবিনের মধ্যে হাইপোক্সিয়া পরিস্থিতি তৈরি হলে বিমানকে ১০,০০০ ফিটের নিচে নিয়ে আসতে হবে। জেট এয়ারওয়েজের ঘটনা যে ছোটখাটো বিষয় নয়, তা বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ যেভাবে এটাকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করছে তাতে ক্ষিপ্ত যাত্রীরা।