Exclusive: হাভার্ড থেকে স্টান্ডফোর্ড, ১৪টি প্রথম সারির কলেজে একসঙ্গে ডাক পেলেন পুজা চন্দ্রশেখর
পুজা চন্দ্রশেখর। এক আইটি কর্মীর মেয়ে পুজা। বেঙ্গালুরু ছেড়ে বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা। কিন্তু সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদপত্রে শোরগোল ফেলে দিয়েছেন পুজা। মার্কিন রাজ্যের ১৪টি প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একইসঙ্গে ভর্তির ডাক পেয়েছেন পুজা। এই ১৪ টির মধ্যে ৮টিই আইভি লিগ স্কুল, যা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন।
ভার্জিনিয়ায় জন্ম পুজার। আইভি স্কুলের মধ্যে যেকোনও একটিতে সুযোগ পাওয়ার আশায় ৮টিতেই আবেদন পাঠান পুজা। এই ৮ আইভি লিগ স্কুলের মধ্যে ১ টি নয়, ২টি নয়, বরং ৮টির সবকটি কলেজেই সুযোগ পেয়েছেন পুজা।
ভর্তির জন্য পুজার হাতে যে বিকল্পগুলি রয়েছে তা হল, ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, ডার্টমাউথ কলেজ, হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভেনিয়া, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়, ইয়ালে বিশ্ববিদ্যালয়, স্টান্ডফোর্ড, এমআইটি, ডিউক, ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জিনিয়া, ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান এবং জর্জিয়া টেক।
সেই পুজারই এক্লুসিভ সাক্ষাৎকার ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলির পাঠকদের জন্য
১. এই সাফল্যের পিছনে সবচেয়ে বড় প্রেরণা কী ?
পুজা: আমি যা করি, তা করার পিছনে সবচেয়ে বড় প্রেরণা হল আমি পার্থক্য গড়ার কাজ করছি। আমি বিশ্বাস করি যে প্রকল্পগুলি নিয়ে আমি কাজ করছি তা সত্যিই পরিবর্তন আনতে পারে।
পারকিনসন রোগ নিয়ে আমি গবেষণা করছি। মস্তিষ্কের হাল্কা আঘাত নিয়ে আমি অনেককিছু খুঁজে পেয়েছি। আমি আমার গবেষণার বিষয় হিসাবে এটা বেছে নিয়েছি কারণ আমার মতে এর একটা সামাজিক প্রভাব রয়েছে।
২. হাতে এত প্রথম সারির বিকল্প, আমাদের বল তুমি কোন বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাধান্য দিচ্ছ বা যোগ দিতে চাইছ...
পুজা : আমি এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নই। আমার হাতে ১ মে পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় রয়েছে। আপাত আমি হাভার্ড এবং স্ট্যান্ডফোর্ডের মধ্যে ভাবনাচিন্তা করছি। তাই দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই যাব। ওখানকার ক্যাম্পাস কেমন, বর্তমান ছাত্রছাত্রীরা কেমন, এবং ক্যাম্পাসের ভিতরে বা বাইরে সুযোগ কতটা রয়েছে সেটা বোঝার জন্যই একবার যাব।
আমি গবেষণা করতে চাই, কলেজের সংবাদপত্র বা পত্রিকার জন্য লিখতে চাই, কম্পিউটার বিজ্ঞানে মহিলাদের তুলে ধরা, বিদেশে পড়াশোনার মতো বিষয়ে আমার কাজ চালিয়ে যেতে চাই।
৩. পড়াশোনার জন্য কত সময় বরাদ্দ রাখ? পড়াশোনা ছাড়াই বা কী করতে সবচেয়ে ভাল লাগে?
পুজা: নির্ভর করে, ওই নির্দিষ্ট দিনের জন্য আমার কী কী কাজ আছে তার উপর। কিন্তু সাধারণত আমি সন্ধ্যায় ৩ ঘন্টা সময় দিই হোমওয়ার্ক, পড়াশোনা এবং স্কুল সংক্রান্ত অন্যান্য কাজের জন্য।
নিময়মিত পাঠক্রম বহির্ভূত আমার সবচেয়ে বড় কাজ আমার 'প্রজেক্ট সিএসগার্লস'। এছাড়া আমি লিখতে ভালবাসি, টেনিস খেলতে পছন্দ করি আর অবশ্যই গান আমার প্রিয়। আমি বলিউড সিনেমাও ভালবাসি। আমি মনে করি কাজ ও মজা করা বা বিশ্রামের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে চলাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
৪. প্রজেক্সসিএসগার্লস-এর মতো বড় প্রকল্পে কাজ করার প্রেরণা কী থেকে পাও?
পুজা : নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেউ আমি এই প্রজেক্সসিএসগার্লস শুরু করি। আমার এপি কম্পিউটার বিজ্ঞান ক্লাসের প্রথমদিনই আমি দেখি আমাকে নিয়ে মাত্র ৩ জন ছাত্রী বাকি সব ছাত্র। আমাদের স্কুল যেখানে বিজ্ঞান এবং তথ্যপ্রযুক্তিই মূল লক্ষ্য সেখানে এই ঘটনা সত্য়িই একটু ভাবায়।
এর থেকেই আমি অনুপ্রেরণা পাই যে একটি প্রতিষ্ঠান আমাকে গড়ে তুলতে হবে যা মাঝবয়সী স্কুল ছাত্রীদের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের জন্য প্রেরণা দেবে।
৫. এই প্রজেক্সসিএসগার্লস তোমার যে পরিকল্পনা রয়েছে, তা আদৌ কী বাস্তবিক?
পুজা: এই বছর আমরা জাতীয় স্তরে ৫০০ ছাত্রীদের কাছে পৌঁছতে পেরেছি। প্রায় ২০০ জন ছাত্রী আমাদের কম্পিউটার বিজ্ঞান ওয়ার্কশপে যোগ দিয়েছে। শুরু করেছিলাম একা আমাকে দিয়ে, এথন তা ৫০ জন হাইস্কুল এবং কলেজের ছাত্রছাত্রীরা ছড়িয়ে রয়েছে দেশের সর্বত্র। যারা প্রজেক্সসিএসগার্লস-এ অ্যাম্বাসাডর হিসাবে নিজের নিজের এলাকায় ওয়ার্কশপ করায়।
৬. এই ছোট বয়সে এত বড় একটা প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে গিয়ে কোন কোন সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে তোমাকে?
পূজা: কিছু কিছু সময়ে আমার স্কুলের হোমওয়ার্ক, পাঠক্রম বহির্ভূত কাজ এবং গবেষণার কাজ করাটা মুশকিল হয়ে যায়। তখন নিজেই নিজেকে বলতে থাকি, যদি তোমার মধ্যে আগুন থাকে, নিজের চালনাশক্তি থাকে, এবং কিছু করার প্রেরণা থাকে তাহলে তুমি সব করতে পারবে।
আসল বিষয়টা হল, যে কাজটা করতে তুমি সবচেয়ে ভালবাস তার জন্য নিজেকে একেবারে সমর্পন করে দাও। আমার মনে হয় এটাই একমাত্র উপায়।
৭. পারকিনসন রোগীদের জন্য তুমি একটা অ্যাপ তৈরি করেছ, সেটার বিষয়ে যদি কিছু বল
পুজা: মানুষের কঠা বলার সময় তাঁর স্বরের কম্পন শুনে পারকিনসন রোগ শনাক্ত করবে। তার জন্য ১০-১৫ সেকেন্ড্ অ্যাপটিতে কথা বলতে হবে। রোগ শনাক্ত করার ক্ষেত্রে এই অ্যাপটি ৯৬ শতাংশ নিখুঁত দেখা গিয়েছে।
৮. আমরা কোথা থেকে এই অ্য়াপ ডাউনলোড করতে পারি?
পুজা: এখনও অ্যাপটি সাধারণ মানুষের জন্য উপলব্ধ নয়। তবে আমরা আশা করছি আগামী বছরের মধ্যে আমরা এটা সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য আনতে পারব।
৯. এরপর কলেজে ঢোকার পর এই অ্যাপ তৈরির কাজ করার সময় পাবে?
পুজা: নিশ্চই। কলেজে ঢোকার পরও আমার কাছে অ্যাপ তৈরি তা অন্যান্য কাজ করার অনেক সময় থাকবে বটেই।
১০. জীবনে কখনও কাজ করতে গিয়ে বিরক্তিকর পরিস্থিতি বা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন? কীভাবে তার মোকাবিলা করেছেন?
পুজা : ২ বছর আগে যখন প্রজেক্সসিএসগার্লস শুরু করি তখন এটা আমার কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল। একজন স্কুল ছাত্রী যার কোনও অভিজ্ঞতা নেই সে একটি অলাভ সংস্থা তৈরি করছে যাকে কাজে সাহায্য করার জন্য কেউ নেইয়। সবকিছুই আমাকে একা হাতে করতে হচ্ছে। ওয়েবসাইট পরিকল্পনা থেকে ১০০ জন স্কুল শিক্ষককে ইমেল করা, স্পন্সরদের কাছে যাওয়া সবই আমাকেই সামলাতে হয়েছে।
১১. তোমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
পুজা: কলেজ শেষ করার পর আমি মেডিক্যাল স্কুলে যেতে চাই। বিশেষত ওষুধ ও প্রযুক্তির মধ্যে মেলবন্ধন ঘটাতে চাই। এবং উদ্ভাবনী স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রযুক্তি চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছা আছে।
হয়তো আমি এমডি/এমবিএ করতে পারি। আশা করি কলেজ, মেডিক্যাল স্কুলের সময়ও আমি ইংরাজিতে সৃজনশীল লেখা লিখে যেতে চাই।