দেশের অর্থনীতির উন্নতির সঙ্গে বেকারত্বের হার চিন্তার কারণ হতে পারে, সতর্ক করল কেন্দ্র
দেশের অর্থনীতির উন্নতির সঙ্গে বেকারত্বের হার চিন্তার কারণ হতে পারে, সতর্ক করল কেন্দ্র
ছত্তিশগড়ের রায়পুরে আরবিআই-এর প্রাক্তন গভর্নর একটি অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের অর্থনীতি দেখে ভারতীয়দের আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। কারণ ভারতে অর্থনীতি স্থিতিশীল। বিজেপি রঘুরাম রাজনের এই মন্তব্যকে হাতিয়ার করে মোদী সরকারের প্রশংসা করে প্রচার করে। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর সতর্ক করে বলেন, দেশের বেকারত্বের হার দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
দেশের বেকারত্ব বৃদ্ধি
একটি সাক্ষাৎকারে রঘুরাম রাজন বলেন, দেশের বেকারত্ব ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি মন্তব্য করেন, একটি অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি হচ্ছে চাকরি প্রদান করা। প্রত্যেকের কোনও সফট ওয়্যার প্রোগামার ও পরামর্শদাতা হওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। যেটা প্রয়োজন, তা হল একটা যোগ্যতার মাপকাঠিতে সঠিক চাকরি। এর আগে রঘুরাম রাজন সতর্ক করে বলেছিলেন, চিনের নীতি অন্ধভাবে মেনে চললে ফলাফল ভয়ানক হতে পারে। দেশের তরুণ সমাজকে শিক্ষা দেওয়ার মতো উপযুক্ত ব্যবস্থা বা পরিকাঠামো দেওয়া প্রয়োজন। না হলে, তাঁদের মেডিসিনের মতো কোর্সগুলোর জন্য বিদেশে যেতে হবে। সঠিক পরিষেবা না পেলে ভারতের মেধাবী ছাত্ররা বিদেশের কাছে বিক্রি হয়ে যেতে পারে। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ভারতের অর্থনীতি ভালো পরিস্থিতিতে রয়েছে। তবে ভারতে যে বিপুল জনসংখ্যা, তার জন্য আরও আর্থিক বৃদ্ধির প্রয়োজন। তিনি বলেন, ভারতের বেকারত্বের হার কমানো বা কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কোনও শর্টকার্ট পথ নেই। প্রথমে ভারতীয় যুবকদের দক্ষতা তৈরি করতে হবে। সেই দক্ষতার ভিত্তিতে চাকরি দিতে হবে।
সংখ্যালঘুদের অবহেলা অর্থিক উন্নতির পথে বাধা
রঘুরাম রাজন শ্রীলঙ্কার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, দ্বীপরাষ্ট্রটির বর্তমান পরিস্থিতির কারণ লুকিয়ে রয়েছে ইতিহাসে। মধ্যবিত্তরা খুব ভালোভাবে জীবনধারণ করতে পারতেন। একসময় শ্রীলঙ্কায় সংখ্যালঘুদের বেকারত্বের হার এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যায়। শ্রীলঙ্কায় সংখ্যালঘু হলেন তামিলরা। শ্রীলঙ্কার রাজনীতিবিদরা এই বিষয়টি অবহেলা করেন। যার জেরে শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দ্বীপরাষ্ট্রটির আর্থিক সঙ্কটের নেপথ্যে এই গৃহযুদ্ধ বড় ভূমিকা পালন করে। তিনি মনে করছেন, এই ক্ষেত্রে ভারতের সাবধান হওয়া উচিত। অনেকক্ষেত্রেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনায় উস্কানি দেওয়া হচ্ছে, যা কখনই কাম্য নয়। সংখ্যালঘুদের ওপর অবহেলার সঙ্গে অর্থনীতির সম্পর্ক বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, এই ধরনের ব্যবহার বিদেশি বিনয়োগকারীদের ওপর প্রভাব ফেলে। তাঁরা অনেক সময় মনে করেন, যেখানে এভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করা হয়, সেখানে বিনিয়োগ করব কেন। চিনের উইঘুর সম্প্রদায়ের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তিনি বলেন, বেজিং উইঘুর সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার করে। সেই কারণে জিনজিয়াং প্রদেশ যেখানে উইঘুর সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা বাস করেন, সেখানকার অনেক পণ্য ইউরোপের বাজারে নিষিদ্ধ।
বিজেপি সরকারের সমালোচক নই
মোদী সরকারের সমালোচক হিসেবে পরিচিত রঘুরাম রাজন। বিজেপি অনেক ক্ষেত্রে তাঁকে কেন্দ্র সরকারের সমালোচক হিসেবে উল্লেখ করে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি কোনও সরকারের সমালোচক নন। রাজন জানিয়েছেন, 'প্রতিটি সরকার ভুল করে। আমি যখন ইউপিএ সরকারের অধীনে কাজ করিনি, তখন সেই সরকারের সমালোচনা করেছি। আবার আমি আগের এনডিএ সরকারের অধীনেও কাজ করেছি।'