যৌন হেনস্থার আখড়া যাদবপুর, জেএনইউ, কেমব্রিজ, ফেসবুকে বিস্ফোরক অভিযোগ বাঙালি ছাত্রীর
মি টু ক্যাম্পেনে এবার বিস্ফোরক অভিযোগ আনলেন রায়া সরকার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তন ছাত্রী ৫৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন।
ফেসবুকে কার্যত বোমা ফাটালেন বাঙালি ছাত্রী রায়া সরকার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সত্যজিৎ রায় ফিল্ম ইনস্টিটিউট, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, জেএনইউ, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, কেমব্রিজ, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া-সহ মোট ৫৮টি তাবড় তাবড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন তিনি। সম্প্রতি 'মি টু' ক্যাম্পেনের হাত ধরে এই নিজের ফেসবুক পেজে ৫৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্তত ৬৯ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন রায়া। তাঁর এই বিস্ফোরক পোস্ট ইতিমধ্যেই বিশ্বজুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। বিশ্বের তাবড় তাবড় মিডিয়ায় উঠে এসেছে রায়ার আনা অভিযোগের প্রতিবেদন।
সম্প্রতি হলিউডের খ্যাতনামা প্রযোজক হার্ভে ওয়েনস্টাইনের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার একাধিক অভিযোগ আনেন একদল অভিনেত্রী। তারপর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে 'মি টু' ক্যাম্পেন। যেখানে মহিলারা তাঁদের সঙ্গে হওয়া যৌন হেনস্থা নিয়ে মুখ খুলছেন। এই নিয়ে সম্প্রতি বলিউড গায়িকা সোনা মহাপাত্র-র একটি পোস্টও ভাইরাল হয়। রায়া তাঁর ফেসবুক পেজে জানিয়েছেন 'মি টু' ক্য়াম্পেনের ফলে এখন বহু মহিলা যৌন হেনস্থা নিয়ে মুখ খুলেছেন। তাঁর কাছে নাকি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ছাত্রী ফোন করে যৌন হেনস্থা নিয়ে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন। তবে, বিভিন্ন কারণে এরা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না।
প্রায় মাসখানেকেরও বেশি সময় ধরে তাঁর ফেসবুক পেজে যৌন হেনস্থা নিয়ে একের পর এক বিস্ফোরক পোস্ট করে চলেছেন রায়া। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন এই ছাত্রী এই মুহূর্তে আমেরিকাবাসী। তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার ইউসি ডেভিস ল' স্কুলের ছাত্রী। কারাগারে বন্দিদের অধিকার নিয়ে তিনি কাজ করেন।
২৪ অক্টোবর তাঁর ফেসবুক পেজে যৌন হেনস্থা নিয়ে সবচেয়ে মারাত্মক অভিযোগ আনেন রায়া। প্রকাশ করে দেন ৬৯ জন অভিযুক্ত শিক্ষকের তালিকা।
রায়ার দেওয়া অভিযুক্তদের তালিকায় দেখা যাচ্ছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন শিক্ষক, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ জন, পুনের এফটিআইআই এবং কলকাতা এসআরএফটিআই থেকে ৩ জন করে শিক্ষক এবং সেন্টার ফর স্টাডিজ অফ সোশ্যাল সায়ান্সেস থেকে ১ জন শিক্ষক আছেন। যৌন হেনস্থায় আরও ৩১ জন অভিযুক্তকে চিহ্নিত করেছেন রায়া। এরা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ কলকাতা, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া সান্তাক্রজ, অম্বেদকর ইউনিভার্সিটি, দিল্লি, ইএফএলইউ-হায়দরাবাদ, ক্রিস্ট ইউনিভার্সিটি-র মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত।
রায়া সরকারের অবশ্য দাবি, এই ৫৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বহু ছাত্রী বিভিন্ন সময়ে তাঁর কাছে যৌন হেনস্থা নিয়ে অভিযোগ করেছেন। তাঁদের কাছে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তিনি এই তালিকা তৈরি করেছেন। এরা যেহেতু সামনে আসতে ভয় পাচ্ছেন তাই রায়াই উদ্যোগী হয়ে এই তালিকা সামনে নিয়ে এসেছেন বলে দাবি করেছেন।
রায়া এই উদ্যোগকে অবশ্য তীব্র ভাষায় বিরোধিতা করেছে ভারতে নারীবাদী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত, কবিতা কৃষ্ণনন থেকে শুরু করে আয়েষা কিদওয়াই, নিবেদিতা মেননরা। কাফিলা নামে একটি ওয়েবসাইটের করা 'নেম অ্যান্ড শেম' নামের ক্যাম্পেনে কবিতারা জানিয়েছেন, কোনও ধরনের অকাট্য প্রমাণ ছাড়াই বিভিন্ন জনের নামে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনা হয়েছে তা নিন্দনীয়। কোনও কিছু ধারনা বশতঃ কারোর নামেই অভিযোগ আনাটা উচিত কাজ নয়। যে তালিকা দেওয়া হয়েছে তাতে কয়েক জনের বিরুদ্ধে এর আগে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে ঠিকই। কিন্তু, বাকিরা? মনে হচ্ছে উত্তর দেওয়ার দায় নেই দেখেই কারোর নামে এমন সব অভিযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এটা নারীবাদী আন্দোলন এবং নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে আঘাত করতে পারে।'
রায়াও তাঁর বিরুদ্ধেবাদী কবিতা কৃষ্ণনন, আয়েষা কিদওয়াই-দের ছেড়ে কথা বলেননি। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের দ্বারা এরা কোনও না কোনওভাবে উপকার পান। তাই তাঁদের আড়াল করার চেষ্টা চলছে। রায়ার দাবি, তিনি চান এই তথ্য নিয়ে তদন্তে নামুক কেন্দ্রীয় সরকার। ইতিমধ্যেই এক ছাত্রী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনে এফআইআর দায়ের করতে চলেছেন বলেও দাবি করেছেন রায়া।