প্রাক্তন কংগ্রেসিরাই উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলিতে বিজেপির মুখ, সন্তর্পণে ২০২৪-র ছক সাজাচ্ছে বিজেপি
প্রাক্তন কংগ্রেসিরাই উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলিতে বিজেপির মুখ, সন্তর্পণে ২০২৪-র ছক সাজাচ্ছে বিজেপি
কংগ্রেস যাঁদের উপরে আস্থা দেখাতে পারেনি, তাঁরাই উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলিতে বিজেপির মুখ। অসম থেকে ত্রিপুরা সর্বত্র মুখ্যমন্ত্রী পদে যাঁরা বসে আছেন, তাঁরা একটা সময়ে কংগ্রেসে ছিলেন। এবং কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁরাই এখন সেই সব রাজ্যে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী। ত্রিপুরার নতুন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহাও একটা সময়ে কংগ্রেসেই ছিলেন।
ত্রিপুরার নতুন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা
হঠাৎ করে সকলকে চমকে দিয়েই গতকাল মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিেয়ছিলেন বিপ্লব দেব। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নতুন মুখ্যমন্ত্রী পেল ত্রিপুরা। রবিবার ত্রিপুরার নতুন মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন মানিক সাহা। গতকাল বিকেলে দিল্লির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মানিক সাহার নাম ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে কেন বিপ্লব দেবকে সরিয়ে মানিক সাহাকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসাল বিজেপি এই নিয়ে জল্পনার শেষ নেই। তাও আবার ভোটের কয়েক মাস আগে । যদিও এটা নতুন নয় এর আগে উত্তরাখণ্ড, কর্নাটর এবং গুজরাতেও ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী বদল করেছে বিজেপি।
কেন এই বদল
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলিতে একটু অন্য সমীকরণে এগোচ্ছে বিজেপি। ত্রিপুরায় যাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছে সেই মানিক সাহা কিন্তু বিেজপির আদি সদস্য নন। তিনি কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন ২০১৬ সালে। ভোটের ঠিক আগে। তারপর থেকে দলের হয়েই কাজ করছিলেন তিনি। কিন্তু ত্রিপুরায় বিপ্লব দেবকে মুখ্যমন্ত্রী মুখ করেই লড়েছিল বিজেপি। বাম দুর্গে ফাটল ধরাতে নতুন মুখের প্রয়োজন ছিল। সেই নতুন মুখেই আস্থা রেখে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু ভোট এগিয়ে আসতেই আর বিপ্লব দেবের উপরে আস্থা রাখতে পারলেন না অমিত শাহরা। কারণ একটাই বিপ্লব দেবের জনপ্রিয়তা অনেকটাই কমেছে। তাঁকে সামনে রেখে এবারে লড়াইয়ে সামিল হলে আর জেতা যাবে না। সেই সমীকরণ তৈরি করেই এই নতুন মুখ নিয়ে আসা।
নেতৃত্বে প্রাক্তন কংগ্রেসীরাই
খুব নজর করলে দেখা যাবে বিজেপি শাসিত উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলিতে এই মুহূর্তে যাঁরা মুখ্যমন্ত্রী পদে রয়েছেন তাঁরা সকলেই কিন্তু প্রাক্তন কংগ্রেসী। কংগ্রেস ছেড়ে কোনও না কোনও সময়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এঁরা কিন্তু আদি বিজেপি নন। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাও একটা সময়ে কংগ্রেসে ছিলেন। ২০১৫ সালে অসম নির্বাচনের আগে আগেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে হিমন্তের প্রচারের জেরেই বিজেপি জয় িছনিয়ে এনেছিল। অসমের প্রথম বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের মন্ত্রীসভার গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন তিনি। তার পরে ২০২১-র বিধানসভা নির্বাচনে সোনোয়ালের জায়গায় হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়।
মণিপুরেও একই সমীকরণ
মণিপুরের ক্ষেত্রেও বিজেপি সেই সমীকরণেই এগিয়েছে। একসময়ে কংগ্রেসে থাকা এন বীরেন সিংকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসিয়েছেন। ২০১৬ সালে তিনিও কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তারপর থেকে মণিপুরকে শক্তহাতে বিজেপির দখলে রেখেছেন বীরেন সিং। মণিপুরে বিজেপি সরকারের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী তিনি। নাগাল্যান্ডেও একই ভাবে এগিয়েছে বিজেপি। সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী নেইপিও রিপুও প্রাক্তন কংগ্রেসী। তিনি কংগ্রেস ছেড়েছিলেন ২০০২ সালে। তারপরে নাগা পিপলস ফ্রন্ট বিজেপির সঙ্গে হাত মেলায়। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে রিও যোগ দেন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টিতে। তিনি আসার পরেই আবার বিজেপির সঙ্গে জোট বাধে দল। এবং নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেন তিনি।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ মানিক সাহার, অনুষ্ঠানে শেষে হাজির বিজেপির বিদ্রোহীরা