শীর্ষ আদালতের কুর্সি ছাড়ার পর নিজের গাঁয়ে জমি চষছেন সদাশিবম
পলানিস্বামী সদাশিবম ১৯৪৯ সালের ২৭ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন তামিলনাড়ুর ইরোড জেলার কডপ্পনলুর গ্রামে। বাবা ছিলেন একজন দরিদ্র কৃষক। ছোটো থেকেই বাবাকে চাষের কাজে সহায়তা করেছেন। জমি নিড়ানি, বলদ দিয়ে জমি চাষ, বীজ ছড়ানো, ধান কাটা সবই করেছেন নিজের হাতে। ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত নিজের গ্রামেই থাকতেন। ওই বছর মাদ্রাজ হাই কোর্টে আইনজীবী হিসাবে প্র্যাকটিস শুরু করেন। কাজের খাতিরে গ্রাম থেকে চলে আসতে হয়েছিল। বাড়িভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন তৎকালীন মাদ্রাজ শহরে। এর পর শুধুই উত্থান। মাদ্রাজ হাই কোর্ট, পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির দায়িত্ব সামলেছেন। ২০১৩ সালের ১৯ জুলাই থেকে চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন।
২৭ এপ্রিল সকাল থেকেই তিনি অন্য মানুষ! সাধারণত সুপ্রিম কোর্ট থেকে অবসরের পর বিচারপতিরা দিল্লিতেই থেকে যান। কিন্তু সদাশিবম ঠিক করে ফেলেন, গ্রামে ফিরতে হবে। জীবনের শেষ সময়টা কাটাবেন মাটির কাছাকাছি। এর পরই শুরু হয় তৎপরতা। নয়াদিল্লির কৃষ্ণ মেনন মার্গের প্রধান বিচারপতির বাংলো ছেড়ে সরাসরি চলে আসেন ইরোড জেলায় নিজের শস্যশ্যামল গ্রামে। এক মাসে আগে যে মানুষটি শীর্ষ আদালতের কুর্সিতে ছিলেন, সব সময় ঘিরে রাখত নিরাপত্তারক্ষী, মুখ থেকে কথা খসালেই হাজির হয়ে যেত এটা-সেটা, সেই তিনি-ই এখন পরিবর্তিত জীবনের সঙ্গে বেশ খাপ খাইয়ে নিয়েছেন।
সদাশিবম জানিয়েছেন, শীর্ষ আদালত থেকে অবসর নেওয়ার পর আইনি জগৎ থেকে বিচ্ছিন্নই থাকবেন। সরকার কোনও পদে তাঁকে নিয়োগ করতে চাইলে বিস্তর ভেবে দেখবেন। বরং ছোটো ছেলেকে চাষবাসের কাজে সাহায্য করবেন। লুঙ্গি পরে কাদা মাঠে নেমে ধানের চারা লাগিয়ে শৈশবের আনন্দ ফিরে পাচ্ছেন, জানিয়েছেন হাসি মুখে।
চাষবাস ছাড়াও আরও একটি ইচ্ছা রয়েছে তাঁর। সেটা হল, ইরোড জেলার বার অ্যাসোসিয়েশনকে একটি ভালো গ্রন্থাগার গড়ে তুলতে সহায়তা করা। তিনি জানান, এখানে ভালো বইয়ের অভাব রয়েছে। তরুণ আইনজীবীরা তাই সমস্যায় পড়ছেন। নিজের সংগ্রহে থাকা আইনের বই ও পত্রপত্রিকা এখানে দান করবেন। তা ছাড়া অর্থ দিয়ে সাহায্যও করতে চান। এমন একজনকে কাছে পেয়ে এখন গর্বিত ইরোড জেলার মানুষ।