রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে মামলা হলেও এবার করা যাবে জামিনের আবেদন, রায় সুপ্রিমকোর্টের
রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা নিয়ে বড় ঘোষণা সুপ্রিমকোর্টের। ১১ মে বুধবার সুপ্রিম কোর্ট ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪এ ধারার অধীনে রাষ্ট্রদ্রোহ সংক্রান্ত মামলা নেওয়া আপাতত স্থগিত রাখল৷ কেন্দ্র সরকার এই রাষ্ট্রদ্রোহের আইনটিকে নিয়ে আলোচনা করে নতুন কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত এই আইনে আর কোনও মামলা গ্রহণ করবে না সুপ্রিম কোর্ট৷ বুধবার এরকমটাই জানিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট! এই মর্মে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে! একই সঙ্গে সুপ্রিমকোর্ট জানিয়েছে৷ দেশে ১২৪এ ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহের যে মামলাগুলি বর্তমানে রয়েছে সেগুলির ক্ষেত্রে জামিনের আবেদন করতে পারবেন অভিযুক্তরা!

কী বলছে সুপ্রিম কোর্ট?
সিজেআই এনভি রমনার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিমকোর্টের বেঞ্চ বলেছে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগের আবেদন আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। এই আইনের পুনঃপরীক্ষা সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এটি ব্যবহার করা হবে না। বিচারাধীন রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার বিষয়ে সুপ্রিমকোর্ট জানিয়েছে, যারা ইতিমধ্যেই আইপিসি ধারা ১২৪এ এর অধীনে মামলায় অভিযুক্ত হয়ে জেলে রয়েছে তারা উপযুক্ত ত্রাণ এবং জামিনের জন্য আদালতে আবেদন করতে পারবে! মঙ্গলবার দেশের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টে বলেছিলেন, কেন্দ্র আইনটির পুনর্বিবেচনার জন্য একটি খসড়া তৈরি করেছে। খসড়ায় বলা হয়েছে যে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে একটি এফআইআর নথিভুক্ত করা হবে তখনই যদি এসপি পদমর্যাদার একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন যে এর পেছনে একটি বৈধ কারণ রয়েছে। মঙ্গলবার তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টে বলেছিলেন যে কেন্দ্র রাষ্ট্রদ্রোহ আইন পুনর্বিবেচনার প্রক্রিয়ায় মধ্যেই রয়েছে।

আরও যা বললেন তুষার মেহতা!
মেহতা আরও যুক্তি দিয়েছিলেন যেখানে একটি রাষ্ট্রবিরোধী গুরুত্তর অপরাধের প্রমাণ বা অভিযোগ থাকবে সেখানে আদালতের আদেশে তদন্ত স্থগিত করা উপযুক্ত নয়। তিনি আরও চেয়েছিলেন যে বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের অধীনে একজন দায়িত্বশীল সিনিয়র অফিসার দ্বারা এই ধরণের মামলাগুলি যাচাই করা হোক। রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের মামলা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, এটি একটি গুরুতর অপরাধ। আমরা প্রতিটি অপরাধের পেছনে থাকা কারণ জানার চেষ্টা করি! সে সন্ত্রাস, মানি লন্ডারিং বা অন্য যে কোনোও অপরাধ হতে পারে। তবে এই প্রতিটি বিষয়েই মামলাগুলি বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের কাছে বিচারাধীন, পুলিশের কাছে নয়।

আইন প্রচলনের সময় দেশে ঔপনিবেশিক শাসন ছিল!
অন্যদিকে আবেদনকারীর পক্ষের উকিল কপিল সিবালের প্রতিক্রিয়ায় তুষার মেহতা বলেছিলেন যদি আদালত একটি পিআইএল-এ তৃতীয় পক্ষের নির্দেশে একটি বিবেচনাযোগ্য অপরাধের উপর অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ প্রদান করা তবে তা খারাপ নজির স্থাপন করবে! সিজিআই রমনা বলেছেন ' এ বিষয়ে আদালতের প্রাথমিক মতামত হল, যখন ১২৪এ ধারা জারি করা হয়েছিল তখন ভারত ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ছিল। কেন্দ্র সরকার জানিয়েছে যে তারা এই আইনটি পুনর্বিবেচনা করছে। এবং কেন্দ্র আইনের বিভিন্ন বিষয় সংশোধনের মাধ্যমে ভারতের নাগরিকদের নাগরিক অধিকার রক্ষা করার চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছে।'

১২৪এ নিয়ে জুলাইয়ে হবে সুপ্রিমকোর্টের পরের শুনানি!
সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, ১২৪এ ধারার আইনের অপব্যবহার রুখতে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারগুলির উচিৎ আপাতত এই ধারার অধীনে কোনও এফআইআর দায়ের না করা এবং কোনও কার্যক্রম পরিচালনা করা থেকে বিরত থাকা। আইনটির পুনরায় পরীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগের আবেদন স্থগিত রেখে জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে এই বিষয়ে শুনানির জন্য বেছে নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট!
'রাষ্ট্রদ্রোহ' আইন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে বড় ধাক্কা কেন্দ্রের, কী নির্দেশ দিল শীর্ষ আদালত