বদমাশ লোকেরাও ভালো কবিতা লেখে, গান গাইতে পারে, সুনীল-সুমনকে কটাক্ষ তসলিমার
বদমাশ লোকেরাও ভালো কবিতা লেখে, গান গাইতে পারে, সুনীল-সুমনকে কটাক্ষ তসলিমার
সম্প্রতি ফোনকলে বাংলা টিভি চ্যানেলের সাংবাদিককে কদর্য ভাষায় আক্রমণ করে সমালোচিত হচ্ছেন সঙ্গীত শিল্পী কবীর সুমন। এবার সেই ইস্যুতে মুখ খুললেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। তবে তিনি শুধু কবীর সুমন নয় সঙ্গে প্রয়াত বাংলা কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়েরও সমালোচনা করেছেন৷ সোমবার একটি ফেসবুক পোস্টে তসলিমা লেখেন, 'আপাদমস্তক বদমাশ লোকেরাও ভালো কবিতা লিখতে পারে, নাটক লিখতে পারে, অভিনয় করতে পারে, গান গাইতে পারে, ছবি আঁকতে পারেন!'
কী লিখেছেন তসলিমা?
সোমবার একটি বড় ফেসবুক পোস্টে তসলিমা লিখেছেন, 'বাংলায় গুরুশিষ্যের পরম্পরা। গুরু যতই অন্যায়-অনাচার করুক, শিষ্যরা মুখ বুজে মেনে নেয়। তারা মৃত্যুকে বরণ করে নেবে, কিন্তু গুরুর দোষ ধরিয়ে দেবে না। গুরু কোনও দোষ করতে পারে না, গুরুর সব ভালো, গুরুই ভগবান। এভাবেই শিষ্যদের মগজধোলাই হয়। এ কারণেই পীর আর বাবার ছড়াছড়ি বাংলায়। এরপরই তসলিমা যোগ করেছেন, 'আপাদমস্তক বদমাশ লোকেরাও ভালো কবিতা লিখতে পারে, নাটক লিখতে পারে, অভিনয় করতে পারে, গান গাইতে পারে, ছবি আঁকতে পারে। মুশকিল হলো, সুমনগুরু খিস্তি করলেও শিষ্যদের কানে তা মধুর শোনায়, যেহেতু এককালে তিনি ভালো গান করতেন। সুনীলগুরুর যৌনহেনস্থা নিয়ে কোনও ভিকটিম মুখ খুললে শিষ্যরা তাকে পগারপার করে ছাড়ে। শিষ্যরা ঠকে সর্বস্বান্ত হয়ে যায়, তারপরও টনক নড়ে না।'
তবে এখানেই থামেননি তসলিমা!
এরপর সরাসরি কবি সাহিত্যিকদের তোপ দেগে তসলিমা লিখেছেন, 'শুধু ধর্মগুরু নয়, এ অঞ্চলে কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীগুরুও আছে। ধনী আর বিখ্যাত লোকদেরও গুরু মানা হয়। তাদেরও একই রকম পুজো করা হয়, ভগবানকে যেমন করা হয়। তাদেরও সাত খুন মাফ করে দেওয়া হয়। সারা পৃথিবীতে মিটু আন্দোলনের জালে অনেকে ধরা পড়লেও, এই বাংলায় গুরু সম্প্রদায়ের ধর্ষক আর যৌনহেনস্থাকারিরা বহাল তবিয়তে বাস করতে পারে।'
পোস্টে সমরেশ, হুমায়ুন-কেও তোপ তসলিমার!
সোমবারের ফেসবুক পোস্টে কবীর সুমনের সমালোচনা করতে গিয়ে শুধু কবীর সুমনেই থেমে থাকেননি তসলিমা।পোস্টের এক জায়গায় তসলিমা লিখেছেন, সমরেশগুরুর মিথ্যেচার আর প্রতারণাকে শিষ্যরা দেখেও দেখে না। সৈয়দগুরুর পারভারসানের কথা প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বই নিষিদ্ধ হয়ে যায়। হুমায়ূনগুরুর অনৈতিকতার কথা কেউ উচ্চারণ করলে তাকে জ্যান্ত কবর দিয়ে দেয় শিষ্যরা। এই চলছে। নারীগুরুও আছেন। তবে তা রাষ্ট্রের বা রাজ্যের সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাদের সম্পর্কে কোনও কটূসত্যকথা কোনও শিষ্যই বরদাস্ত করে না। এখনও শিল্প সাহিত্যের জগতে নারীদের গুরু বলে মানার চল শুরু হয়নি। যতদিন পুরুষতন্ত্রের জয়জয়কার, ততদিন শুরু হবেও না।
পোস্টে জেন-ওয়াইকে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপদেশেও দিয়েছেন তসলিমা!
ফেসবুক পোস্টে তসলিমা লিখেছেন, কোনও লেখক বা গায়কের লেখা বা গান যদি ভালো লাগে, তাহলে বলুন তাদের লেখা বা গান ভালো লাগে। আর তাদের যৌন হয়রানি, বদমাইশি, স্বার্থপরতা, অসভ্যতা,কূপমণ্ডুকতা, ক্ষুদ্রতা, নৃশংসতা ভালো না লাগলে তা বলুন। একটি মানুষের ভালো এবং মন্দ দুই দিকই থাকতে পারে। মানুষকে গুরু নয়, মানুষ হিসেবে দেখুন।